সাম্প্রতিক তীব্র শীত ও ভারী তুষারপাতের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে বসনিয়ায় আশ্রয় নেয়া হাজারো অভিবাসনপ্রত্যাশী। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের জরিপ অনুযায়ী, বসনিয়ায় আশ্রয় নেয়া শরণার্থীর সংখ্যা ৯ হাজারের কাছাকছি। তবে স্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমের দাবি অনুযায়ী, বাস্তবে দেশটিতে এর তিনগুণ বেশি শরণার্থী রয়েছে।
মূলত ইউরোপিয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত কোনো দেশে প্রবেশের লক্ষ্যে তারা ট্রানজিট হিসেবে বসনিয়ায় ঢুকেছছেন। তাদের অনেকে কয়েকবার প্রতিবেশি দেশ ক্রোয়েশিয়া এবং স্লোভেনিয়ার মধ্যদিয়ে ইতালিসহ ইইউভুক্ত অন্যান্য দেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু এ দু'দেশের পুলিশি তৎপরতার কারণে তাদের বাধ্য হয়ে বসনিয়ায় ফিরে আসতে হয়। বর্তমানে তাদের অনেকে রিফিউজি ক্যাম্পগুলোতে ঠাঁই না পেয়ে আশেপাশের খোলা আকাশের নিচে বা বিভিন্ন পরিত্যক্ত ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন। গত কয়েকদিনের তীব্র শীত ও ভারী তুষারপাত তাদের জীবনে বাড়তি দুর্ভোগ যোগ করেছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষযক সংস্থা আইওম, ইউরোপিয়ান কমিশনসহ বিভিন্ন এনজিও বেশ কয়েকবার বসনিয়ার সরকারকে অনুরোধ করেও রিফিউজিদের খাদ্য ও পানিসহ জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধা প্রদানে ব্যর্থ হচ্ছে। এর জের ধরে গত সপ্তাহে বসনিয়ার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় মিউনিসিপ্যালিটি লিপার একটি শরণার্থী শিবির বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আইওএম। লিপার এ শরণার্থী শিবিরে প্রায় ১৪০০ শরণার্থী বসবাস করতেন। তবে গত সপ্তাহে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ফলে এ শরণার্থী শিবিরটি ধ্বংস হয়ে যায়। যদিও তাদের মধ্যে কয়েকশো রিফিউজিকে দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় একটি সেনাক্যাম্পে সাময়িকভাবে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু দেশটির সরকারের বিভিন্ন মহলের মতবিরোধের ফলে এ সিদ্ধান্তও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে বসনিয়ার সার্ব অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে ইতোমধ্যে প্রবল হয়ে উঠছে শরণার্থীবিরোধী মনোভাব। সামগ্রিকভাবে বসনিয়ার সার্ব অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোকে 'রিপাবলিক অব সর্পসকা' নামে ডাকা হয়। গত সপ্তাহে রিপাবলিক অব সর্পসকার বিভিন্ন স্থানে কয়েকশো মানুষ অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভে জড় হন। এ অঞ্চলের স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা আর শরণার্থী গ্রহণে আগ্রহী নয়।
এদিকে ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো করোনাভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভে বসনিয়ায় ক্রমাগত সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়েছে দেশটিতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীরা। বলকানইনসাইটে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, করোনা ঝুঁকির পাশাপাশি অ্যাল্যার্জি, হাইপোথার্মিয়া, ফ্রসবাইটসহ বিভিন্ন ধরণের শীতজনিত রোগের শিকার হচ্ছেন অনেক শরণার্থী।
দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশ বসনিয়া এমনিতে বিভিন্ন অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত। দেশটির মানুষের জীবনযাত্রার মানও ইউরোপের অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেক পিছিয়ে, এর সঙ্গে রয়েছে রাজনৈতিক অচলাবস্থা। তাই শরণার্থীদের কেউই বেশিদিন বসনিয়ায় থাকতে আগ্রহী নয়। অন্যদিকে বসনিয়ার সরকারের পক্ষেও বিভিন্ন জটিলতার কারণে শরণার্থীদের বিষয়ে কার্যকরি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে কোটাভিত্তিকভাবে ইউরোপিয় ইউনিয়নের দেশগুলোকে এসব শরণার্থী গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন