বেআইনিভাবে সার্ব নেতাদের নির্দেশে এক বসনীয় মুসলিম মহিলার বাগানে নির্মাণ করা হয়েছিল একটি খ্রিস্টান অর্থডক্স চার্চ। ১৯৯৫ সালে বসনিয়ার যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরই নিজের জায়গার দখল হারিয়েছিলেন ৭৯ বছর বয়সী ফাতা অর্লোভিচ। এবার দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা আইনি লড়াই জিতে নিজের হারানো বাগানের জমি ফিরে পাচ্ছেন ফাতা। আদালতের নির্দেশে শনিবার বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার সরকার সার্বদের হাতে তৈরি সেই চার্চটি ভেঙে দিয়েছে।
ফাতার আইনজীবী রুসমির কারকিন সোশ্যাল মিডিয়ায় জানান, শনিবার সকাল থেকেই চার্চটি ভেঙে ফেলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ২০১৯ সালে ইউরোপের মানবাধিকার আদালত এক ঘোষণার মাধ্যমে অবৈধ ও বেআইনি চার্চটিকে ভেঙে ফেলার আদেশ জারি করে। আদালত জানায়, আগামী তিন মাসের মধ্যেই এই আদেশের পালন করতে হবে বসনিয়ার সরকারকে।
যদিও বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা কর্তৃপক্ষ এই কাজ করতে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সময় নিয়ে ফেলে।
প্রসঙ্গত, সেব্রেনিকার পার্শ্ববর্তী কোঞ্জেভিচ পোলজে এলাকায় স্বামী ও সাত সন্তানকে নিয়ে বসবাস করতেন ফাতা অর্লোভিচ। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত চলা বসনিয়ার যুদ্ধে তিনি তাঁর স্বামী সাচিরসহ ২২ আত্মীয়কে হারান। এরপর উদ্বাস্তু হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাস করেছেন ফাতা, তবে নিজের বসতভূমিকে কখনই পরিত্যাগ করেননি। আমেরিকায় বসবাসরত সন্তানরা বারবার তাঁকে ডেকে পাঠালেও দেশত্যাগ করেননি ফাতা অর্লোভিচ। বসনিয়ায় যুদ্ধ শেষ হওয়ার কয়েক বছর পর ১৯৯৯ সালে ফাতা নিজের গ্রামে ফিরে দেখেন তাঁর বাগানে একটি চার্চ নির্মিত হয়েছে। এরপরই তিনি আইনি পথে হেঁটে মামলা করেন। অনেকে তাঁকে অর্থের বিনিময়ে মামলা প্রত্যাহারে রাজি করাতে চেয়েও পারেননি। শেষপর্যন্ত ২০১০ সালে ১১ বছর ব্যাপী চলা আইনি যুদ্ধে জিতে যান এই বসনীয় মুসলিম মহিলা। তবে আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়িত হতে সময় লেগে গেল আরও ১১ বছর। ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের রায়ের আগে বসনিয়ার বিজেলজিনা আদালত চার্চটিকে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিলেও সেদেশেরই অপর অংশ রিপাবলিকা সার্পস্কার সুপ্রিম কোর্ট সেই রায়কে নস্যাৎ করেছিল। তাই এতদিন ঝুলে ছিল মামলাটি। অবশেষে ইউরোপীয় আদালতের নির্দেশে বেআইনি চার্চটি ভেঙে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বসনিয়া সরকার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন