‘ওই জায়গাটায় আমার ৫ কেদার জমি ছিলো, এদিকে ছিলো বসতবাড়ি, ওপাশে ছিলো ফসলি জমি। এই জমিতে উৎপাদিত ফসল দিয়েই চলতো আমাদের পুরো পরিবার। সেই বাড়িও নেই, ফসলি জমিও নেই। পুরোটাই সুরমা নদীর ভাঙনে চলে গেছে। আমার এখন কিছুই নেই। সব শেষ। বাপ-দাদার ভিটেমাটি হারিয়ে এখন আমি নিঃস্ব। ছবি তুলে কি হবে, কেউ কোনো খোঁজ-খবর পর্যন্ত নেয়না, আল্লাহ ছাড়া আমাদের কেউ নেই।’ নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে নিজের হারানো জমির অবস্থান দেখাচ্ছিলেন আর এভাবেই বলছিলেন নদী ভাঙনে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাজুল ইসলাম, শুধু সাজুল ইসলামই নন, সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে ছুটে আসেন তার মতো মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম, আব্দুর রহমান। এছাড়া নিহত ১৭ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা একে একে তাদের অতীত বসতভিটা ও ফসলি জমি হারানোর কথা ইনকিলাবকে জানান। জানান নিজেদের অসহায়ত্বের কথা। জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের ওপর উদাসীনতার অভিযোগ এনে অনেকে ক্ষোভও প্রকাশ করেন। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম অচন্তপুর। পৌরসভার বাইরে হলেও শহরের পাশ ঘেঁষে সুরমা নদীর ওপারেই এই ২০ মুক্তিযোদ্ধার গ্রাম। এ গ্রামের নাম শুনলে, তাদের চোখে ভেসে ওঠে হারানো বসত বাড়ি, ফসলি জমি চিত্র। বছর পর বছর সুরমা নদীর তীব্র ভাঙনে সব কিছু হারিয়ে এখন উদ্বাবাস্তদের জীবন বেছে নিয়াছেন অনেকেই। অথচ একালে তাদের সবই ছিলো। নদী ভাঙনে এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের আজোবদি সরকারিভাবে কোনো ধরণের সহায়তার কিংবা পূর্ণবাসনের উদোগ নেয়া হয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, সুরমা নদীর তীর ভাঙন এখনো অব্যাহত রয়েছে। ভাঙন কবলিত অংশ থেকে নিজেদের বসতঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন অনেকেই। দিন দিন ভাঙনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদীর পাড়ের মানুষ।
ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা পারভেজ মিয়া, মজর উদ্দিন, আব্দুর রহমান, আসাদুল, আগুর মিয়াসহ অনেকে জানান, নিজের জমি হারিয়ে পরের জমিতে ঘর বানিয়ে থাকছি। আমরাও তো এদেশের বাসিন্দা। এমপি, চেয়ারম্যান, কিংবা প্রশাসনের কেউ আমাদের খোঁজ খবর রাখেনি। তবে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপজেলা চেয়ারম্যান নদী ভাঙন দেখে তারা আস্বস্ত করছেন সরকারের পক্ষ থেকে ভাঙন রোধের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াছমিন নাহার রুমা এ বিষয়ে বলেন, কয়েকদিন আগে নদী ভাঙনের স্থানগুলো পরিদর্শন করেছি। যাদের বসতভিটা, ঘর-বাড়ি, ভাঙনে বিলীন হয়েছে তাদেরকে পূর্ণবাসন করা হবে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বলেন, সুরমা নদীর ভাঙন কবলিত স্থানটি সদর উপজেলার অচিন্তপুর গ্রামে। আমি সরেজমিনে দেখিছি। আমরা ভাঙন রোধে উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে ভাঙন নিয়ন্ত্রণে ২৯ লাখ টাকা অনুমোদনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এছাড়া এ জাগাটিতে স্থায়ীভাবে নদী সংরক্ষণের একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করে পাউবো সদর দফতরে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন