শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

সৈয়দপুরের খামারিদের কাটছে ব্যস্ত সময়

প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণ

প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নজির হোসেন নজু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে
কোন কৃত্রিমতা ছাড়াই নীফামারীর সৈয়দপুরের বাঁশবাড়িতে গড়ে উঠেছে গরু-ছাগলের খামার। কোন ধরনের রাসায়নিক, এন্টিবায়োটিক বা হরমোন ব্যবহার ছাড়াই মেসার্স ইউসুফ ডেইরী ফার্মে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে গরু-ছাগল হৃষ্ট-পুষ্ট করা হচ্ছে। সামনে কোরবানির বাজার ধরার জন্য ফার্মের মালিক জামিল আশরাফ মিন্টু (৩৬) ও তার কর্মী বাহিনী দিনরাত কাজ করে চলেছেন। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পৈতৃক ব্যবসা গুল, সাবান, জর্দা ইত্যাদি তৈরির কারখানা ও বিক্রির ব্যবসায় মন বসাতে পারেননি ওই এলাকার প্রতিষ্ঠিত ও পরিচিত ব্যবসায়ী আলহাজ্ব শাহাবুদ্দিনের ছেলে জামিল আশরাফ মিন্টু। বাউন্ডালে ও ভবঘুরে মনে কয়েক বছর আগে প্রাণি সম্পদ বিভাগের পরামর্শে শুরু করেন ডেইরী ফার্মের ব্যবসা। স্বাভাবিক খাবারে গরু-ছাগল পালন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। এই ডেইরী ফার্ম শুরুতে ৬টি বকনা বাছুর কেনেন শিক্ষিত যুবক মিন্টু। সেখান থেকে আসা বাছুর আর বাজার থেকে শুকনো গরু কিনে পালন করতে থাকেন। এই ফার্মে গরুর পাশাপাশি ব্লাক বেঙ্গল ও যমুনা পাড়ি ছাগল লালন-পালন করতে থাকেন। বর্তমানে তার ফার্মে ৮৪টি গরু ও ১৫টি ছাগল রয়েছে। আসছে কোরবানিতে প্রতিটি গরু ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকায় বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন। দেশি ও শংকর জাতের এসব গরু দেখে মন জুড়িয়ে যায়। এই গরুর গোবর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বায়োগ্যাস প্লান্ট। ৩৫ শতক জমিতে খামারটি তৈরি করা হয়েছে। এরমধ্যে পশুর ঘাসের চাহিদা পূরণে আবাদ করা হয়েছে নেপিয়ার ঘাসও। পাশেই আমিষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে মাছের চাষ করা হয়েছে। মেসার্স ইউসুফ ডেইরী ফার্মের মালিক জামিল আশরাফ মিন্টু জানান, এই খামার তৈরিতে তার প্রায় ৩৫ লাখ টাকা লেগেছে। স্থানীয় চাহিদা পূরণের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত গরু-ছাগলের খামার ও মাছ চাষ করছেন। গাভি গর্ভ ধারণ করায় বর্তমানে দুধ বন্ধ রয়েছে। আসছে কোরবানির ঈদকে টার্গেট করে তিনি গরু লালন-পালন করছেন। এই থেকে বিপুল পরিমাণ আয় করার আশা করছেন তিনি। কোরবানির পর আবারও নতুন করে শুকনো গরু ও ছাগল কিনে স্বাভাবিক খাবারে হৃষ্ট-পুষ্ট (মোটা তাজাকরণ) করে বাজারে বিক্রি করবেন বলে মিন্টু জানান। তিনি নিজে এবং ৬ জন কর্মচারি সার্বক্ষণিক খামারে গরু-ছাগলের পরিচর্যা করেন। পশু খাদ্য দাম বাড়ায় খরচও বাড়ছে। এই কাজে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ পেলে খামারটিকে আরও বড় করতে পারবেন বলে জানান খামার মালিক। এ সময় উপস্থিত উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, উপজেলায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ২ শতাধিক খামার থাকলেও নিবন্ধিত খামার রয়েছে ১২০টি। এর মধ্যে মেসার্স ইউসুফ ডেইরী ফার্মের বৈশিষ্ট্য হলো এই খামারে কোন ধরনের রাসায়নিক, এন্টিবায়োটিক বা হরমোন ব্যবহার করা হয় না। ফলে খামারটি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। প্রাণি সম্পদ বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় ডেইরী ফার্ম করে আয় ও সম্ভাবনার মুখ দেখছেন এই ডেইরী ফার্মের মালিক। বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও প্রতিবেশি জোবায়দুল ইসলাম শাহিন বলেন, শহরের ভেতরে এই ধরনের প্রকল্প শুধু প্রশংসিত নয় অনেকের কাছে অনুকরণীয় বটে। বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই খামারে গরুর পাশাপাশি ছাগল পালন করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক উপায়ে এসব লালন-পালন করায় এসব গরু ও ছাগলের চাহিদাও লোকজনের কাছে রয়েছে। আসছে কোরবানির ঈদে গরু কিনতে গিয়ে অনেকেই শঙ্কায় ভোগেন কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা গরু কিনবেন কিনা। এসব গরু স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ প্রয়োগের ফলে হাটে বা কেনার পরে অনেকের গরু মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তাই এসব বিবেচনায় স্থানীয় বড় ব্যবসায়ী ও অবস্থাপন্ন লোকেরা মেসার্স ইউসুফ ডেইরী ফার্মের স্বাস্থ্যসম্মত গরু ও ছাগল কেনার আগ্রহ দেখিয়েছেন বলে জানা গেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Mamun ২৩ আগস্ট, ২০১৬, ৩:৫৪ পিএম says : 0
Congratulations Brother. I appreciate you.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন