মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

স্বেচ্ছায় যাচ্ছে রোহিঙ্গারা

ভাসানচরের পথে প্রথম দল :

কক্সবাজার ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০৫ এএম

নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে গেল ৩০০ শত রোহিঙ্গাদের একটি দল। গতকাল দুপুরে উখিয়া থেকে বাসে করে রওনা দিয়েছেন তারা। চট্টগ্রামে রাত যাপন করবে রোহিঙ্গারা। আজ সাগরপথে ভাসানচরের উদ্দেশে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হবে। সেজন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে নৌবাহিনীর ১৪টি জাহাজ। এসময় নিশ্চিত করা হয়েছে তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা।

জানা গেছে, উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ এলাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলোতে অন্তত ৩০০ জন রোহিঙ্গা রয়েছে। এরা ছাড়াও মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকেও বেশ কিছু রোহিঙ্গা ভাসানচর এলাকায় যেতে ট্রানজিট পয়েন্টের পথে রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশিষ্ট সূত্র। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কেউ কথা না বললেও র‌্যাব-১৫ কমান্ডার আজিম আহমেদ জানান, গতকাল সকাল থেকেই তারা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানান, গতকাল সকাল ১১টা থেকে বিকেল ২টা পর্যন্ত এসব গাড়িগুলো রোহিঙ্গা ভর্তি করে রওয়ানা দিতে দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে প্রতিটি বাসে ৩০ থেকে ৪০ জনের মতো রোহিঙ্গা রয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কতো পরিবার রোহিঙ্গা ভাসানচর যাচ্ছে তার কোন সঠিক তথ্য-পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। তবে পর্যায়ক্রমে লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংসতা থেকে প্রাণে বাঁচতে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসার পর পেরিয়ে গেছে ৩৯ মাস। এর মাঝে দুই দফা প্রত্যাবাসনের দিনক্ষণ চ‚ড়ান্ত হলেও রোহিঙ্গাদের রাখাইনে পাঠানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এমন এক পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের শিবিরের ওপর চাপ কমানোর অংশ হিসেবে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলকে ভাসানচরে পাঠানো হলো। এতোদিন রোহিঙ্গারা যেতে না চাওয়ায় সমস্যা ছিল। এবার স্বেচ্ছায় যারা যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে তাদের পাঠানোর মাধ্যমেই এ স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যেতে উখিয়া কলেজ মাঠে অস্থায়ী ট্রানজিট পয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে। মাঠে একাধিক কাপড়ের প্যান্ডেল ও বুথ তৈরি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে বেশ কিছু রোহিঙ্গা ট্রানজিট পয়েন্টে চলে আসে। গতকাল ভোর থেকে আসা শুরু করে অন্যরাও। আগে থেকে প্রয়োজনীয় পরিবহন ব্যবস্থা ও খাদ্যসামগ্রী মজুত করা হয়।

সূত্র মতে, ইতোপূর্বে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর কার্যক্রম ঘিরে ভাসানচর দ্বীপ ঘুরে আসে ২২টি এনজিওর প্রতিনিধি দল। ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের জন্য সেখানে মজুত করা হয়েছে প্রায় ৭০ টন খাদ্যসামগ্রী। বিভিন্ন ক্যাম্পের মাঝিরা জানান, অনেক রোহিঙ্গা পরিবার স্বেচ্ছায় ভাসানচর যেতে উদ্যোগী হচ্ছে। তাদের অনেকে গত বুধবার সন্ধ্যায় ট্রানজিট পয়েন্টে চলে যায়। বাকিরা গতকাল সকালে গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আন্তর্জাতিক একটি এনজিওর কর্মকর্তা বলেন, বার বার অভিযোগ উঠেছে এনজিওদের প্ররোচনায় রোহিঙ্গারা ভাসানচর যাচ্ছে না। তাই এবারের যাত্রায় কোন এনজিও রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। আমরা সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে নয়।

এদিকে, কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে সেখান থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে নৌবাহিনীর ১৪টি জাহাজ। প্রথম দুই মাস তাদের রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হবে। এরপর নিজ নিজ বাসস্থানেই তারা রান্না করতে পারবেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। রোহিঙ্গাদের ভাসানচর নেয়ার আগে ২২টি এনজিওর প্রতিনিধিরা ভাসানচর পরিদর্শন করে সরকারের পরিকল্পিত আয়োজনে সন্তোষ প্রকাশ করেন। রোহিঙ্গাদের ভাসানচর নেয়ার বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তারা।

সম্প্রতি দ্বীপটি ঘুরে দেখে গেছে পালস বাংলাদেশ সোসাইটি, কুয়েত সোসাইটি ফর রিলিফ, ফ্রেন্ডশিপ, এসএডবিøউবি, শারজাহ চ্যারিটি ইন্টারন্যাশনাল : বাংলাদেশ, গেøাবাল উন্নয়ন সংস্থা, আল মানাহিল ওয়েলফেয়ার, সনি ইন্টারন্যাশনাল, আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন, হেলথ দ্য নিডি চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, জনসভা কেন্দ্র, কারিতাস বাংলাদেশ, সমাজকল্যাণ উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস), সোশ্যাল এইড, সিডিডি, মুক্তি- কক্সবাজার, ভলান্টারি অরগানাইজেশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট, আর টি এম ইন্টারন্যাশনাল, মাল্টি সার্ভ ইন্টারন্যাশনাল, আল্লামা ফয়জুল্লাহ ফাউন্ডেশন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন ফর অল এসব এনজিও সেখানে কাজও শুরু করেছে।

অপরদিকে, দীর্ঘ দিন ধরে প্রচার চলছিল ১ লাখ রোহিঙ্গা ভাসানচর যাচ্ছে। অবশেষে তাদের যাত্রা শুরু হওয়ায় উখিয়া-টেকনাফের সাধারণ মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করছেন। সূত্র জানায়, উখিয়া ও টেকনাফের পাহাড়ে ঠাসাঠাসির বসবাস ছেড়ে ভাসানচরে যেতে তিন হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা রাজি হয়েছে। তবে চার থেকে পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত।

নোয়াখালীর হাতিয়ায় সাগরের মাঝে ভেসে থাকা ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য সব ধরনের সুযোগ সুবিধা সংবলিত ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ঝড় জলোচ্ছ¡াস থেকে সুরক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থাও রয়েছে। বসবাসের যে ব্যবস্থা করা হয়েছে তা দেখতে গত সেপ্টেম্বরে দুই নারীসহ ৪০ রোহিঙ্গা নেতাকে সেখানে নিয়ে যায় সরকার। তারা ভাসানচরের আবাসন ব্যবস্থা দেখে মুগ্ধ হয়। তারা ক্যাম্পে ফিরে অন্যদের ভাসানচরে যেতে উদ্বুদ্ধ করে। দু’বছর আগে সরকার ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু তাদের অনিচ্ছার কারণে তা সম্ভব হচ্ছিল না।

ভাসানচরে যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের অনেকে জানান, তারা ভাসানচর পরিদর্শন শেষে ফিরে আসা রোহিঙ্গা নেতাদের মুখে সেখানকার বর্ণনা শুনে যেতে রাজি হয়েছেন। তাদের মতে পাহাড়ের ঘিঞ্জি বস্তিতে বসবাসের চেয়ে ভাসানচর অনেক নিরাপদ হবে। এছাড়া ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য নির্মিত অবকাঠামো অনেক বেশি আধুনিক সুযোগ সুবিধা সংবলিত মনে হয়েছে রোহিঙ্গাদের।
কোনো বলপ্রয়োগ ছাড়াই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে যাওয়ার ইতিবাচক মনোভাব দেখে তাদের সেখানে পাঠানোর বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয় সরকার। রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটিকে নিরাপদে ভাসানচরে পাঠাতে পারলে আরও অনেক পরিবার সেখানে যেতে আগ্রহী হবে বলে সরকার আশাবাদী।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
আজিজুর রহমান ৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ১:২৫ এএম says : 0
পাহাড়ের ঘিঞ্জি বস্তিতে বসবাসের চেয়ে ভাসানচর অনেক নিরাপদ হবে।
Total Reply(0)
নজরুল ইসলাম ৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ১:২৬ এএম says : 0
তবে ওখানে তাদেরকে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে দেখাশোনা করতে হবে।
Total Reply(0)
তানিয়া ৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ১:২৬ এএম says : 0
রোহিঙ্গাদের ফেরানোর ব্যাপারে সরকারের আরো অনেক বেশি আন্তরিক হওয়া দরকার
Total Reply(0)
মোঃ আশরাফুল হক ৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:০৩ এএম says : 0
আগামীতে বাংলাদেশের মানুষ ফিলিস্তিনিদের মতো ভিটা মাটি হাড়া হবে , ভাষাণ চরে পর পরই আরও সাগরে চর ভেসে ওঠেছে সেটি খুব তাড়াতাড়ি করে দখেল করে নিবে তাই সময় থাকতেই সাবধান থাকুন, নয়তোবা ফিলিস্তিনিদের মতো হতে হবে
Total Reply(0)
Md Jamal ৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:১৪ এএম says : 0
নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
Total Reply(0)
Sheikh Farid ৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:১৫ এএম says : 1
সরকার তাদের কে পুশ ব্যাক না করে রাজকীয় আবাসনের ব্যবস্থা করলো। এটা সরকারে পররাষ্ট্র নীতি ও কূটনৈতিক পলিসির ব্যার্থতার বহি প্রকাশ।
Total Reply(0)
Fazlul Hoda ৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ৮:৩৪ এএম says : 0
ভাসান চরের চারদিকে কাঁটা তারের ওপর নেটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জরুরি ।
Total Reply(0)
Md Syed Alam ৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ৮:৩৪ এএম says : 0
good news
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন