শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ

| প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০৭ এএম

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা একযুগ ক্ষমতায় থাকার মাইলফলক অতিক্রম করল আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে যত রাজনৈতিক বিতর্ক থাকুক না কেন, অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়ন পরিকল্পনার অটল বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার মূল কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সত্তরোর্ধ্ব বয়েসী শেখ হাসিনার যুগোপযোগী ও ক্যারিশম্যাটিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব, চারিত্রিক দৃঢ়তা, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা একটি পড়ন্ত-ক্ষয়িষ্ণু রাজনৈতিক দলকে উজ্জীবিত, গতিশীল ও সক্ষম দলে পরিণত করেছে। দলকে টানা দীর্ঘতম সময় ধরে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রাখার একক কৃতিত্ব শেখ হাসিনার। সেই ১৯৮১ সালে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে তিনি প্রথমে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামোকে সুসংহত করেন এবং স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নিজেকে জাতীয় রাজনীতির অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্রে পরিণত করেন। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টে নির্মমভাবে পিতা-মাতাসহ পরিবারের প্রায় সব সদস্যের মৃত্যুর পর থেকে দেশে বৈরী রাজনৈতিক পরিবেশ, বিলুপ্তপ্রায় আওয়ামী লীগকে অন্যতম রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত করা, একুশ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকার পর ১৯৯৬ সালে দলকে পুনরায় ক্ষমতায় নিয়ে আসা, নিজের সুযোগ্য নেতৃত্বের স্বাক্ষর রেখে যাওয়া এবং ৭ বছরের মধ্যে সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগকে দেশের একক রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত করার ইতিহাস এখন গল্পের মতো মনে হয়। এর পেছনে রয়েছে পিতার কাছ থেকে পাওয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বের শিক্ষা এবং কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেকে সময়ের সাথে মানিয়ে নেয়ার মধ্য দিয়ে সংকট উত্তরণের অনুকরণীয় রাজনৈতিক শিক্ষা ও নিরলস চেষ্টা। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং চলমান করোনাভাইরাস মহামারীর কঠিন বাস্তবতার মধ্যেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গত একযুগে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার স্থিতিশীল ধারাক্রম বিশ্বে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মূল্যায়নে গত এক দশকে তৃতীয় বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। এ কৃতিত্ব যতটা না আওয়ামী লীগের, তার চেয়ে বেশি শেখ হাসিনা এবং তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বের। দল, সরকার এবং রাজনীতিতে তিনি ইতোমধ্যে অপরিহার্য একক শক্তিতে পরিণত হয়েছেন। আজ আওয়ামী লীগের টানা ক্ষমতায় থাকার একযুগ পূর্তিতে সে সব ইতিহাসের মূল্যায়ন ও পর্যালোচনার সময়। কঠিন সময় পেরিয়ে দেশকে এগিয়ে নেয়ার অবিস্মরণীয় নেতৃত্বের জন্য এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।

একযুগ আগে রূপকল্প ২০২১ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের পরিকল্পনা সামনে রেখে অষ্টম জাতীয় সংসদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছিল আওয়ামী লীগ। সাত বছরের বিরতির পর ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন দলটি এখন একযুগ অতিক্রম করেছে। গত বছরটি ছিল জাতির পিতা শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী বা ‘মুজিব জন্মশতবর্ষ’। আর এবার স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর উৎসবে মাতবে দেশ। সেই সাথে ২০২১ সালে পদার্পণের মধ্য দিয়ে ঘোষিত রূপকল্প এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের দোরগোড়ায় উপস্থিত আমরা। করোনাভাইরাস মহামারীর সামাজিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতায় আমরা ডিজিটালাইজেশনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অনেকদূর এগিয়ে এসেছি। এ সময়ের মধ্যে দেশকে স্বল্পন্নোত (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে উত্তরণের আশাবাদ থাকলেও ৩ বছর আগেই এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। ২০১৮ সালের ১৫ মার্চ জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নীতি সংক্রান্ত কমিটি (সিডিপি) বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ক্যাটাগরি উত্তরণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকের যে কোনো দুটিতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ তিনটি সূচকেই যথেষ্ট ভালো করে উন্নয়নের গতিধারা অতিক্রম করেছে। গত এক দশকের ধারাবাহিক উন্নয়নের রথযাত্রায় দক্ষিণ এশিয়ার শক্তিশালী অর্থনীতি ভারত ও পাকিস্তানকেও পিছনে ফেলে দিতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। শিক্ষার উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসুরক্ষা, জীবনমানের উন্নয়ন, সামাজিক-অর্থনৈতিভাবে নারীর অংশগ্রহণ এবং উন্নয়ন ও নারী-পুরুষের গড় আয়ুস্কাল বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে এ পার্থক্য নিশ্চিত হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যে অর্থনৈতিক মানদন্ডে দেশকে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে শামিল করা অসম্ভব কোনো ব্যাপার নয়। এর জন্য শুধু প্রয়োজন শেখ হাসিনার মতো সুযোগ্য, বিচক্ষণ ও দৃঢ় নেতৃত্ব। কোনো একক ব্যক্তির ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বে ঝিমিয়ে পড়া এক দলকে রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রে পরিণত করা এবং দেশকে এগিয়ে নেয়ার এমন দৃষ্টান্ত সাম্প্রতিক সময়ে খুঁজে পাওয়া বিরল। দলকে ক্ষমতায় আনা এবং দীর্ঘ একযুগের বেশি সময় ধরে একটানা ক্ষমতায় টিকে থেকে অর্থনৈতিকভাবে দেশকে এগিয়ে নেয়ার নিয়ামক শক্তি ও কৃতিত্ব একমাত্র শেখ হাসিনার। এ কারণে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পোড় খাওয়া নেতারাও এখন স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছেন, আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউ অপরিহার্য নয়। শুধু দলের জন্যই নয়, এখন দেশের জন্যও শেখ হাসিনার নেতৃত্ব অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তবে ‘গ্রেট পাওয়ার বিগেটস গ্রেট রিসপন্সিবিলিটি’ ক্ষমতা যত বেশি এবং নিরঙ্কুশ হয়, নেতৃত্বের দায়-দায়িত্বও তত বেড়ে যায়। দীর্ঘতম সময় ধরে দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতার শীর্ষ আসনে অবস্থানের পর শেখ হাসিনা জাতির জন্য কী কী বিষয় রেখে গেলেন তা একদিন ঐতিহাসিক মূল্যায়নের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।

স্নায়ুযুদ্ধকালের বামপন্থা ঘেঁষা রাজনৈতিকদল আওয়ামী লীগকে একটি মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দলে পরিণত করা এবং আদর্শিক রাজনীতির ক্ষেত্রে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করা শেখ হাসিনার জন্য অনেক বড় সাফল্য। রাষ্ট্রক্ষমতায় শেখ হাসিনার টানা তৃতীয় মেয়াদ ও একযুগ পূর্তির এই সময়ে তাঁর সামগ্রিক অর্জন ও বিচ্যুতির চুলচেরা মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণ হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর যেমন অনেক সাফল্য আছে, তেমনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যর্থতা ও বিচ্যুতিও রয়েছে। প্রায় দেড় দশক আগে শুরু হওয়া বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে শেখ হাসিনা ক্ষমতার দন্ড হাতে নিয়ে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রার গতিকে মন্থর হতে দেননি। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার পেছনে রয়েছে শেখ হাসিনার কৃষিবান্ধব নীতিমালা এবং দেশের কৃষক ও উদ্যোক্তাদের সময়োপযোগী উদ্যোগ। বিদেশে কর্মরত প্রায় এককোটি রেমিটেন্স যোদ্ধা এবং লাখ লাখ গার্মেন্ট শ্রমিক এবং শিল্পদ্যোক্তাদের হাত ধরে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চাকা দীর্ঘ সময় প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার পর বৈশ্বিক করোনাভাইরাস মহামারীর বাস্তবতায় এখন তা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে চলেছে। আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে চীন-ভারতের মতো দেশের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করার সাফল্য শেখ হাসিনার এক বিরল কৃতিত্ব। তবে গত এক দশকেও মালয়েশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য অনাকাক্সিক্ষত জটিলতা ও নিষেধাজ্ঞা দূর করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সহাবস্থান এবং সুশাসন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মতো চ্যালেঞ্জগুলো আগামী দিনের ইতিহাসে শেখ হাসিনার অবস্থান নিশ্চিত করবে। নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও প্রতিকূলতার মধ্যেও শেখ হাসিনার একক নেতৃত্বে দেশ যেভাবে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়েছে তার তুলনা নেই। বিশেষত বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক ঋণচুক্তি বাতিলের পরও পদ্মাসেতুর মতো মেগা প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়নসহ অবকাঠামোখাতে দেশকে আমূল পাল্টে দেয়ার মতো উন্নয়নের কৃতিত্বও শেখ হাসিনার। তাঁর ব্যক্তিগত দৃঢ়তা ও সাহসী নেতৃত্বের কারণেই তা সম্ভব হয়েছে। এখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, নিরপেক্ষ নিবার্চন ব্যবস্থার উপর জনগণের আস্থা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে দেশের মানুষ শেখ হাসিনার কাছে সময়োপযোগী সাহসী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগ প্রত্যাশা করে। দুর্নীতি ও অর্থপাচার রোধ, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধেও শেখ হাসিনার কাছে আরো জোরালো পদক্ষেপ প্রত্যাশা করে দেশের মানুষ। ক্ষমতার একযুগ পূর্তির প্রেক্ষাপটে আমরা শেখ হাসিনার এসব অসমাপ্ত কাজের সফল বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন