নুরুল আলম বাকু, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে
দামুড়হুদায় মানা হচ্ছে না “পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০”। গত বছরের শেষের দিকে পণ্যে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার নিশ্চিত করতে পণ্য বাজারজাতকরণে প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। সেই সঙ্গে এ আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার ফলে কিছু দিন বন্ধ থাকার পর আবারও আগের মতো চাল, চিনি, সারসহ নানা পণ্য বাজারজাতকরণে পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার শুরু হয়েছে। সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে একই চিত্র। বর্তমানে সংশ্লিষ্টদের নজরদারি না থাকায় পরিবেশ রক্ষায় এ আইন তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। জানা যায়, গত বছরের মাঝামাঝি দেশের প্রধান অর্থকরী ফসল পাটের অতীত গৌরব ফিরিয়ে এনে পরিবেশবান্ধব দেশ গড়তে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশবিরোধী প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে ১ ডিসেম্বর ২০১৫ থেকে “পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০” কার্যকর করা হয়। সরকার পরিবেশ রক্ষায় প্রাথমিকভাবে ছয়টি পণ্য ধান, চাল, গম, ভুট্টা, চিনি ও সার বাজারজাতকরণে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর প্লাস্টিকের ব্যাগের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যাগ ব্যবহারের প্রতি বাধ্যবাধকতা আরোপ করে। পাশাপাশি এ আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা শুরু হয়। আইন চালুর প্রথম দিকে এ উল্লিখিত ছয়টি পণ্যের মধ্যে চারটি পণ্য বাজারজাতকরণে প্লাস্টিক ব্যাগের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ ব্যবহার শুরু হলেও আজ পর্যন্ত কোনো সরকারি বা বেসরকারি মিলের উৎপাদিত চিনি ও সার বাজারজাতকরণে পাটের ব্যাগ ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। আগের মতো প্লাস্টিকের ব্যাগেই এসব পণ্য আসছে বাজারে। গত বছর এ আইনটি চালুর প্রথম দিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন হাটেবাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে পণ্য বাজারজাতকরণে পাটের ব্যাগের পরিবর্তে প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের দায়ে আইন অমান্যকারীদের জরিমানা করা হয়। তাতে প্রশাসনের এ অভিযানকে সাধুবাদ জানায় অনেকে। সেই সঙ্গে পরিবেশবাদীসহ সাধারণ মানুষ পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ হবে বলে আশ্বস্ত হয়েছিল। কিন্তু কিছু দিনের মাথায় আবারও এসব পণ্যে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার শুরু হওয়ায় আশাহত হয়ে পড়েছে। এ ছয়টি পণ্যের পর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য পণ্য বাজারজাতকরণেও প্লাস্টিকের ব্যাগের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা আরোপ করার কথা বলা হলেও আজ পর্যন্ত তা করা হয়নি। এছাড়া পলিব্যাগের বিকল্প হিসেবে পাট, কাগজ ও কাপড়ের ব্যাগ চালুর সরকারি সিদ্ধান্তও মানা হচ্ছে না। ফলে পলিথিনেরও অবাধ এবং ব্যাপক ব্যবহার অব্যাহত রয়েছে আগের মতোই। ধান, চাল, গম, ভুট্টা, চিনি ও সার ছাড়াও বর্তমানে পোল্ট্রি ফিড, সিমেন্ট, আটা, ময়দাসহ অসংখ্য পণ্য বাজারজাতকরণে ব্যাপকহারে প্লাস্টিকের ব্যবহার হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রেও বাধ্যবাধকতা আরোপ করে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর প্লাস্টিক ব্যাগের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যাগ ব্যবহার নিশ্চিত করে দেশের প্রধান অর্থকরী ফসল পাটের অতীত গৌরব ফিরিয়ে আনা ও সেই সঙ্গে পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও সবুজ সংকেতের আশা করা যায় বলে মনে করছেন পরিবেশবাদীরা। এ ব্যাপারে জানতে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কথা না হওয়ায় কিছু জানা সম্ভব হয়নি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন