শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

খোলপেটুয়ার ভাঙন আতঙ্কে এলাকাবাসী

প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রবিউল ইসলাম, কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা) থেকে
ভাঙছে নদী, বাড়ছে মানুষের আহাজারি। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে দুর্বার হয়ে উঠেছে খোলপেটুয়া। পাড় ভাঙার শব্দ শুনে শুনে আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন নদীতীরের বাসিন্দারা। আয়রোজগারের একমাত্র অবলম্বন চিংড়ি চাষ ও গবাদিপশু আর বাড়ির উঠানে থাকা গাছগাছালি রক্ষার প্রাণান্তকর চেষ্টায় ব্যস্ত সকলেই। তাদের মুখে এখন একটাই আহাজারি-ভিটেমাটি হারিয়ে কোথায় যাবে। গত শুক্রবার সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার কামালকাটি ও ঝাপা গ্রামে গিয়ে এসব চিত্র দেখা গেছে। ব্রিটিশ আমলের দেশের অন্যতম নৌবন্দর ঐতিহ্যবাহী নওয়াবেকীর মানুষের মাঝে আর ভাগ্যের সুবাতাস বইছে না। ভয়াবহ খোলপেটুয়ার ভাঙন এখন তাদের দুর্ভাগ্যে পরিণত হয়েছে। কথা হয় ক্ষতিগ্রস্ত কামালকাটি গ্রামের ষাটোর্ধ্ব মোসলেম আলীর সাথে। গত দুই বছর থেকে এ পর্যন্ত তার এক একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়। শেষ সম্বল ১০ শতাংশ ভিটেমাটি রাক্ষুসে খোলপেটুয়া কেড়ে নিচ্ছে। তিনি আক্ষেপ করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘কই যামু ভাই, যা করার তাড়াতাড়ি কিছু একটা কইরোইন’। জমিজমা হারিয়ে শেষ সম্বল বসতবাড়ি রক্ষার কাজে নিয়োজিত একই গ্রামের প্রাক্তন ইউপি সদস্য বিশ্বজিৎ মন্ডল জানান, ২ একর জমি ও একাধিক ফলজ-বনজ গাছ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। রাতে শোয়ার আগে অন্য একটি ঘরে তালা দিয়ে সকালে উঠে দেখি ঘরটি রাক্ষুসে খোলপেটুয়া দখল করে নিয়েছে। একইভাবে খোলপেটুয়ার ভয়াবহ ভাঙনের স্মৃতি তুলে ধরেন পার্শ্ববর্তী ঝাপা গ্রামের প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক অমল কৃষ্ণ মন্ডল, জামাত আলী গাজী, এভারগ্রীন ক্লাবের সভাপতি সমাজসেবক রনজিৎ কুমার মন্ডল, শিক্ষক পুলিন কুমার বাছাড়সহ অনেকেই। স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলপেটুয়ার পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে কামালকাটি ও দক্ষিণ ঝাঁপা এলাকায় ব্যাপক ফাটল দেখা দিয়েছে। যে কোন মুহূর্তে ওই এলাকায় ভাঙন দেখা দিতে পারে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে হাজার হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি, চিংড়ি ঘের ও ফসলি জমি। প্রতি মুহূর্তেই বিস্তীর্ণ ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদী তীরবর্তী ঝাঁপা, কামালকাটি, পাতাখালী, সোনাখালী, চন্ডিপুর, বাইনতোলা, খুটিকাটা, পাখিমারাসহ প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাউনিয়া ফকির বাড়ি ও কল্যাণপুর গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। স্থানীয় প্রসাশন নদী ভাঙন রোধে এখনও কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় তীরবর্তী বাসিন্দরা নানা পন্থায় বাঁশের বেড়া বেঁধে ভাঙন ঠেকাতে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী ইনকিলাবকে জানান, ভাঙন এলাকা পরিদর্শন শেষে তা প্রতিরোধের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। উপজেলার সাবেক আওয়ামী লীগ এমপি একে ফজলুল হক জানান, প্রতি বছরই কতিপয় বালুদস্যু নদীর তীর ঘেঁষে অবৈধভাবে বালু কাটায় এ বছর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন