শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শুঁটকি উৎপাদন উৎসব

সাগরে মাছ ধরা পড়ছে কম আনোয়ারায় দাম একটু বেশি

নূরুল আবছার তালুকদার, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) থেকে | প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

বঙ্গোপসাগরে চলছে মাছ ধরার ভরা মৌসুম। গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে ব্যস্ত উপক‚লীয় আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের কয়েক শ’ জেলে। জালে ধরা পড়া সমুদ্রের ছোট-বড় চিংড়ি মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছগুলো এসে জমা হয় ডাঙায়। কাঁচা মাছ শুকিয়ে শুটকি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মহালের আড়তদার ও শ্রমিকরা। তবে, সাগরে মাছ ধরা পড়ছে কম। এজন্য এবার জেলেদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।
জানা যায়, রায়পুর ইউনিয়নের উঠান মাঝি ঘাট এলাকায় ২ কিলোমিটার সৈকত জুড়ে চলছে শুটকি শুকানোর উৎসব। শুটকি শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা। এ শুটকি দেশ পেরিয়ে রফতানি হচ্ছে দেশের বাইরেও। এতে করে বাড়ছে বৈদেশিক আয়ও।
সরেজমিনে জানা যায়, বঙ্গোপসাগরে পাতানো ভাসমান ও টং জালে আহরিত সামুদ্রিক বিভিন্ন প্রজাতির মাছ জেলেদের নৌকা থেকে উঠানো হচ্ছে। সেখানে জেলেদের কাছ থেকে পছন্দের মাছগুলো কিনে মহালে নিয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। এসব মাছ প্রথমে মহালে সংরক্ষণ করা হয়। সেখানে চিংড়ি ও ফাইস্যা জাতীয় মাছগুলো বিছানো পলিথিনে ছিটিয়ে শুকানো হয়। উৎপাদিত শুঁটকিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- লইট্যা, ছুরি, ফাইস্যা, চইক্যা, পোয়া ও চিংড়িসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। রায়পুর ইউনিয়নের গলাঘাটার ঘাট থেকে বার আউলিয়া পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চলছে শুটকি শুকানোর কাজ। এতে শতাধিক নারী-পুরুষ শুটকি শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
তবে, সাগরে মাছ ধরা পড়ছে কম, তাই এবার জেলেদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এমনটা জানিয়ে পেকুয়ার রাজাখালীর ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রিদোয়ান বলেন, এখানকার উৎপাদিত শুটকি স্বাদে ও মানে প্রসিদ্ধ হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রির জন্য নেয়া হয়। স্থানীয় খুচরা বাজারে লইট্যা ৪শ’ থেকে ৫শ’, ফাইস্যা ৩শ’ ৫০ থেকে ৪শ’ ৫০, ছুরি ৭শ’ থেকে ৯শ’ ৫০, বড় চিংড়ি (চাগাইছা) ১৩শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ৮ জনের নিজস্ব অর্থায়নে গহিরার চরে শুটকি উৎপাদনের জন্য একটি মহাল তৈরি করেছি। প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ কেজি সামুদ্রিক মাছের শুটকি উৎপাদিত হচ্ছে ওই মহালে। কোনো ধরণের কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত হচ্ছে। দুই কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতে চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, বাঁশখালী ও স্থানীয়সহ প্রায় ৪০-৫০ জন ব্যবসায়ী রয়েছে। এতে ৪শ’ শ্রমিক কাজ করছেন। তবে সমুদ্র থেকে মাছ ধরাও শুটকি শুকানোর কাজে নিয়োজিত আছে প্রায় ৫ শতাধিক পরিবারের লোকজন।
শুটকি শুকানো কাজে নিয়োজিত কিশোরি সুমাইয়া আকতার বলেন, এখানে আমরা প্রতিদিন শুটকি শুকানোর কাজ করছি। গত বছর আমাদেরকে ৫শ’ টাকা করে দিলেও এবার সাগরে তেমন মাছ ধরা পড়ছে না, তাই কাজের তেমন চাপ নেই। মজুরি ২শ’ টাকা করে দিচ্ছে।
গহিরা এলাকার জেলে মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, গত বছরের তুলনাই সাগরে এবার মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। জালে কম ধরা পড়ছে। তাই দামও একটু বেশি। এক টুকরি ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা ধরে আমরা বিক্রি করছি। আমরা সমুদ্র থেকে মাছ ধরে মাঝারি আকারের নৌকায় করে নিয়ে এসে বিভিন্ন জাতের মাছ এক সঙ্গে বিক্রি করি।
আনোয়ারা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রাশিদুল হক বলেন, অন্যান্য বছরের মতো এবারও উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নে শুটকির উৎপাদন শুরু হয়েছে। এ কাজে স্থানীয় লোকজন ও বিভিন্ন উপজেলার শ্রমিক ব্যবসায়ীরা মাছ ধরা থেকে শুরু করে শুকানো কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। জেলে ও ব্যবসায়ীরা যাতে নির্বিঘেœ ব্যবসা করতে পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। আনোয়ারা উপক‚লে প্রায় ৩৫টি মহালে প্রচলিত নিয়মে শুটকি উৎপাদন করা হচ্ছে। বিষমুক্ত শুটকি উৎপাদনের ক্ষেত্রে জেলেদের সচেতনতামূলক পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ডিডিটি পাউডার বা কীটনাশক না মেশালে শুটকির প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যাবে। এখানকার শুটকি দেশের বাইরে রফতানি হচ্ছে। প্রকৃত স্বাদ ধরে রাখতে যাতে কোনো ধরণের ডিডিটি পাউডার বা কীটনাশক না মেশাতে না পারে দিকেও নজর রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Azad mullah ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ৫:৫৫ পিএম says : 0
আমাদের দেশের সাসত অধিদপ্তর কে অনুরোধ করব যাহাতে ঐ সুটকি ব্যবসায়ীরা কোনো রকম অসাস্থা কর কোনো কিছু না মিলিয়ে ভেজাল মুক্ত সুটকি তৈরি করে এতে যেন পর্যাপ্ত পরশিককন দেওয়া হয়
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন