শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

শেখ হাসিনার মহৎ উদ্যোগ

| প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০২ এএম

আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অকুণ্ঠ প্রশংসা ও ধন্যবাদ জানাই। তাঁর একান্ত ইচ্ছা ও আন্তরিকতার ফলেই দেশের ভূমিহীন-গৃহহীন ৬৬ হাজার ১৮৯টি পরিবার জমি ও পাকা ঘর পেয়েছে। গত শনিবার ভূমিদান-গৃহদান অনুষ্ঠান উদ্বোধনকালে তিনি যে বক্তব্য রেখেছেন, তাতেও তার সদিচ্ছা, আন্তরিকতা ও সহৃদয়তার প্রতিফলন রয়েছে। তিনি বলেছেন, সবার জন্য নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করাই হবে মুজিববর্ষের লক্ষ্য, যাতে দেশের প্রতিটি মানুষ উন্নত জীবনযাপন করতে পারে। উল্লেখ্য যে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ, যা মুজিববর্ষ হিসাবে ঘোষিত, উপলক্ষে আশ্রায়ণ-২ এর অধীনে ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬৬২টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও পাকা ঘর দেয়ার কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। প্রথম দফায় বর্ণিত সংখ্যক পরিবারকে জমি ও ঘর দেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক দর্শন ও সংগ্রামের মূলে ছিল, বাঙালী জাতির রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকসহ যাবতীয় স্বাধীনতা ও প্রতিষ্ঠা এবং বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণ। দারিদ্রমুক্তি এবং সকলের জন্য খাদ্য বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষাও চিকিৎসার নিশ্চয়তা বিধান ছিল তার দৃঢ় অঙ্গীকার। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা তার পিতার ‘সোনার বাংলা’ গড়ার সোচ্চার ঘোষণা দিয়ে নিরলভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে তাঁর সাফল্য কিংবদন্তিতুল্য। মুজিববর্ষ আমাদের জন্য অবশ্যই উৎসবের বছর। কিন্তু এ বছরের সেরা উৎসব কী? জবাব বঙ্গবন্ধুকন্যাই দিয়েছেন। বলেছেন, দেশের ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষের ঘর দিতে পারার চেয়ে বড় কোনো উৎসব হতে পারেনা। একটু জমি, মাথা গোঁজার একটু ঠাঁই কার না প্রত্যাশা? কিন্তু আমাদের দেশে অনেকেরই তা নেই। ফলে তাদের দু:খ-দুর্ভোগ ও অনিশ্চয়তারও শেষ নেই। এই সর্বপ্রান্তিক, সবচেয়ে গরীব, অসহায় ও দুস্থ মানুষের জমি ও ঘরের ব্যবস্থা করে দেয়ার মতো মহৎ কোনো কর্মসূচী হতে পারেনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মহত্তম কর্মসূচীই নিয়েছেন। তাঁর মহানুভাতার কোনো তুলনা হয় না।

ভূমিহীন-গৃহহীনদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহানুভূতি এবং তাদের পুনর্বাসনে কিছু করার উদ্যোগ ও প্রয়াস নতুন নয়। সেই ১৯৯৭ সালেই, যখনও তিনি প্রধানমন্ত্রী, আশ্রায়ণ কর্মসূচী গ্রহণ করেছিলেন। এই কর্মসূচীর আওতায় ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ২০ হাজার ৫২টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। ২০২০ সালেই ভূমিহীন-গৃহহীন ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬৬২টি পরিবারের তালিকা করা হয়। পর্যায়ক্রমে তাদেরও জমি ও ঘর করে দেয়া হবে দু’ বছরের মধ্যে। আগামী মাসের মধ্যে আরো প্রায় ১ লাখ পরিবার জমি ও ঘর বুঝে পাবে। এর বাইরে ২১ জেলার ৩৬টি উপজেলায় ৪৮টি প্রকল্পের মাধ্যমে আরো ৩ হাজার ৭১৫টি পরিবারকে ব্যারাকে পুনর্বাসিন করা হবে। এসব ব্যারাক নির্মাণ করছে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ। আশ্রায়ণ-২ এর অধীনে যে পাকা ঘর দেয়া হয়েছে তা দুই কক্ষ বিশিষ্ট। দুই শতাংশ জমির ওপর নির্মিত এ ঘরের সামনে রয়েছে ১টি বারান্দা, ১টি টয়লেট এবং একটু খোলা জায়গা। পুনর্বাসিত পরিবারগুলোর জন্য সুপেয় পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবার চিকিৎসা ও সন্তানদের শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বন্দোবস্ত করা হয়েছে। একটা পরিবার যাতে সবদিক দিয়ে নিরাপদ ও নিশ্চিতভাবে জীবনযাপন করতে পারে, তা নিশ্চিত করা হয়েছে। বিশ্বে এ ধরনের কর্মসূচী বা প্রকল্প এই প্রথম। ভূমিহীন-গৃহহীনদের পুনর্বাসন করার এই কর্মসূচী সফল হলে এক্ষেত্রেও বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেলে পরিণত হবে বলে আশা করা যায়।

এ কর্মসূচীর সাফল্যের কোনো বিকল্প নেই। কোনোভাবেই একে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। এর সফলতার মধ্যে লাখ লাখ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের ভবিষ্যত নির্ভর করছে। তাদের জীবনযাপনের সুস্থ্যতা, স্বাভাবিকতা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা রয়েছে এ কর্মসূচীর মধ্যে। অতীতে এ ধরনের কিছু উদ্যোগের কথা আমরা জানি, যা শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। যেমন, রাজধানী থেকে ছিন্নমূল মানুষদের গ্রামে পুনর্বাসনের উদ্যোগ সফল হয়নি। যাদের গ্রামে পুনর্বাসন করা হয়েছিল, তারা জমি ও ঘরবাড়ি হারিয়ে কিংবা হস্তান্তর করে আবার আগের জীবনে ফিরে গেছে। এক্ষেত্রেও তেমন আশংকা উড়িয়ে দেয়া যায় না। যারা জমি ও ঘর পেয়েছে তারা যাতে জমি ও ঘর না হারায় তার ব্যবস্থা নিতে হবে। জমি ও ঘর বিক্রী বা হস্তান্তর সম্পূর্ণ রহিত করতে হবে। যারা জমি-ঘর পেয়েছে, তাদেরই সেখানে থাকতে হবে, অন্য কারো কাছে তা ভাড়াও দেয়া যাবে না। বিষয়টি নিয়মিত নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। সত্য বটে, যারা ভূমিহীন-গৃহহীন তাদের নিশ্চিত কোনো কর্মসংস্থান নেই। যে যখন যা পারে, সে তখন তাই করে-এই ভিত্তিতে তারা চলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তাদের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করা গেলে তাদের ঘরবাড়িতে বা জমিতে ধরে রাখা যাবে না। সেখানে কর্মের সন্ধান পাবে, সেখানেই চলে যাবে। কাজেই, সরকারকে পুনর্বাসিত পরিবারগুলোর সদস্যদের আয়- রোজগারের একটা ব্যবস্থাও করে দিতে হবে। এটা ঠিক, যারা নতুন ঘর পেয়েছে, তারা কখনোই এধরনের ঘরের কল্পনা করেনি। তাদের পক্ষে প্রথম অবস্থায় ঘর মেনটেইন করে বসবাস করা কিছুটা কঠিন হয়ে উঠতে পারে। তবে প্রশিক্ষণ পেলে আর অসুবিধা হবে না। ঘরবাড়ি-টয়লেট-আঙিনা অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এজন্য তাদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। ভবিষ্যতে যারা জমি ও ঘর পাবে তাদের ক্ষেত্রেও একটা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে নিয়মিত তদারকি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পুনর্বাসন স্থায়ী হোক, পুনবার্সিত পরিবারগুলোর আর্থ-সামাজিক উন্নতি হোক, স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে তাদের জীবন অতিবাহিত হোক, এটাই আমাদের একান্ত প্রত্যাশা।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন