মৌলভীবাজার জেলায় দীর্ঘদিন থেকে রাস্তায় খানাখন্দ থাকায় প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে যানবাহন। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সড়কের মধ্যে রয়েছে মৌলভীবাজার-শমসেরনগর-চাতলাপুর সড়ক, জুড়ী-ফুলতলা সড়ক ও কুলাউড়া-পৃথিমপাশা-রবিরবাজার সড়ক। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কগুলো দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার কাজ চললেও রহস্যজনক কারণে শেষ হচ্ছে না। এতে করে প্রতিদিন ভোগান্তি পোয়াতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
মৌলভীবাজার জেলায় রয়েছে সড়ক ও জনপথের জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলার সড়ক-মহাসড়ক মিলে ৩৮০ কিলোমিটার সড়ক। সংস্কার বিলম্বের কারণে প্রায় ১০০ কিলোমিটার সড়কের বেহাল অবস্থা রয়েছে। বেহাল ও অনুপযোগী সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহনসহ সাধারণ মানুষ।
মৌলভীবাজার সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জিয়া উদ্দিন জানান, প্রায় ১০০ কিলোমিটার সড়কের কাজ বর্তমানে চলছে। আরও ১৫০ সড়কের কাজ আগামী ১০/১৫দিনের মধ্যে শুরু হবে।
মৌলভীবাজার-শমসেররনগর-চাতলাপুর সীমান্ত সড়কের দৈর্ঘ্য ৩৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রথম দফায় ২০ কিলোমিটার সড়কের প্রাক্কলিত ব্যয় ৪২ কোটি ১০ লাখ টাকা মূল্যে কার্যাদেশ দেয়া হয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। দৃশ্যমান কোন কাজের অগ্রগতি ছাড়াই চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর কার্যাদেশের মেয়াদ শেষ হয়। পরে ঠিকাদারের আবেদনের প্রেক্ষিতে কার্যদেশের মেয়াদ ২০২১ সালের ৮ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। এছাড়াও জুড়ী-ফুলতলা সড়ক ও কুলাউড়া-পৃথিমপাশা-রবিরবাজার সড়কের কাজ দ্রæত শেষ হবে বলে জানান। তিনি আরও জানান, রাজনগর-কুলাউড়া-বড়লেখা-শেওলা ও শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ-শমসেরনগর-কুলাউড়া সড়কের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
মৌলভীবাজার-শমসেররনগর-চাতলাপুর সড়কে চলাচলকারী সিএনজি চালক আহাদ মিয়া জানান, প্রায় পাঁচ বছর ধরে সড়কটি খানাখন্দ সৃষ্টি হয়। মাঝে মাঝে গর্তে কিছু ইট-সুরকি ফেলা হলেও দুর্ভোগ লাগব হয়নি।
সড়কটির বেহাল অবস্থা থাকায় গন্তব্যে পৌছার সময়ও বেড়ে গেছে। রাস্তায় অতিরিক্ত ঝাকুনিতেও গর্ভবর্তী মহিলাদের সন্তান প্রসবের ঘটনা ঘটেছে গাড়িতে। একই সড়কে চলাচলকারী সত্তরউর্দ্ধো আব্দুর রহিম বলেন, দীর্ঘদিন থেকে সড়কটি ভাঙা রয়েছে। একবার সড়ক দিয়ে গাড়ি চড়লে ঝাকুনিতে গায়ে ব্যথা হয়ে যায়। প্রায় ১ বছর কাজ চলছে, মেরামত হয়েছে সামান্য। সাধারণ মানুষ মেরামতের কোন সুফল পাচ্ছেনা। অনুপযোগী এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহনসহ সাধারণ মানুষ। এতে নিত্যদিন ভোগান্তি বেড়েই চলছে। মৌলভীবাজার-চাতলাপুর সড়ক দিয়ে ভারতের উত্তর ত্রিপুরায় পণ্য ও মালামাল আমদানি-রফতনি ছাড়াও এই সড়কে দিয়ে প্রতিদিন কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলার একাংশের হাজারো মানুষ জেলা সদরে আসা-যাওয়া করেন।
জুড়ী উপজেলা শহর থেকে ফুলতলা সীমান্ত সড়কের দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার। এটি রাঘনা বটুলী চেকপোস্টে গিয়ে ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে এ সড়কেরও করুণ অবস্থা। খানাখন্দে ভরা পুরো সড়কে কার্পেটিং ওঠে গিয়ে ইট-সুড়কি বেরিয়ে পড়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ করছে ধীর গতিতে।
জুড়ী-ফুলতলা সড়কে চলাচলকারী শিক্ষক আবু হানিফ জানান, গেল বর্ষা মৌসুমে সড়কের স্থানে স্থানে ধান চাষের জমির ন্যায় ছিল। বর্তমানে ওই সড়ক থেকে পানি সরে গেলেও সড়কের দু’পাশে মাঝে-মধ্যে বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় যানচলাচলে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। এই সড়কে প্রতিদিন কয়েকশ’ ট্রাক, বাস, পিকআপ ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করে। এছাড়াও স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীসহ ভারতের সাথে আমদানী-রফতানি ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাঘাত ঘটছে।
কুলাউড়ার রবিরবাজার এলাকার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী জানান, দীর্ঘদিন থেকে রাস্তার কাজ শেষ না হওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। গেল বর্ষায় কাদা পানির কারণে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ও তেমনি বর্তমান সুষ্ক মৌসুমে করোনাকালে ধুলাবালির কারণে তারা মারত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
স্থানীয় ভুক্তভোগীদের দাবি গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কগুলো সংশ্লিষ্ট বিভাগ দ্রুত সংস্কার কাজ শেষ করতে উদ্যোগী হবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন