বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

উচ্ছেদ ও পুনর্দখলের খেলা বন্ধ হোক

| প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০৩ এএম

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের(ডিএসসিসি) বিভিন্ন মার্কেটের অবৈধ ও নকশাবহির্ভূত দোকান উচ্ছেদের কার্যক্রম নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এসব অবৈধ দোকানপাট বসিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যারা প্রতি মাসে লাখ লাখ কামাচ্ছিলেন তারা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। অবৈধ দোকান ও স্থাপনা উচ্ছেদে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নুর তাপসের আপসহীন ভ‚মিকায় স্বার্থহানি হওয়ায় তাদের আঁতে আঘাত লেগেছে। গত মঙ্গল ও বুধবার রাজধানীর ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত ডিএসসিসি মার্কেটগুলোতে ৫শতাধিক অবৈধ দোকান ও স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের প্রত্যক্ষ মদত ছাড়া পাকা দোকান বানিয়ে এভাবে দীর্ঘদিন ভোগদখল করা সম্ভব নয়। এর সাথে সিটি কর্পোরেশনের একশ্রেণীর কর্মকর্তারাও জড়িত বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন। দীর্ঘদিনের সমঝোতায় থাকা ডিসিসি’র উচ্ছেদকারি দলের সাথে দখলদারদের তুলকালাম সৃষ্টি হয়। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, এই উচ্ছেদ অভিযান কতদিন টিকবে? অতীতেও বিভিন্ন সময়ে ডাকঢোল পিটিয়ে এমন উচ্ছেদ অভিযান হয়েছে এবং অল্পদিনের মধ্যে তা পুনর্দখল হয়ে পূর্বাবস্থায় ফিরে যাওয়ার দৃষ্টান্ত অনেক। বুড়িগঙ্গা, বালু, তুরাগ ও শীতলক্ষ্যা তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, বস্তি উচ্ছেদ ও রেলের ভূমি পুনরুদ্ধার নিয়ে ইঁদুর-বিড়াল খেলার মহড়া দীর্ঘদিন ধরেই চলছে।

মূল পরিকল্পনা অনুসারে পরিবেশ ও নাগরিক সুযোগসুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে সিটি কর্পোরেশনের মার্কেটগুলোর সামনে যথেষ্ট ফাঁকা জায়গা রেখে নির্মাণ করা হয়েছিল। সে সব ফাঁকা বা বর্ধিত অংশে নতুন মার্কেট ও দোকান বানিয়ে বরাদ্দ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাশাপাশি এসব্ মার্কেট থেকে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা ভাড়া ও চাঁদা আদায় করেছেন সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও সরকারি দলের নেতারা। নগরীর মার্কেকগুলোকে স্বাচ্ছন্দে চলাচল ও পরিবেশবান্ধব করে তোলার জন্য নকশাবহির্ভুত ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্যোগ নেয়া হলে তা হবে খুবই ইতিবাচক পদক্ষেপ। শুধুমাত্র ফুলবাড়িয়ার দ্বিতীয় ব্লকেই ৯ শতাধিক অবৈধ দোকান রয়েছে বলে জানা যায়। দোকান মালিকরা নির্ধারিত টাকা দিয়ে দোকানের বরাদ্দ নিয়েছেন এবং মাসিক ভাড়া ও বার্ষিক রাজস্ব পরিশোধ করেই ব্যবসা করছিলেন। এখন অবৈধ উচ্ছেদ অভিযানে শত শত দোকান মালিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার আগে তাদের মালিকানা, বরাদ্দপত্রসহ বৈধতা নিয়ে কোনো আইনগত সুরাহা না করেই উচ্ছেদ অব্যাহত রাখায় দোকান মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও যারা ইচ্ছেমত দোকান বানিয়ে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তাদের ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের নীরবতা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের একটি মার্কেটের অংশ বিশেষের অবৈধ স্থাপনা ও দোকান উচ্ছেদের ঘটনায় তোলপাড় চললেও ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রায় প্রতিটি মার্কেটে কমবেশি একই অবস্থা বিরাজ করছে। ফুলবাড়িয়ে মার্কেটের দেলু- ফিরোজ সিন্ডিকেটের মত সবগুলো মার্কেটের দোকানদাররা দশকের পর দশক ধরে অনুরূপ সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে আছে। এসব সিন্ডিকেটের হোঁতারা অবৈধ দোকান বরাদ্দ দিয়ে কোটি কোটি টাকা আদায় করে নিজেরা এবং সিটি কর্পোরেশনের কর্তাব্যক্তিদের সাথে যোগসাজশ করে ভাগ করে নিয়েছেন। এখন অবৈধ দোকান উচ্ছেদের প্রেক্ষিতে তাদের জবাবদিহিতার বাইরে রাখার কোনো সুযোগ নেই। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত অনুসন্ধানী রিপোর্টে এদের কারো কারো নাম উঠে আসলেও বিভিন্ন মার্কেটের অধিকাংশ সিন্ডিকেট এখনো ধরাছোয়ার বাইরে। সিটি কপোর্রেশন মার্কেটগুলোর অবৈধ দোকান উচ্ছেদ কার্যক্রমকে আমরা সমর্থন করি। তবে এসব উচ্ছেদ যেন স্থায়ী হয়। অতীতের মত বাড়তি টাকা নিয়ে নতুন দখলদারদের সুযোগ দেয়া বা পুরনোদের কাছ থেকে নতুন করে টাকা নিয়ে বৈধতা দেয়ার দৃষ্টান্ত চিরতরে বন্ধ করতে হবে। একইভাবে ঢাকার চারপাশের নদী, খাল, জলাভ‚মি, রেলের জমিসহ সরকারি জমি উদ্ধারের নামে ইঁদুর-বিড়াল খেলা বন্ধ করতে হবে। অবৈধ স্থাপনা অপসারণ ও উচ্ছেদের সাথে সাথে উদ্ধারকৃত স্থানগুলো সংরক্ষণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তুলতে হলে শহরের পাবলিক স্পেস, মার্কেট, পার্ক, জলাভ‚মি ও সরকারি জায়গাগুলোকে পরিকল্পনামাফিক সৌন্দর্য বর্ধন ও সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। রাজধানীমুখী মানুষের স্রােত ঠেকাতে হলে নদীভাঙ্গন কবলিত ও কর্মহীন মানুষের জন্য স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন