শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

কক্সবাজারে পর্যটকদের পছন্দ এখন শুঁটকি

কক্সবাজার থেকে জাকের উল্লাহ চকোরী | প্রকাশের সময় : ২৮ অক্টোবর, ২০২১, ৭:১০ পিএম | আপডেট : ৭:১২ পিএম, ২৮ অক্টোবর, ২০২১

কক্সবাজার পর্যটন নগরী হওয়ায় দেশিবিদেশি পর্যটকের কাছে শুঁটকির চাহিদা দিনদিন বাড়ছে। তারা ফিরে যাওয়ার সময় পর্যটন পণ্য হিসেবে শুঁটকি নিয়ে থাকে।

গত সপ্তাহে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক মতবিনিময় সভায় শুঁটকিকে পর্যটন পণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তারা নিরাপদ শুঁটকি উৎপাদনের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। পর্যটন পণ্য শুঁটকি গণ্য।
খাবার তালিকায় ভোজন রসিকদের কাছে শুঁটকিকে সুস্বাদু হিসেবে রাখা হয়।
শুঁটকির আাচার ও পথ্য হিসেবে ব্যবহারে দিনদিন সুনাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বাস্থ্যসচেতন ভোক্তারা দিন দিন আকৃষ্ট হচ্ছেন অর্গানিক শুঁটকির প্রতি। লবণ-বিষ ও কেমিক্যালমুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত এবং সুস্বাদু এ শুঁটকির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
ভোক্তাদের চাহিদামত প্যাকেজিং করে বাজারজাত করা হয় স্বাস্থ্যসম্মত এ শুঁটকি।
জানাযায়, উৎপাদনের কোনো পর্যায়েই লবণ-বিষ-ফরমালিন অথবা অন্যান্য ক্ষতিকর কেমিক্যালের ব্যবহার করা হয় না। তাই মাছের প্রাকৃতিক স্বাদ ও মান বজায় থাকে।
সুস্বাদু ও মানসম্মত এ শুঁটকি ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে দেশ-বিদেশের পর্যটক ও ভোক্তাদের মাঝে। বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত দক্ষ কর্মী দ্বারা কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে উৎপাদিত হচ্ছে সামুদ্রিক লইট্টা, ছুরি, সুরমা, রূপচান্দা, কালিচান্দা, ফইল্লা, চিংড়ি ও ফাইস্যা মাছের শুঁটকি।

কোনো ধরনের রাসায়নিক ছাড়াই, কেবলমাত্র সূর্যের আলোয় সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদন করতে শুরু করেন লইট্যা, ছুরি, চিংড়ি, রূপচাঁদা, টুনা, মলাসহ অন্তত ২২ প্রজাতির মাছের শুঁটকি। আর এর ভেতর দিয়ে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও পুষ্টি চাহিদা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে চেষ্টা করেন শুঁটকি থেকে মানুষের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে।
অল্প কিছুদিনের মধ্যেই স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে প্রস্তুত ও ভ্যাকুয়াম পদ্ধতিতে অর্গ্যানিক শুঁটকির সুনাম ছড়িয়ে পড়ে দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও। ‘শুঁটকি বর্তমানে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিওএফপি) ছাড়াও আমেরিকা ও কানাডাতেও রপ্তানি হচ্ছে।
অর্গ্যানিক শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রসঙ্গে উদ্যোক্তারা বলেন, সচরাচর পচনরোধে শুঁটকিতে কীটনাশক ও ওজন বাড়াতে লবণ ও বালু ব্যবহার করা হয়। কিন্তু পিউরিটির শুঁটকিতে এসব করা হয় না। শতভাগ স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে আমরা কেবলমাত্র সূর্যের তাপে শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। এসময় শুঁটকির চাংগুলো প্লাস্টিক দিয়ে ঘেরা থাকায় মশা-মাছিও বসতে পারে না। অর্গানিক উপায়ে উৎপাদন করা হচ্ছে শুঁটকি। শুকানোর পর শুঁটকি উন্নত প্রযুক্তির ভ্যাকুয়াম পদ্ধতিতে প্যাকেটজাত করা হয়। প্যাকেটের সময় ভেতরে অক্সিজেন থাকলে পোকা বা জীবাণু জন্ম নেওয়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু পিউরিটির শুটকিতে সে ঝুঁকি নেই। এছাড়া এতে করে শুঁটকি দীর্ঘদিন সতেজও থাকে। এ কাজে কারিগরী সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। ‘
মাছ সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণ করা হয় কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম ফিশারি ঘাট থেকে বিভিন্ন সামুদ্রিক কাঁচা মাছ সংগ্রহের মাধ্যমে। জাতিসংঘের খাদ্য বিষয়ক সংস্থা প্রতি মাসে হাজার হাজার কেজি শুঁটকি সংগ্রহ করে। সেসব শুঁটকি কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। সাধারণ উপায়ে উৎপাদিত এক কেজি ছুরি মাছের শুঁটকির দাম আটশ’ টাকা হলে এক্ষেত্রে দাম পড়ে প্রায় দ্বিগুণ, অর্থাৎ ১৬শ’ টাকা। প্রতি কেজি লইট্টা ২ হাজার, মলা ১ হাজার ও লাখ্যা মাছের শুঁটকির দাম পড়ে ৪ হাজার ৮০০ টাকার মতো।
দামের ব্যাপারে ২০০ গ্রামের একটি ছোট লইট্টার প্যাকেটেই ৪০ থেকে ৪২টি মাছ ধরে, অন্যদিকে সাধারণভাবে উৎপাদিত লইট্টার ৫০০ গ্রামের বড় প্যাকেটেও ধরে একই সাইজের ৪০ থেকে ৪৫টি শুঁটকি। প্রায় সব মাছের ক্ষেত্রেই এমনটি ঘটে। ফলে হিসেব মেলালে দামেও খুব একটা তারতম্য থাকে না। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, অর্গানিক শুঁটকি নিরাপদ।
জাকের উল্লাহ চকোরী

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন