কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পঞ্চম ধাপে আরও সাড়ে তিন হাজারের মতো রোহিঙ্গা নোয়াখালীর ভাসানচরে যাবে। আগামী মাস তথা মার্চের শুরুতে উখিয়া- টেকনাফ রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে থাকা এসব রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ভাসানচরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে জেগে ওঠা এই দ্বীপে যেতে রোহিঙ্গারা সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পের দায়িত্বরত সিআইসির কাছে তালিকাও জমা দিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সুত্র জানায়, পঞ্চম দফায় আরো সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে রাজি হয়েছে বলে। এজন্য তারা সংশ্লিষ্ট সিআইসি’র কাছে নাম জমা দিয়েছে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও নিপীড়নের মুখে ২০১৭ সালের আগস্টের শেষ দিকে দেশটি থেকে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির ও তার বাইরে অবস্থান নিয়ে থাকা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে নানা সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে দুই বছর আগে তাদের একটি অংশকে হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার।
সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে মোটামুটি ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করে এক লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
২০১৮ সালে যখন প্রথম তাদের স্থানান্তরের পরিকল্পনা করা হয়, তখন রোহিঙ্গারা সেখানে যাওয়ার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে আসছিল। এরপর রাজি হলে টেকনাফ ও উখিয়ায় থাকা রোহিঙ্গার মধ্যে ২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর ১ হাজার ৬৪২ রোহিঙ্গাকে প্রথম দফায় ভাসানচরে নেওয়া হয়। সেখানে যাওয়ার পর পরিবেশ দেখে বেশিরভাগ রোহিঙ্গা তাদের সন্তুষ্টির কথা জানায়। এরপর থেকে ভাসানচরে যেতে আগ্রহের কথা জানায় অনেক রোহিঙ্গা।
তাদের আগ্রহের পর দ্বিতীয় দফায় ওই বছরের ২৮ ডিসেম্বর এক হাজার ৮০৫ জন রোহিঙ্গা নোয়াখালীর ওই দ্বীপে গড়ে তোলা আশ্রয়ন প্রকল্পে পৌঁছায়। এছাড়া গত ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় দফায় তিন হাজার ২০০ জনের বেশি রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেওয়া হয়েছিল। আর ১৫ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ দফায় ভাসানচরে নেয়া হয় দুই হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে।
পঞ্চম ধাপে ভাসানচরে যাওয়ার জন্য আরো অনেক রোহিঙ্গা আগ্রহের কথা জানায়। স্বেচ্ছায় যেতে রাজি হওয়া আরো সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গাকে মার্চের শুরুতে ভাসানচরে নেয়া হতে পারে। এজন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছেন এসব রোহিঙ্গা।
জানতে চাইলে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, মার্চ মাসের শুরুতে রোহিঙ্গাদের একটি দল নিজেদের ইচ্ছায় ভাসানচরে যাওয়ার জন্য ক্যাম্প ইনর্চাজের কার্যালয়ে তালিকা দেয়া শুরু করেছে। পর্যায়ক্রমে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে।
কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা মুহাম্মদ নুর জানান, মার্চ মাসের শুরুতে সাড়ে ৩ হাজার রোহিঙ্গা ভাসানচরে যাওয়ার জন্য টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্প, কুতুপালং ইস্ট-ওয়েস্ট, বালুখালী, মধুরছড়া, লম্বাশিয়া ক্যাম্পর রোহিঙ্গারা সংশ্লিষ্ট ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ে নাম জমা দিয়েছে। শুধু কুতুপালং ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে যাওয়ার জন্য এ পর্যন্ত ১৬০ রোহিঙ্গা পরিবার তাদের নাম ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ে জমা দিয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন