রাজশাহীর গোদাগাড়ীর কৃষকরা আগে শুধু ইরি-বোরো এক ফসলী আবাদ করে হাজার হাজার হেক্টর জমি পতিত রাখত। কালের বিবর্তনের সাথে সাথে এ অঞ্চলের কৃষকদেরও কৃষি ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটেছে।
তারা বিগত দু, যুগ ধরে ইরি-বোরো, আমন, টমেটো করোলা. লাউ, পটল, শীম, ভূট্টা, তরমুজ আবাদের পাশাপাশি সরিষার আবাদেও ঝুঁকেছে। তাই এখন সরিষার হলুদ ফুলে ফুলে ঢাকা গোদাগাড়ীর বিস্তীর্ণ মাঠ। গোদাগাড়ীর বাসুদেবপুরের বিল চড়াইয়ের যে দিকেই তাকাই হলুদ ফুলে চোখ ঝলসে উঠে। ফুলের সাথে লক্ষ লক্ষ মৌমাছি গুঞ্জন কৃষককে মহিত করে তুলেছে। মৌমাছি সরিষার ফুল থেকে মধু আহরণে ব্যস্ত। মধু আরোহনকারীরা মধু আরহনে ব্যস্তসময় পার করছেন। শীতের শিশির ভেজা সকালে সরিষার ফুল ফল দুলছে তো দুলছে সে সাথে দুলছে কৃষকের মন। তাই তো তারা দিনের বেশী সময় সরিষার মাঠে সময় পার করছেন। এ বছর গোদাগাড়ীতে বাম্পার সরিষার ফলন আশা করছেন কৃষক। কৃষি অফিসের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সফিকুল ইসলাম।
তিনি আরও জানান, গোদাগাড়ী উপজেলায় এবছর ৭ হাজর ২শ১০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। বারি সরিষা-১৪ জাত ২ হাজার ৮শ ৪৫ হেক্টর, বারি সরিষা-১৫ জাত ২ হাজার ৬শ ৯০হেক্টর, বারি সরিষা-১৭ জাত ২শ ৩৫ হেক্টর, এছাড়া বিনা সরিষা সহ স্থানীয় কিছু জাত চাষ হয়েছে। এছাড়া প্রতি সরিষা জমি থেকে বাড়তি আয় করতে অনেক বেকার যুবক এবং কৃষকগণ মৌবাক্স স্থাপন করেছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গোদাগাড়ী সকল ধরনের কারিগরী সহযোগিতা করছে। এছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কৃষি বান্ধব সরকার তৈল ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গোদাগাড়ী উপজেলায় মোট ১ হাজার ৬শ ৫০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার প্রদান করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রতি ইঞ্চি জমির ব্যবহার নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি আমরা। বিলের পানি নেমে যাওয়ার পর পরই সরিষার আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গোদাগাড়ী আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।সব সময় কৃষকের পাশে থাকতে নিরন্তর ছুটে চলতে ভালোবাসি।
মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার কৃষি হবে দূর্বার।
গোদাগাড়ী এলাকার কৃষকরা জানান, কালের প্রেক্ষাপটে আমন ধানের বিকল্প হিসেবে গোদাগাড়ীতে কৃষকরা বোরো ধানের চাষে ঝুঁকে পড়ে। বিল চাড়ায়ের পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে মাঠের কৃষক কখনো সরিষার আবাদ করার কথা ভাবেনি। এখন থেকে ২০ বছর আগে এ বিলের কৃষক সমাজ ভাবতে পারেনি এ জমিতে সরিষা, মুসরি চাষ করার কথা। গত কয়েক বছর বন্যার পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় এবিলের মাঠে মাঠে সরিষার আবাদ হয়েছে পুরোদমে। বর্তমানে সরিষার গাছে গাছে হলুদ ফুলের সমাহার। প্রায় ফুলেই মৌমাছি বসে মধূ আহরণ করছে। কৃষক আশা করছে কোন রোগ বালাই না হলে এবার গোদাগাড়ীতে সরিষার বাম্পার ফলন হবে। গোদাগাড়ী পৌর এলাকার কৃষক আব্দুল মাতিন জানান, এ বছর আমি ৫ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না হলে প্রতি বিঘা জমিতে ৬ থেকে ৭ মণ হারে সরিষার ফলন হবে। একই গ্রামের শামসুল আলম জানান, সরিষার আবাদের পরই জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা যায়। এতে জমিতে সার কম লাগে। সরিষার পাতা ও শিকড় সবুজ সারের কাজ করে এবং বোরো ধানের ফলনও বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। অল্পসময়ের মধ্যে ২টি ফসল ঘরে তুলতে পারছে কৃষক। ভাজনপুর এলাকার কৃষক দুলুদেব বলেন, বর্তমানে মাঠে সরিষার, ভুট্টা, বিনাচাষে রসুন, ধনিয়া, গমের আবাদ হয়েছে। সরিষার চাষে লাভ বেশী খরচ কম। তাছাড়া সহজেই বিক্রয় করা যায়। সরিষার আবাদ ঘরে তোলার পর ওই জমিতেই সার ছাড়াই বোরো ধানের চাষ করা যায়। সরিষার আবাদ এ অঞ্চলের কৃষককে লাভের মুখ দেখাতে পেরেছে। সরিষার পাশাপাশি এবার ভুট্টার আবাদও হয়েছে ব্যাপক। মাত্র ২ থেকে আড়াই মাসের মধ্যে সরিষা জমি থেকে ঘরে তোলা যায়। সরিষার পাতা ও শিকড় জমিতে জৈব সারের কাজ করে। গাছগুলি জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা যায়
এবারও বাম্পার সরিষার ফলন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মতিয়র রহমান জানান, স্বল্প সময়ের মধ্যে কৃষককে একের অধিক ফসল ফলানোর জন্য নানাভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া উপসহকারী কৃষি অফিসারগণ সার্বক্ষণিক মাঠে কৃষকের সাথে কাজ করছেন। যাতে কৃষকের কোন প্রকার সমস্যার সৃষ্টি না হয়। আমি আশা করছি, প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় না ঘটলে এবার বিল চড়াইসহ গোদাগাড়ী সরিষা, গম, পিয়াজের রসুনের বাম্পার ফলনের আশায় স্থানীয় কৃষকদের চোখে মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন