রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

সেবাবঞ্চিত উপকূলীয় রোগীরা

জনবল সঙ্কটে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

আবু কওছার, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) থেকে | প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

জনবল সঙ্কটে ভুগছে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীর ২৪৬টি পদের মধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ১৩ জন, সিনিয়র স্টাফ নার্স ৭ জন, ৩য় শ্রেণির কর্মচারী ৩৭ জন, ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী ৮ জনসহ সর্বমোট ৬৮টি পদই দীর্ঘদিন শূন্য রয়েছে। এতে করে উপকূলীয় অঞ্চল শ্যামনগরের প্রায় সোয়া চার লাখ মানুষ পর্যাপ্ত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সেবামূলক এ প্রতিষ্ঠানের সুফল ভোগ করতে পারছেন না তারা। যে কারণে, অতিদ্রুত জনবল সঙ্কট নিরসন করে প্রান্তিক পর্যায়ে সেবা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন ভূক্তভোগী চিকিৎসা বঞ্চিত সাধারন জনগন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অফিস সূত্রে জানা যায়, বারটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলায় প্রায় সোয়া চার লক্ষ মানুষের বসাবস। যার মধ্যে নয়টি ইউনিয়ন নদীবেষ্টিত। জীবন জীবিকার তাড়নায় লবন পানির সাথে সংগ্রাম করে দিনাতিপাত করা এখানের নিত্য দিনের চিত্র। অধিকাংশ এলাকাতে সুপেয় মিষ্টি পানির প্রচন্ড আকাল। যার কারণে পেটের পীড়া, খোস-পাচড়াসহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এখানকার অধিকাংশ জনগোষ্টি। শিশু ডাযরিয়া, নিউমোনিয়াসহ শিশুরা নানারকম জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আইলা, বুলবুল ও আম্পান বিধ্বস্ত উপক‚লীয় এ অঞ্চলের অধিকাংশ জনগোষ্টি দারিদ্র সীমার নিচে বসাবস করে। যার ফলে এ জনগোষ্টি চিকিৎসা সেবার লক্ষ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভীড় জমায়। কিন্তু এখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও জনবল না থাকায় বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন অসহায় রোগীরা।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা যায়, অত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নিত হলেও চিকিৎসক ও জনবল বৃদ্ধি পায়নি। বাড়েনি সেবার মান। জুনিয়র কন. (সার্জারি) ১জন, জুনিয়র কন. (মেডিসিন) ১ জন, জুনিয়র কন. (এ্যানেসথেসিয়া) ১ জন, জুনিয়র কন. (শিশু) ১ জন, জুনিয়র কন. (গাইনী) ১ জন, জুনিয়র কন. (আর্থো) ১ জন, জুনিয়র কন. (চর্ম ও যৌন) ১ জন, জুনিয়র কন. (চক্ষু) ১ জন, জুনিয়র কন. (ইএনটি) ১ জন, জুনিয়র কন. (কার্ডিও) ১জন, সহকারী সার্জন (ইউনিয়ন) ২ জনসহ মোট ১৩ জন চিকিৎকের সঙ্কট থাকায় অধিকাংশ রোগীদের জেলা সদরে স্থানান্তর কারা হচ্ছে। এছাড়াও সিনিয়র স্টাফ নার্স ৭জন, ফার্মাসিস্ট, স্টোর কিপার, চিকিৎসা সহকারী মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট, জুনিয়র ম্যাকানিক, নিরাপত্তাপ্রহরী, আয়া, ওয়ার্ড বয়সহ সর্বমোট ৬৮ পদ শূন্য রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হলেও এখানে প্রতিনিয়ত ভর্তি থাকেন শতাধিক রোগী। যার ফলে খাদ্য ও হাসপাতালের বেড সঙ্কটে ফ্লোর ও বারান্দাতে অবস্থান করে অসংখ্য রোগীরা। এ বিষয়ে নার্স সুপারভাইজার লতা বলেন, আমরা হাসপাতালের নিয়ম ও সিরিয়াল মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি। যা মেনে নিতে কষ্ট পোহাতে হয় হতদরিদ্র অসহায় রোগীদের। আল্ট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি ও এক্সরে মেশিন বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে দীর্ঘদিন। অপারেশনের থিয়েটরের গুরুত্বপূর্ণ অটি লাইটটি নষ্ট। নষ্ট হয়ে পড়ে আছে ফটোথেরাপি মেশিন, নবজাতকের বেবি ইনকিউরেটার মেশিন, জিএ মেশিন ডায়াথেরাপি মেশিনসহ বøাডব্যাঙ্ক রেফ্রিরেজাটর। পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদী না থাকায় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে ডেন্টাল ইউনিট। পুরাতন কমপ্লেক্স ভবনের ছাদে বিভিন্ন স্থানে ফাটল লক্ষ্য করা গেছে। যেকোন মুহূর্তে ছাদ ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এ জনবল সঙ্কটে চিকিৎসকগণ রোগীদের প্রকৃত সেবা বা পরামর্শ দিতে হিমসিম খাচ্ছেন। তাছাড়া প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় স্বাস্থ্য সেবার বিভিন্ন কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন এ অঞ্চলের হতদরিদ্র অসহায় রোগীরা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. অজয় কুমার সাহা ইনকিলাবকে জানান, ভবন নির্মাণের জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর আবেদন জানিয়েছি। পাশাপাশি পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবারহের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। আমরা রোগী পর্যাপ্ত সেবার দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, পর্যাপ্ত জনবল, চিকিৎসায় ব্যবহৃত সরঞ্জামাদীর ব্যবস্থা করে, উন্নত চিকিৎসা সেবা পেতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে চিকিৎসা বঞ্চিত ভূক্তভোগী মহল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন