আবদুল আউয়াল ঠাকুর
কেউ কখনো তার বয়স জানতে চায়নি। তিনি যখন গ্রামের ছোট্ট সড়ক বেয়ে চলতেন তখন প্রায় সবাই বিশেষ করে বাড়ির বৌ মেয়েরাও তার দৃষ্টির বাইরে থাকার চেষ্টা করত। এ আচরণ তার প্রতি কোনো সমিহ, সম্মান বা ভক্তি থেকে নয়। লোকে তাকে এড়িয়ে চলত। কারণ, তার সম্পর্কে এরকম একটা ধারণা ছিল যে, তিনি নাকি বান-টোনা, জিন-পরী এসব নিয়ে কাজ করেন। কখন কাকে কী করেন তা তো বলা যায় না, তাই তার হাত থেকে রক্ষা পেতেই এক ধরনের প্রচেষ্টা অনেকের মধ্যেই ছিল। আবার কখনো কোনো বাড়িতে জিন-পরীর প্রসঙ্গ এলে তার খোঁজই পড়ত সবার আগে। ছোটবেলার কথা বলছি। তখনই প্রায় কুজো হয়ে চলা এ লোকটির প্রতি সকলের বিশেষ আগ্রহের কারণে আমি বা আমার মতো কিছু কিশোর উৎসুক্য প্রকাশ করেছি। সে সময়ে সবকিছু বুঝিনি। মুরব্বিদের কাছে জানতে চাইলে দেখেছি, তারাও এক ধরনের এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেন। খানিকটা ধমকের সুরে বলতেন, এত কিছু দিয়ে তোমার কাজ নেই। নিজের কাজ পড়াশোনায় মন দেও। দেখলে সালাম দিয়ে এড়িয়ে যাবে। কাছে যাবে না। সে অনেক দিন আগের কথা। এই ফকির গোছের লোকটির গুণাগুণ যা জেনেছি-শুনেছি ছোটবেলায়, খানিকটা বড় হয়ে আরো একজনের প্রত্যক্ষ করেছি অনেক কাছ থেকে। তিনি গ্রামে মৌলবী বলে পরিচিত ছিলেন। ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে যেমনি ডাক পড়ত তেমনি ঝাড়ফুঁক জিন-পরীর বেলাতেও তার কদর কম ছিল না। তবে অন্যের থেকে তার পার্থক্য ছিল এটুকু যে, তিনি বান-টোনা করতেন না। যাইহোক, এসব আলোচনার হয়তো নানা দিক রয়েছে। সেসব নিয়ে বিস্তৃত আলোচনার সামর্থ্য এবং যোগ্যতা কোনোটাই আমার নেই। তাই সেদিকে যাব না। কেবল গ্রামে-গঞ্জে নয়, এখন খোদ রাজধানীতেও প্রায়শই শোনা যাচ্ছে জিনের আছরে নানা বিপত্তির ঘটনা। অতি সম্প্রতি রাজধানীর উত্তর বাসাবোয় বাসার ভিতরে ভাইবোন খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত মা হত্যার কথা স্বীকার করেছে। তাকে তার স্বজনরা মানসিক ভারসাম্যহীন বলে উল্লেখ করলেও প্রকাশিত খবরাদিতে বলা হয়েছে, তার ওপর নাকি জিনের আছর ছিল। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাচ্চা দুটির মা স্বীকার করেছে যে, সে তাদের হত্যা করেছে। কারণ হিসেবে সে বলেছে, ‘কেউ একজন আমার কানে বলেছিল, ওদেরকে মেরে ফেললে ভালো হবে, তাই মেরে ফেলেছি।’ প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, আলোচ্য তানজিনের আগে একটি বিয়ে হয়েছিল। স্বামীর সঙ্গে সে সৌদি আরব গিয়েছিল। সেখানে তার মানসিক ভারসাম্যহীনতার বিষয়টি ধরা পড়লে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়। এরপর দেশে ফিরে এলে মাহবুবের সঙ্গে তার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। বাচ্চাদের নাকি সে অসম্ভব ভালোবাসত। এখনো ঘটনার পূর্ণ বিবরণ জানা যায়নি। তবে যতটুকু প্রকাশিত হয়েছে তাতেই অনেক প্রশ্ন উত্থাপিত হওয়ার অবকাশ রয়েছে। এখানে বলে রাখা দরকার, মায়ের হাতে শিশু নিহত হওয়ার ঘটনা এটাই একমাত্র নয়। কিছু দিন আগেও অনুরূপ একটি ঘটনা ঘটে। সেখানেও দেখা গেছে, সেই মহিলারও আগে একটি বিয়ে হয়েছিল। পরবর্তীতে পরকীয়া নিয়েও লেখালেখি হয়েছে। সে মামলার এখন পর্যন্ত কোনো ফয়সালা হয়নি। এর বাইরেও রাস্তাঘাটে, ড্রেনে, নর্দমায় অনেক নবজাতক পাওয়া যাচ্ছে, যাদের পিতৃত্ব-মাতৃত্ব কেউ স্বীকার করছে না। কিছু দিন আগে একটি ভবনের ভেতর থেকে এ ধরনের একটি নবজাতক ফেলে দেয়ার ঘটনা নিয়ে বেশ কয়েক দিন তোলপাড় হলেও পরে শান্ত হয়ে গেছে। এসব ঘটনা সবই জিনের আছরে হয়েছে কিনা জানা যায়নি। তবে এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, নিজেদের পাপ অন্যের ঘাড়ে চাপানোর এক ধরনের অপচেষ্টা হয়তো এর মধ্যে রয়েছে বা থাকতে পারে।
সন্তানের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে মাকে মনে করা হলেও সাম্প্র্রতিক ঘটনাবলী প্রমাণ করছে সে বাস্তবতা এখন সব ক্ষেত্রে সমভাবে বিদ্যমান নেই। এর পিছনে হয়তো যে কারণ রয়েছে তা কোনো না কোনো ফাঁকফোকর দিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে। তা থেকে বলা যায়, এ ধরনের ঘটনা বাড়ছে। এর সাথে যে গুরুতর অপরাধের সম্পর্ক রয়েছে সেটা বোধকরি এখন অনেকেই মনে রাখছেন না, ঘটনাকে দেখছেন ভিন্নভাবে। গ্রামের যে মৌলভীর কথা বলছিলাম সেখানে ফিরে যাই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যেত অবিবাহিত বা বিবাহযোগ্য বা বিয়ে ঠিক হয়েছে এমন মেয়েদের অথবা নতুন বউ হয়ে এসেছে এমন অনেকের জিনের আছর হতো। লক্ষণগুলো তানজিনের মতোই হঠাৎ চুপসে যেত। অন্যরকম ভাব হতো। কাউকে চিনত না। পরিচিতজন বিশেষ করে অভিভাবক দেখলেই বেশি ক্ষেপে যেত। আবার কাউকে কাউকে ভীষণ মান্য করত। কথিত ওঝা বা মৌলবী ডাকলে একপর্যায়ে সব ঠিক হয়ে যেত। এ নিয়ে কোনো মহলেই কোন প্রশ্ন তুলতে দেখিনি। তবে অনেক ক্ষেত্রেই শুনেছি ঠিক হয়ে গেছে। মুরব্বিরা বলতেন, এক বয়সে ওরকম হয়, পরে আর থাকে না। এখন দেখছি, এমন বয়সে এসব হচ্ছে যখন তা কেবল থাকছেই না বরং হত্যাতেও উৎসাহিত করছে।
এখন বাস্তব দু-একটি উদাহরণ তুলে ধরছি। দুলাল নামের একজনকে চিনতাম। কোনো এক সূত্র ধরে সে আমাদের গ্রামের বাড়িতে কখনো কখনো রাত কাটাত। যখন সে আসত সব সময় বাইরের বাড়িতে থাকত। তার সম্পর্কে শুনেছি, তাকে নাকি পরীতে ধরত। সেদিন ছিল প্রচ- বর্ষার রাত। মধ্যরাতে হঠাৎ তার বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার শোনা গেল। এখন হয়তো এ কথা শুনলে সবাই চোর-ডাকাত বা সন্ত্রাসীর কথা ভাবতে পারেন। যখনকার কথা বলছি তখন গ্রামে এক ধরনের অভাবী মানুষ চুরিদারির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও অন্য কোনো উপদ্রবের কথা চিন্তা করা যেত না। মজার ব্যাপার হলো, এই চিৎকার শুধু এক-দুই বাড়িতে নয়, ভরা বর্ষার পানি ডিঙিয়ে গ্রামের প্রায় সব বাড়িতেই পৌঁছে গিয়েছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা গেল, বাইর বাড়িতে উৎসুক মানুষের ভিড় জমে গেছে। ততক্ষণে দুলালের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। যে সূত্র ধরে সে আমাদের বাড়িতে থাকত তারা অস্থির হয়ে পড়ল। অবশেষে দেখা গেল, সেই মধ্যরাতে বেশ উঁচু একটি কাঁটাওয়ালা শিমুল গাছে বসে আছে। সেটাও বোঝা গেল হঠাৎ করে গাছটি কেঁপে ওঠায়। প্রায় সারা রাত কেটে গিয়েছিল সেই দুলালকে সেখান থেকে নামাতে। যুক্তি-বুদ্ধিতে যাই বলুক, কোনো অবস্থাতেই ওই গাছে এতটুকু সময়ে কারো পক্ষে ওই রাতে ওঠা সম্ভব নয়। এরপর রাতে তার প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় পরবর্তী ঘটনা জানা সম্ভব হয়নি। আমাদের এক চাচাতো ভাইয়ের, যিনি একসময়ে একটি জেলা শহরে ছাত্ররাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষ যুক্ত ছিলেন, শুনেছিলাম তাকে পরীতে ধরেছিল। পারিবারিক মুরব্বিদের কাছে শুনেছি, সে রাতে শুয়ে থাকলে তাকে জানালা দিয়ে তুলার মতো উড়িয়ে নিয়ে যেত। এরপর ঢাকায় একটি মাদ্রাসার একজন বুজুর্গ সব শুনে তাকে এ থেকে মুক্ত করেছিলেন। প্রকাশ্যে তিনি পরীটিকে বোতল বন্দি করেছিলেন। সত্যি হচ্ছে, এ নিয়ে এরপর থেকে আর তার স্বাভাবিক জীবনযাপনে কোনো সমস্যা হয়নি। বাস্তবে যা দেখেছি এবং শুনেছি তাতে এটা বলা যায়, জিনের আছর বলতে কিছু নেই তা নয়, তবে এসব নিয়ে প্রকৃতই কোনো কোনো ঘটনা ঘটলেও বুজরুকিই হচ্ছে বেশি। কারণ হয়তো এই যে এখানে প্রতারণার সুযোগ অনেক বেশি। অর্থাৎ সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করা অথবা অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থকরণ অনেক সহজ।
জিন সম্পর্কে আমাদের সমাজের বুদ্ধিবৃত্তি চর্চাকারীরা অথবা তথাকথিত বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তিরা যাই বলুন না কেন, পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জিনের কথা উল্লেখ করেছেন। সুরাতুল জিন ছাড়াও আল্লাহ স্পষ্ট করেই ঘোষণা করেছেন তিনি মানুষ ও জিনকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্য। মানুষ মাটির তৈরি। জিন আগুনের তৈরি। জিনদের সম্পর্কে যে সূরাটি রয়েছে সেখানে তাদের সম্পর্কে বর্ণনা দেয়া হয়েছে। তাদের ভালোমন্দের বিচার যেহেতু হবে তাই তাদের মধ্যে ভালোমন্দ যে রয়েছে এতে কোনো সন্দেহ করার অবকাশ নেই। তাদের চলাচলের গতি-প্রকৃতি নিয়েও নানা আলোচনা রয়েছে। আলেম ও বুজুর্গদের কাছে শুনেছি, জিনরা অনেক মাদ্রাসায় কোরআন পড়ে। নিয়মিত নামাজ আদায় করে। সে যাইহোক, এই আলোচনার বাইরেও একটি কথা সব মুসলমানই স্বীকার করবেন যে, শয়তান বা ইবলিস একসময়ে জিন ছিল। সে তার আমলের গুণে ধ্বংসপ্রাপ্ত জিনদের থেকে রক্ষা পেয়ে একসময়ে ফেরেশতাদের সর্দারে পরিণত হয়েছিল। আল্লাহ মাটি থেকে মানুষ সৃষ্টি করে তাকে সেজদা করতে বললে তার এটি আত্মসম্মানে বিঁধে। সে অস্বীকার করে। আর সে কারণে অভিশপ্ত হয়ে শয়তানে পরিণত হয়েছে। শয়তানের নানারূপ ধারণের ক্ষমতা রয়েছে। একমাত্র মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আকৃতি ছাড়া সে সব রূপই ধারণ করতে পারে। ইসলামের প্রাথমিক যুগে সে অনেক সাহাবিকে পর্যন্ত ধোঁকা দিয়েছে। প্রাথমিক যুগে অনেক যুদ্ধে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে মুসলমানদের বিপদে ফেলার চেষ্টা করেছে। এ যুগেও যে তার এ ধরনের প্রবণতা নেই সে কথা জোর দিয়ে বলা যাবে না।শয়তান যেহেতু জিনের বংশভুক্ত সে কারণে এটাও মনে করা হয়তো অসঙ্গত নয় যে, এ যুগেও বদজিন বা তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা সমাজে নানা বিভ্রাান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা করে থাকতে পারে। সেটি কোনটি কোন প্রক্রিয়ায় রয়েছে তা কেবলমাত্র হক্কানী আলেমরাই বলতে পারবেন। এ নিয়ে প্রতারণা বা বুজরুকির কোনো সুযোগ নেই। শুনতে যা-ই মনে হোক এটি অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়া। মানুষকে সত্য অর্থাৎ আল্লাহর আনুগত্যের পথ থেকে সরিয়ে নেয়াই হচ্ছে শয়তানের প্রকৃতকাজ। সাধারণ অর্থে বলা হয়ে থাকে, দুনিয়ার মোহে যারা রয়েছেন পার্থিব ভোগবিলাস তথা সম্পদের নেশায় যারা বুদ হয়ে আছেন তারাই কার্যত শয়তানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন। দুনিয়াতে সব ধরনের ফ্যাসাদ- বিভ্রান্তি তৈরির মূলে রয়েছে শয়তানের কারসাজি। হিংসা- বিদ্বেষ- সন্ত্রাস সৃষ্টি এবং সর্বোপরি মানুষের শান্তি বিনষ্ট করে মানুষে মানুষে পারস্পরিক শত্রুতা সৃষ্টি- বৃদ্ধি ও তা জিইয়ে রাখাই শয়তানের একমাত্র কাজ। কারণ, মানুষই হচ্ছে তার প্রধান প্রতিপক্ষ। তার ধারণা মানুষের কারণেই সে আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। পরকালে বিশ্বাসী প্রত্যেক মুসলমানই এটা বিশ্বাস করেন যে, দুনিয়াতে যারা শয়তানের অনুসারী বা শয়তানের পায়রাবি করছে তারা পরকালে শেষ বিচারের দিনে নিজেদের অসহায়ের মতো দেখবে। যে শয়তানের কথা তারা শুনেছে সে তাদের কোনো কাজে আসবে না এবং সবকিছুই সে অস্বীকার করবে। পৃথিবীর আদি সংঘাত যা হাবিল ও কাবিলের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল সেখানেও শয়তানের প্ররোচনাই ছিল। শয়তানের প্ররোচনার আলোচনার কোনো তথ্যপ্রমাণ মোমিন বা বিশ্বাসী ছাড়া অন্য কারো পক্ষে জানা সম্ভব নয়। সে কারণে মামলা-মোকদ্দমা করা বা কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করাও যায় না। এটাই মূল প্রসঙ্গ। তবে আলামত থেকে এটা স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া সম্ভব কোনটি মানুষের কোনটি শয়তানের পথ। যে পথে শান্তি সমৃদ্ধি সেটাই হচ্ছে মানুষের সত্যের আর যেটি সংঘাতের অকল্যাণের সেটিই শয়তানের।
সমাজ থেকে যখন সত্য বিদূরিত হয় তখন সেখানে শয়তান জিন বা অশরীরির কল্পকাহিনী ভর করে। মিথ্যা ভ-ামি আশ্রয় নেয়। লেবাস পোশাক যাইহোক প্রকৃতি অভিন্ন। সাধারণ কথাতেও বলা যায়, আলো এলে অন্ধকার দূরীভূত হয়। আইয়ামে জাহেলিয়া দূরীভূত হয়েছিল আল্লাহর রাসূলের আগমনে। তিনি সত্যের ডাক দিয়েছেন। অসত্যের ধারক-বাহকরা তাঁর ওপর নানা নির্যাতন চালিয়েছে। প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে, সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সারা দুনিয়াতে আজ সত্যের আওয়াজ শোনা যায়। অথচ সেই প্রাথমিক যুগেই সত্যের ডাককে গলা টিপে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল। আল্লাহ দ্বীনকে বিজয়ী করেছেন। ব্যাপারটি কেবল তখনই হয়েছে তা নয়। হযরত নূহ (আ.) সাড়ে ৯শ বছর আল্লাহর দ্বীন প্রচারের পর পরিস্থিতি অনুকূল না হওয়ায় আল্লাহর পক্ষ থেকে মহাপ্লাবন এসেছিল। অনেক নবী আল্লাহর দ্বীন প্রচার করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন কাফের- মুশরিকদের হাতে। আবার দ্বীন প্রচার করতে গিয়ে বিপর্যস্ত হওয়ার প্রেক্ষিতেই আল্লাহ আশ্বস্ত করেছেন। হযরত মূসা (আ.)-কে তার নূর দেখিয়েছেন। অন্ধকারে পথ দেখিয়েছেন। তায়েপের ঘটনার পর আল্লাহর রাসূলের মেরাজ হয়েছিল। প্রথম থেকে আল্লাহর রাসূল পর্যন্ত সবাই একটিমাত্র দাওয়াতই দিয়েছেন। আল্লাহ মানুষকে বিধান দিয়েছেন। বিধান বাস্তবায়নের জন্য নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। আজো সত্য-অসত্যের লড়াইই প্রাধান্য বিস্তার করে রয়েছে। যে কোনো কুসংস্কারের মূলে রয়েছে পর্যাপ্ত শিক্ষার অভাব। প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষার অভাবে ধর্মের নামেও নানা কুসংস্কার বাসা বেঁধে থাকতে পারে। আলোচ্য জিন সিনড্রমও তার অংশভুক্ত।
জিনের ব্যাপারটি কেবল কোনো কোনো অশিক্ষিত বা বুজরুকের মধ্যেই প্রবেশ করেছে তা কিন্তু নয়। আমাদের সমাজ শিক্ষাব্যবস্থা সবখানেই এর অবাধ বিচরণ চলছে। দেশের ছেলেরা অনেক বেশি বেশি নম্বরের রেকর্ড করছে কিন্তু তাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সমাজের উচ্চস্তর থেকে সর্বনি¤œ স্তর পর্যন্ত মিথ্যাচার নিত্য অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। প্রতারণাকেই যেন বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক মনে করা হচ্ছে। পরিস্থিতি বোঝাতে বোধকরি আর্কিমিডিসের সূত্রের উল্লেখ অপ্রাসঙ্গিক নয়। তিনি প্রমাণ করেছেন পানি বা অন্য কোনো তরল পদার্থের মধ্যে কোনো বস্তু নিমজ্জিত হলে নিমজ্জমান অবস্থায় যতটুকু পানি বা তরল পদার্থ অপসারণ করে নিমজ্জিত অবস্থায় তার ওজন ততটুকু কমে যায়। আজকের সমাজের দিকে যদি তাকিয়ে দেখা যায় তাহলে বোধকরি এটা বলা যাবে, চারদিকে মূল্যবোধের অবক্ষয়, হিংসা, প্রতিহিংসাপরায়ণতা গেড়ে বসেছে। মনুষ্যত্ব বলে কোনো বিষয় আছে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ দেখা দিয়েছে। সৃষ্টির সেরা আশরাফুল মখলুকাত মানুষ হত্যা সবচেয়ে সহজ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। শিশু হত্যার মতো গর্হিত অপরাধেও পিছপা হচ্ছে না মায়েরা। সমাজ কাঠামো ভেঙে পড়তে খুব বাকি নেই। গভীর কোনো বিশ্লেষণে না গিয়েও বলা যায়, সমাজ যতটাই অধঃপতিত, সমাজ থেকে সত্য ততটাই বিদূরিত। সে কারণেই উপলব্ধিতে আনা জরুরি হয়ে পড়েছে টিকে থাকতে হলে করণীয় কী।
awalthakur@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন