শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে প্রচারণা

দ্বিতীয় ধাপে পৌরসভা নির্বাচন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

দ্বিতীয় ধাপে আগামী ১৬ জানুয়ারী পৌরসভা নির্বাচনের আর মাত্র ৪দিন বাকি। শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে প্রচার-প্রচারণা। প্রার্থীরা ফিরিস্তি দিয়ে যাচ্ছেন উন্নয়নের ফুলঝুরি। বড় দলগুলোর প্রচারণা আর কৌশল ভোটারদের মধ্যে সৃষ্টি করেছে প্রাণচাঞ্চল্য, জমে উঠেছে নির্বাচন। দিনাজপুর থেকে মাহফুজুল হক আনার ও আদমদীঘি (বগুড়া) থেকে মো. মনসুর আলী জানিয়েছেন শেষ মুহূর্তের নির্বাচন পরিস্থিতি। 

২য় ধাপে আগামী ১৬ জানুয়ারী দিনাজপুরের তিনটি পৌরসভার নির্বাচন জমে উঠেছে। দিনাজপুর পৌরসভার মেয়রের আসনে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থী বসতে না পারার বেদনা নিয়ে এবার বেশ জোরেশোরেই মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। পর পর দু’বার মেয়রের আসনে থাকা বিএনপি এবারও মেয়রের চেয়ারটি নিজেদের দখলে রাখার লক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে জাতীয় পার্টি এবার এককভাবে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মাঠে নামায় নির্বাচনে কিছুটা ভিন্নমাত্রা যোগ হয়েছে।
এছাড়াও রয়েছে সিপিবি’র কাস্তে প্রতীকের প্রার্থী। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়া এক প্রার্থী কার্যত নির্বাচন থেকে বিরত রয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই সাজসাজ রব পড়ে গেছে। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো পৌর এলাকা। চলছে প্রার্থীদের উঠান বৈঠক। রয়েছে উন্নয়নের ফুলঝুরি। এবারে সবচেয়ে লক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে দলে দলে মহিলাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বাড়ী বাড়ী লিফলেট নিয়ে ভোট প্রার্থনা করা। যা ইতোপূর্বের সকল রেকর্ডকে ভঙ্গ করেছে বলেই পৌরবাসীরা মন্তব্য করেছেন। বড় দলগুলোর প্রচারণা আর কৌশল সাধারণ মানুষের মধ্যেও প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করেছে নির্বাচনের আগের রাতে অথবা নির্বাচনের দিন সহিংসার বিষয়ে। তবে এখন পর্যন্ত নির্বাচনী আচরণ বিধির অভিযোগ উঠলেও সেরকম কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটনা ঘটেনি।
প্রথম দফায় গত ২৮ ডিসেম্বর দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটি বড় দলের ভরাডুবি কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলেছে দিনাজপুরসহ বীরগঞ্জ ও বিরামপুর পৌরসভা নির্বাচনে। ফুলবাড়ী পৌরসভা নির্বাচন হয়েছে ইভিএম পদ্ধতিতে। এবার বীরগঞ্জে ইভিএম পদ্ধতিতে নির্বাচন হলেও দিনাজপুর সদর ও বিরামপুরে ভোট হবে ব্যালটে। সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান নিজ এলাকা ফুলবাড়ী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ঠাই হয়েছে তৃতীয় স্থানে। বিএনপি চতুর্থে। তবে বিএনপি’র বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা বিএনপি’র সভাপতির ভাই জয়লাভ করায় বড় দলগুলির স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।
দিনাজপুর পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একেবারে নতুন মুখ হিসেবে পরিচিত স্থানীয় যুবলীগ নেতা রাশেদ পারভেজ মনোনয়ন পেয়েছে। বিগত দিনের সার্বিক তথ্য বিবেচনায় রেখে এবার সরাসরি শেখ হাসিনার সদয় দৃষ্টি পেয়েছেন বলেই প্রার্থী মত প্রকাশ করেছে। যেহেতু সরাসরি নেত্রীর মনোনীত প্রার্থী তাই স্থানীয় আওয়ামী লীগের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা কাজ করছে।
অপরদিকে বর্তমান সরকারের ক্ষমতাকালীন সময়ে জাতীয় নির্বাচন থেকে স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীদের নাস্তানাবুদ অবস্থা। সেই অবস্থায় একেবারে তরুণ নেতা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম নির্বাচিত হয়ে তাক লাগিয়ে দেন হেভিওয়েট নেতাদের। দ্বিতীয়বারেও সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত হোন তিনি। পর পর দু’দফায় মেয়রের চেয়ারে থাকা দিনাজপুর পৌর এলাকার বেহাল অবস্থা সকলের দৃষ্টি কেড়েছে। রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা পৌরবাসীকে নিদারুণ কষ্টে ফেলেছে। তবে ক্ষমতাসিন দলের অর্থ বরাদ্দে অসহযোগিতা মেয়রের অভিযোগ সাধারণ মানুষ ভালভাবেই কবুল করেছে। এছাড়াও ক্ষমতাসীন দলের একজন শীর্ষ স্থানীয় নেতা ও প্রশাসনের দিক থেকে বিএনপি মেয়রের উপর সদয় দৃষ্টি সচেতন সকল মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সবকিছু মিলিয়ে এবার দিনাজপুর পৌর নির্বাচন আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও জাতীয় পার্টির জন্য অগ্নি পরীক্ষাও বলা চলে। আর এ কারণে প্রচার প্রচারণার দিকটিও বেশ লক্ষনীয় হয়ে উঠেছে।
স্বাধীনতা পরবর্তীকালে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়লাভ করতে না পারার বিষয়টিকে সামনে এনে পৌর এলাকার বেহাল দশার কথা তুলে ধরছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী রাশেদ পারভেজ। গত দুইবারে বিভিন্ন বাধা ও প্রতিক‚লতার মধ্যেও সর্বোচ্চ ভোটে জয়লাভ করা বর্তমান মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম এবার আরো বেশী জনসমর্থনের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন বিভিন্ন প্রতিক‚লতার মাঝেও পৌর এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ করার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার সহযোগিতায় শেষ পর্যন্ত বরাদ্দ পাওয়া গেছে। সকল দলের সাধারণ মানুষের নীরব সমর্থন রয়েছে তার প্রতি। এবারও তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও ক্ষমতাসীন দলের সাথে সমঝোতার কারণে স্থানীয় নির্বাচনে সেভাবে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি জাতীয় পার্টির। এবার লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী হিসাবে জোরেশোরে মাঠে নামায় সমর্থকদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।
অন্যদিকে , বগুড়ার সান্তাহার পৌরসভা নির্বাচনে শেষ মুহূর্তে মেয়র কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীদের প্রচারণা জমে উঠেছে। নির্ঘুম প্রচারণায় ব্যস্ত হয়ে উঠেছে সব প্রর্থী । এ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ৩ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৩ জন এবং সংরক্ষিত আসনে ১০ জন মহিলা প্রার্থীসহ মোট ৩৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী এই ভোট যুদ্ধে অংশগ্রহণ করছেন। এবার প্রথম ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিং (ইভিএম) এর সাহায্যে ভোট গ্রহণ করা হবে। এজন্য ভোটারদের ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট প্রদানের নিয়ম কানুন দেখানোর কাজ চলছে। এদিকে নতুন এই পদ্ধতিতে ভোট দেয়ার জন্য ভোটারদের মাঝে কৌত‚হল বিরাজ করছে।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও সহকারি রিটার্নিং অফিসার আব্দুর রশিদ জানান, সান্তাহার পৌরসভা নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ২৫ হাজার ৬৬৯ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১২ হাজার ৫৪৮ জন ও নারী ভোটার ১৩ হাজার ১২১জন। ৯টি ওয়ার্ডে ভোট গ্রহণের জন্য ১২টি ভোট কেন্দ্রে ৯২ টি বুথ স্থাপন করা হবে। এসব কেন্দ্রে ও বুথে দায়িত্ব পালন ও ভোট গ্রহণের জন্য ১২জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৯২ জন সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার ও ১৮৪ জন পোলিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। সান্তাহার পৌরসভা সাধারণ নির্বাচনে মেয়র পদে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থী ছাড়াও ইসলামি আন্দোলনের প্রার্থী হাজী আব্দুর রাজ্জাক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ পৌরসভাটি দখলে নিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কা প্রার্থী আশরাফুল ইসলাম মন্টু ভোটারদের কাছে এলাকার রাস্তাঘাট, শহরের যানজট নিরশনসহ ও উন্নয়নের পাশাপাশি সবশ্রেণির মানুষের জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি তুলে ধরছেন।
প্রধান দুইদলের দুই প্রার্থীর মতো ভোটারদের মন জয় করতে দিনভর ব্যস্ত সময় পার করছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখা মার্কা মেয়র প্রার্থী হাজি আব্দুর রাজ্জাক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন