বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

কোটি টাকা আত্মসাৎ

সাতক্ষীরায় ‘আমার বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প

সাতক্ষীরা থেকে আবদুল ওয়াজেদ কচি : | প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের উপকারভোগী সদস্যদের সঞ্চয়ের টাকা জমা না দিয়ে ও সদস্যদের নামে ঋণ উত্তোলন করে ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইতোমধ্যে শাখা ব্যবস্থাপক ও উপজেলা সমন্বয়কারী মেহেদী হাসান, জুনিয়র অফিসার আব্দুল মুকিব এবং সুপারভাইজার রফিকুল ইসলাম ও শরিফুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

সূত্র মতে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ২০১৪ সালে পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ‘একটি বাড়ি, একটি খামার’ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় ‘আমার বাড়ি, আমার খামার’। সরকারিভাবে পরিচালিত হওয়ায় উপজেলার গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠেছে এই সমিতি। বর্তমানে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় এই প্রকল্পের আওতায় ১২ হাজার সদস্য রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় এক হাজার সদস্যের অর্থ তছনছ করেছে কর্মকর্তারা। সর্বশেষ অডিট অনুযায়ী, উপকারভোগী সদস্যদের সঞ্চয়ের টাকা জমা না দিয়ে ও সদস্যদের নামে ঋণ উত্তোলন করে গ্রাহকদের ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯ লাখ টাকা ইতোমধ্যে উদ্ধার হয়েছে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার তলুইগাছা গ্রামের আকলিমা খাতুন জানান, তিনি ২০১৪ সালে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ সমিতির সদস্য হন। প্রতি মাসে সঞ্চয়ের টাকাও জমা দিয়ে যাচ্ছেন। তবে অফিস থেকে টাকা জমা দেওয়ার বই আজও পাননি। উল্টো অফিস থেকে এসে বলে গেছে তার নামে ১০ হাজার টাকার ঋণ উঠানো হয়েছে। কিন্তু ঋণের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
একই গ্রামের কামরুজ্জামান জানান, সমিতির কর্মকর্তারা তার বাবা, ভাই ও বোনের নামে ঋণ তুলে আত্মসাৎ করেছেন। তারা কোন ঋণ নেননি। বৃদ্ধ নাসের সরদার জানান, তিনি কখনও অফিসে যাননি। কোন কাগজপত্রে স্বাক্ষরও করেননি। অথচ তার নামে ঋণ নেওয়া হয়েছে ২০ হাজার টাকা। সদস্য বই তার বাড়িতে আছে। কিভাবে এই ঋণের টাকা দেওয়া হলো? আর কে উঠালো? তা তিনি জানেন না। রিক্তা খাতুন নামে আরও একজন জানান, তার নামেও ঋণ উঠানো হয়েছে। কিন্তু তিনি জানেন না।
আবার, আলী হোসেন ও হামজের আলী নামে দুজন জানান, তারা ঋণ নিয়েছিলেন। ঋণের টাকা সুদসহ পরিশোধও করেছেন। কিন্তু টাকা অফিসে জমা হয়নি।
একই অভিযোগ করলেন সদর উপজেলার বাশদহা ইউপি চেয়ারম্যান মোশারাফ হোসেন, তৈয়েব আলী, পারভীন খাতুন, হাছিনা খাতুন, নাজমা খাতুন, আবেদাসহ অসংখ্য সদস্য। তাদের সবার নামেই ঋণ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা জানেনই না। সম্প্রতি আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের ঢাকা অফিস থেকে অডিট অফিসাররা উপকারভোগীদের এলাকা পরিদর্শন করলে গ্রাহকরা এসব তথ্য জানতে পারেন।
এদিকে, অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় বরখাস্ত হওয়া শাখা ব্যবস্থাপক ও উপজেলা সমন্বয়কারী মেহেদী হাসান জানান, তিনি কোন টাকা আত্মসাৎ করেননি। যারা টাকা নিয়েছে তারা স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তবে তার মনিটরিং ব্যবস্থা দুর্বল ছিল বলে তিনি স্বীকার করেন। বরখাস্ত হওয়া জুনিয়র অফিসার আব্দুল মুকিব জানান, তিনি ৫৩ লাখ টাকার মত নিয়েছেন। এই টাকা তিনি নিজ বাড়ির কাজে ব্যবহার করেছেন। ইতোমধ্যে কিছু টাকা ফেরতও দিয়েছেন। তবে তার নিকট অতিরিক্ত টাকা দাবি করা হচ্ছে। তার পক্ষে অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব না।
এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ‘আমার বাড়ি, আমার খামার’ প্রকল্পের সিনিয়র অফিসার বিশ্বজিত সরদার জানান, বৈকারি, কুশখালী, বাঁশদহা ইউনিয়নে বেশি ক্ষতি হয়েছে। আত্মসাৎকৃত ১ কোটি ২৭ লাখ টাকার মধ্যে ১৯ লাখ টাকা উদ্ধার হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। তাদের নামে ফৌজদারি মামলারও প্রস্তুতি চলছে। এই টাকা উদ্ধার করার জন্য সব ধরনের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। তবে, বর্তমানে কিছু এলাকায় আমার বাড়ি, আমার খামার প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনা করতে অসুবিধা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন