শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শান্তি প্রতিষ্ঠার কার্যকর ফর্মুলা ইসলামেই রয়েছে খুৎবার বয়ানে পেশ ইমাম

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:১২ পিএম

ইসলামের বিধানসমূহ শতভাগ নির্ভুল এবং ন্যায়-নিষ্ঠার উপর প্রতিষ্ঠিত। ইসলামে বাড়াবাড়িও নেই, আবার শৈথিল্য প্রদর্শনেরও সুযোগ নেই। অশান্ত বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার কার্যকর ফর্মুলা একমাত্র ইসলামের নিকটেই রয়েছে। নগরীর বিভিন্ন মসজিদে আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম ও খতিবরা এসব কথা বলেন। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের মধ্যদিয়ে মসজিদগুলোতে জুমার নামাজে মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়। মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুর আজমেও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, হযরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। এমতাবস্থায় এক আনসারী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে তাকে সালাম দিলো। অতঃপর বললো, হে আল্লাহর রাসুল! মুমিনদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম কে? তিনি বলেন, স্বভাব-চরিত্রে তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অধিক উত্তম। সে পুনরায় জিজ্ঞেস কররো, মুমিনদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান কে? তিনি বলেন, তাদের মধ্যে যারা মৃত্যুকে অধিক স্মরণ করে এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য উত্তমরূপে প্রস্তুতি গ্রহণ করে, তারাই সর্বাধিক বুদ্ধিমান। ইবনে মাজাহ হাদীস নং(৪২৫৯) ।

অপর হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি যে নিজের নফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের জন্য কাজ করে। আর নির্বোধ ও অকর্মন্য সেই ব্যক্তি যে তার নফসের দাবির অনুসরণ করে এবং আল্লাহর নিকট বৃথা আশা করে। ইবনে মাজাহ হাদীস নং(৪২৬০)। সুতরাং পরকালের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে আমাদের সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে হবে।

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, কোন এক ব্যক্তিকে রাসুল (সা.) উপদেশ দেয়ার সময় বললেন, তুমি পাঁচটি বিষয়ের পূর্বে পাঁচটি বিষয়কে গুরুত্ব দাও। (১) বার্ধক্য আসার পূর্বে তোমার যৌবনে গুরুত্ব দাও (২) অসুস্থতার পূর্বে তোমার সুস্থতাকে গুরুত্ব দাও (৩) দারিদ্রতা আসার আগে তোমার সচ্ছলতাকে গুরুত্ব দাও (৪) তোমার ব্যস্ততার পূর্বে তোমার অবসরতার প্রতি গুরুত্বারোপ করো (৫) এবং তোমার মৃত্যু আসার আগেই তোমার জীবনের গুরুত্ব দাও। মুসতাদরিক ৭৮৪৬। আল্লাহ আমাদের সকলকে পরকালের প্রস্তুতি গ্রহণ করার তৌফিক দান করুন। আমীন!

ঢাকার ইসলামবাগ বড় মসজিদের খতীব শাইখুল হাদীস মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী জুমার খুৎবাপূর্ব বক্তব্যে বলেছেন, ইসলামী শরীয়ত ও মানবরচিত আইনের মধ্যে তেমনই পার্থক্য যেমন পার্থক্য স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে। আল্লাহ হলেন "আহকামুল হাকিমীন" অর্থাৎ শাসকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম শাসক। তিনি হলেন "আরহামুর রাহিমীন"অর্থাৎ দয়াবানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম দয়াবান। সুতরাং আল্লাহ প্রদত্ত শরীয়তের সাথে মানবরচিত মতাদর্শের তুলনা করা নিতান্তই ভ্রষ্টতা ও মূর্খতা। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ইসলাম হচ্ছে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ধর্ম। এতে কোনরূপ বক্রতা নেই। নেই কোন প্রকার অস্পষ্টতা, বরং ইসলামের বিধানসমূহ শতভাগ নির্ভূল এবং ন্যায়-নিষ্ঠার উপর প্রতিষ্ঠত। তাতে বাড়াবাড়িও নেই, আবার শৈথিল্য প্রদর্শনেরও সুযোগ নেই। অশান্ত বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার কার্যকর ফর্মূলা একমাত্র ইসলামের নিকটেই আছে। তাই যে কোন সঙ্কট সমাধানের জন্য আমাদেরকে ইসলামেরই শরণাপন্ন হতে হবে। অন্য কারো নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন "যে ব্যক্তি আমার যিকির থেকে অর্থাৎ আমার বিধান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তার জীবন ও জীবিকা হবে সঙ্কীর্ণ। আর কিয়ামতের দিন আমি তাকে উঠাবো অন্ধ অবস্থায়। সে তখন বলবে হে আমার প্রতিপালক! তুমি কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালে? আমি তো চক্ষুষ্মান ছিলাম। আল্লাহ বলবেন, এভাবেই তোমার কাছে আমার আয়াতসমূহ এসেছিল কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে, তাই আজ তোমাকেও ভুলে যাওয়া হবে। ( সূরা ত্বহা, আয়াত -১২৪-১২৬)।

মিরপুর বাউনিয়াবাদ ই-বøক বাইতুল মা’মুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, আল্লাহ তায়ালা মানুষকে শ্রেষ্ঠ সম্মান দিয়ে সৃষ্টি করত: প্রত্যেককেই কোন না কোন দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। প্রত্যেকেরই সঠিকভাবে সে দায়িত্ব পালন করা উচিৎ। নচেৎ আল্লাহ প্রদত্ব দায়িত্ব পালন না করার কারণে পরকালে তার জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হওয়ার শাস্তি ভোগ করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, হে ঈমানদারগন ! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর। সুরা : তাহরিম, আয়াত নং-০৬ । রাসুল (সা.) বলেন , সাবধান ! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। প্রত্যেকেই তার অধিনস্থদের ব্যাপারে স্বীয় দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। সহিহ বুখারী। তাই একজন মুসলমান হিসেবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, সর্বাবস্থায় ধর্মীয় রীতি-নীতির যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় পরিমন্ডলে বৈষম্যতা পরিহার করত: বাস্তবতার সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে যতœবান হতে হবে। আল্লাহ সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমীন!

রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদের খতিব মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পরনিন্দা ও গীবতের ইহ ও পরকালীন ক্ষতি বিষয়ে আলোচনায় বলেন, পরনিন্দা ও গীবতের গুনাহ জিনা ও ব্যভিচারের গুনাহর চেয়েও অনেক মারাত্মক। জিনা ও ব্যভিচারের গুনাহ চেয়ে পরনিন্দার গুনাহ বেশি মারাত্মক কেন? এই উত্তর বর্ণিত হাদিসে আছে। হযরত আবু সাঈদ রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) সাহাবায়ে কেরামের সমাবেশে বলেন, গীবত জিনার চেয়েও মারাত্মক। সাহাবায়ে কেরাম অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ এটা কীভাবে সম্ভব ? রাসুল (সা.) উত্তর দিলেন, কারণ কেউ জিনা করার পর তওবাহ করলে আল্লাহ তার তওবাহ কবুল করেন। পক্ষান্তরে গীবতকারীকে আল্লাহ তায়ালা ততক্ষণ মাফ করেন না যতক্ষণ না গীবতকৃত ব্যক্তি তাকে তাকে মাফ করেন। হাদীদ শরীফে এসেছে মেরাজের রাতে নবী করীম (সা.) স্বচক্ষে জাহান্নাম প্রত্যক্ষ করার সময় কিছু হতভাগাদের দেখলেন যারা ধারালো নখ দ্বারা নিজেদের চেহারা ও বুখ বিদীর্ণ করছিল। তাদের সর্ম্পকে হযরত জিবরাঈল বলেন, তারা ঐ সকল মানুষ যারা মানুষের গোশত ভক্ষণ করতো এবং মানুষের সম্মান ইজ্জত নিয়ে খেল তামাশা করতো। বাইহাকী শরীফ। আল্লাহ আমাদেরকে সকল প্রকার গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন। আমীন!

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন