গ্রামের নাম শান্তিপুর। দিনাজপুর পৌর এলাকার উত্তরপশ্চিমে পূর্ণভবা নদীর বাঁধ ঘেষা গ্রামটিতে ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। গ্রামের অধিকাংশ মানুষই শ্রমজীবী। খেটে খাওয়া পরিবারগুলোর মধ্যে শান্তি সৌহার্দের বন্ধনকে কেন্দ্র করেই গ্রামটির নাম শান্তিপুর রাখা হয়। কিন্তু গত এক বছর ধরে একটি পরিবারের কারণে শান্তিপুর গ্রামে শান্তি হারিয়ে গেছে। তাদের অভিযোগ দিনে দুপুরে অসামাজিক কার্যকলাপ এবং চুরি ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। দ্বিতল ভবনের মধ্যে সুরঙ্গ সিড়ি তৈরি করে ঘরের নিচে বানানো হয়েছে রঙ্গমহল। এই মহলে নিয়মিত চলছে অসামাজিক কর্মকান্ড। এলাকাবাসী বাধা দিলেই নেমে আসে খড়গ। স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া ছেলে-মেয়েদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে তারা। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়ে কাজ হয়নি। এক পর্যায়ে মানববন্ধন করে বেলীকে এলাকা থেকে উচ্ছেদের ডাক দেয়। জনতার রোষ থেকে রক্ষা পেতে উক্ত মহিলা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে। কিন্তু গ্রামবাসীদের ভয় আবার ফিরে এসে এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রতিবাদি গ্রামবাসীদের হয়রানী করবে।
দিনাজপুর পৌর এলাকার শেষ প্রান্তে অবস্থিত শান্তিপুর গ্রামটিতে নিম্ন আয়ের মানুষদের বসবাস। জমির দাম কম হওয়ায় খেটে খাওয়া মানুষেরা টিনসেড ও আধাপাকা বাড়ি করে জীবন যাপন করছে। গত দু-বছর আগে বেলী নামের এক মহিলা জায়গা ক্রয় করে দ্বিতল বাড়ি তৈরি করে। বাড়ির ড্রয়িং রুমের মধ্যে সুড়ঙ্গ তৈরি করে নিচে বানানো হয়েছে রঙ্গমহল। সুড়ঙ্গ পথকে আড়াল করতে ঘরের টাইলসের মতই একটি টাইলস ব্যবহার করা হতো। গ্রামবাসীদের দাবি দীর্ঘদিন ধরে বেলীকে অসামাজিক কার্যক্রম বন্ধের অনুরোধ করা হয়। তার কর্মকান্ডে বিরুদ্ধে কথা বললেই মামলায় জড়িয়ে হয়রানী করা হতো। গুন্ডা বাহিনী দিয়ে মারধোর করা হতো।
তার অপকর্মেরর বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসনকে অনেকবার অভিযোগ করা হয়েছে বলে গ্রামবাসীদের দাবি। কিছুদিন আগে এলাকার লোকজন অসামাজিক কাজ চলা অবস্থায় মেয়েসহ পুরুষকে আটক করে থানায় সোপর্দ করে। বেলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। উল্টো বেলী গুন্ডাবাহিনী দিয়ে এলাকার এক যুবকসহ আরো কয়েকজনকে মারধোর করে মামলা করে দিয়েছে। সবশেষ শান্তিপুরসহ আশপাশের গ্রামের হাজারো নারী-পুরুষ একত্রিত হয়ে মানববন্ধন করে। মানববন্ধন থেকে বেলীকে উচ্ছেদের ঘোষণা দিলে বেলী পালিয়ে যায়। এলাকাবাসীর দাবি বেলীর স্বামী একজন কুখ্যাত ডাকাত। বাড়ির পেছনে তৈরি করা একটি ঘরে চুরি ডাকাতি করা গরু এনে রাখারও অভিযোগ করেছে গ্রামবাসী।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি তাৎক্ষনিকভাবে সেখানে পুলিশ পাঠান। পুলিশ তালা ভেঙে তার সুরঙ্গমহলসহ পুরো ঘর চেক করে অসামাজিক কর্মকান্ডে ব্যবহৃত ঔষধ ও বিছানা ছাড়া আর কিছুই পাননি।
কোতয়ালী থানার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা অফিসার ইনচার্জ মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, এধরনের কার্যক্রমকে কোনমতেই মেনে নেয়া হবে না। তার বিরুদ্ধে এলাকার এক ব্যক্তির দেয়া মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
ছোট্ট জেলাশহর দিনাজপুরে সুড়ঙ্গমহল তৈরি করে প্রকাশ্যে অসামাজিক কার্যক্রম চললেও পুলিশ প্রশাসন তা জানে না, এটা সচেতন মহল মেনে নিতে পারছেন না। শান্তিপুর গ্রামের শান্তি ফিরিয়ে আনতে অসামাজিক কর্মকান্ড পরিচালনাকারী এবং এই মহলে যাতায়াতকারীদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনলেই এ ধরনের অপরাধ বন্ধ হতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন