শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

হুমকিতে কৃষি জমি

ফসলি জমির মাটি কাটার হিড়িক

সিলেট ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০৩ এএম

সিলেটের সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলায় ফসলি জমির মাটি কাটা চলছে দেদারছে। শতাধিক স্পট থেকে জমি কেটে মাঠি নেয়া হচ্ছে ইটভাটায়। এতে শত শত বিঘা ফসল জমির ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। একই সঙ্গে উর্বরতা হারিয়ে অনাবাদি হয়ে পড়ছে আবাদি জমি। ফসল ফলন যেমন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে তেমনি অন্যান্য জমিতে চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে কৃষক।
স্থানীয় প্রশাসনের নির্লিপ্ত ভ‚মিকার কারণে মাটি কাটার মহোৎসবে নেমেছে ইটভাটার মালিকরা। একই সাথে নগদ অর্থের লোভে জমি মালিকরা মাটি বিক্রির অশুভ প্রতিযোগীতায় নেমেছেন। সনাতন পদ্ধতিতে নয়, ভেকু মেশিন দিয়ে কাটা হচ্ছে জমির মাটি। মুর্হুতেই সাবাড় হয়ে যাচ্ছে দিগন্তজুড়া ফসলের মাট। স্থানীয় সূত্র জানায়, গোয়াইনঘাট উপজেলার, পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের তিতারাই গ্রামে, পূর্ব আলীরগাঁও ইউনিয়নের লাফনাউট, ডৌবাড়ী ইউনিয়নের ঘোষগ্রাম, নন্দীরগাওঁ ইউনিয়নের মানাউরা, খুরুমখলা, নন্দীরগাওঁ, নওয়াগাওঁ, লামাপাড়া, কদমতলা, আঙ্গারজুর, দ্বারিরপার, সুন্দ্রগাঁও, মিত্রিমহল, সালুটিকর (কোওরবাড়ী) ও রানীগঞ্জসহ শতাধিক স্থানে ভেকু মেশিনের মাধ্যমে ট্রাক দিয়ে ফসলি জমির মাটি বিভিন্ন ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জমির মালিকরা না বুঝেই তা ইটভাটার মালিকদের কাছে বিক্রি করছেন। এতে জমির উর্বরতা শক্তি কমতে শুরু করলেও এ বিষয়ে স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের করা হচ্ছে না সতর্ক। নেয়া হচ্ছে না কোন পদক্ষেপ। দানবযন্ত্র ফে-লোডার মেশিন দিয়ে বোরো চারা ধানের জমির মাটি প্রায় ১৫ থেকে ১৮ ফুট গভীর করে কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছেন। এতে পাশের জমির ৬-৭ জন কৃষকের ফসলি জমি ভাঙনের মুখে পড়েছে।
ভুক্তভোগীরা স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন এমন অভিযোগও রয়েছে। স্থানীয়ভাবে বাঁধা দিয়ে মাটি ব্যবসায়ীদের উল্টো হুমকির শিকার হয়েছেন কৃষকদের। মাটি ব্যবসায়ী মো. ফরিদ আহমদ ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমার মতো গোয়াইনঘাট উপজেলায় শত শত ব্যবসায়ী ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছেন, আগে তাদের বন্ধ করতে বলেন তারপরই আমি বন্ধ করব। গভীর করে মাটি কেটে নেয়ায় পাশের জমির ক্ষতির কথাও স্বীকার করেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইটভাটা মালিক জানান, ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি ইটভাটায় বিক্রি করা মানে ওই কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হওয়া। তিনি বলেন, গোয়াইনঘাটে এখন চলমান প্রায় ২০টি ইটভাটা রয়েছে। আর এসব ভাটার ইট তৈরি করার জন্য গোয়াইনঘাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমির মাটিই সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে স্থানীয় প্রশাসনকে তারা ম্যানেজ করেই ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
গোয়াইনঘাট উপজেলার মানাউরা গ্রামের কৃষক ভাবন সরকার জানান, বেশি টাকা পাওয়ার কারণে তার দুই বিঘা ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে দিয়েছেন। পরে ওই জমিতে আগের মতো আর ফসল হবে কি-না তা তিনি জানেন না। গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজের প্রিন্সিপাল মো. ফজলুল হক বলেন, জমির মূল উর্বরতা শক্তি থাকে মাটির উপরিভাগে। আর এ মাটি (টপ সয়েল) কেটে নিলে তার উর্বরতা শক্তি সঞ্চয় করতে সময় লাগে ১০-১২ বছর। গোয়াইনঘাটের মতো সারাদেশেই যেভাবে ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে নেয়া হচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে আগামী ১০-১২ বছর পর কৃষি জমি অনাবাদি হয়ে দেশে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সুলতান আলী জানান, সরকারি নিয়ম না মেনেই গোয়াইনঘাট উপজেলায় অনেক ইটভাটা তৈরি হয়েছে। আর এসব ভাটার জন্য মাটির প্রয়োজন। তাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের জমির টপ সয়েল তারা নিচ্ছে। আর এ টপ সয়েল নেওয়া বন্ধ করার ক্ষমতা আমাদের নেই।
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজমুস সাকিব বলেন, ফসিল জমি থেকে কিছু অসাধু মাটি ব্যবসায়ী মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছেন। উক্ত বিষয়ে স্থানীয় সচেতন মহল এবং ফসিল জমির একাধিক মালিক লিখিত অভিযোগ করেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন