বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

চিলমারীতে তেলশূন্য ভাসমান ডিপো

ফয়সাল হক, চিলমারী (কুড়িগ্রাম) থেকে | প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

দীর্ঘদিন ধরে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় অবস্থিত ভাসমান তেল ডিপো যমুনা ও মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের বার্জ দু’টি তেলশূন্য হয়ে পড়েছে। ডিপো দু’টি তেল শূন্য হয়ে থাকায় এলাকায় তেলের সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। বন্যার ধকল কাটিয়ে না ওঠতেই চড়া মূল্যে তেল কিনতে হচ্ছে কৃষকদের, এ যেন ‘মরার ওপর খড়ার ঘা’। এ নিয়ে স্থানীয় তেল ব্যবসায়ীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ডিপো দু’টি তেল শূন্য হয়ে পড়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। ডিলার ও খুচরা তেল ব্যবসায়ীদের অভিযোগ এলাকার জ্বালানি তেলের অধিকাংশ চাহিদা পূরণকারী যমুনা ডিপোটিতে প্রায় ১বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও তেল শূন্য থাকায় আসন্ন সেচ মৌসুমে তেল সঙ্কটে পড়ার সঙ্কায় রয়েছে উপজেলার হাজার হাজার কৃষক।
জানা যায়, ১৯৮৯ সালে কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ভাসমান তেল ডিপো পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তিনটি কোম্পানি স্থাপিত হয়ে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর ও লালমনিরহাট জেলায় তেল সরবরাহ করে আসছিল। কয়েক বছরের মাথায় পদ্মা তেল কোম্পানিটি বার্জ মেরামতের অজুহাত দেখিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নেয়। এরপর থেকেই মেঘনা ও যমুনা ওয়েল কোম্পানি দু’টি এ অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে তেল সরবরাহ করে আসছে। গত মাসে মেঘনা ডিপোর একটি জাহাজ ২ লাখ ২৭ হাজার লিটার তেল নিয়ে নাব্যতা সঙ্কটের অজুহাত দেখিয়ে সিরাজগঞ্জ এলাকা থেকে ফেরত চলে যায় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
উপজেলার চাহিদা মিটানোর পর নারায়নপুর, যাত্রাপুর, সাহেবের আলগা, রৌমারী, রাজিবপুর, সানন্দবাড়ী, জাফরগঞ্জ, কামারজানী ও উলিপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সেচ মৌসুমে ভাসমান তেল ডিপো থেকে প্রতিদিনের তেলের চাহিদা প্রায় ১ হাজার ৫শ’ ব্যারেল বা ৩ লাখ লিটার হলেও বর্তমান সময়ে ব্রহ্মপুত্র নদে চালিত নৌকা, ড্রেজার মেশিন, জমি চাষের ট্রাক্টর, বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে চালিত জেনারেটর, মাহেন্দ্র গাড়ি, নছিমন-করিমনসহ বিভিন্ন যন্ত্র চালনার জন্য প্রতিদিন প্রায় আড়াইশ’ থেকে ৩শ’ ব্যারেল বা ৫০-৬০ হাজার লিটার তেলের চাহিদা রয়েছে। ডিলাররা অন্য ডিপো থেকে তেল নিয়ে স্থানীয়সহ বিদ্যমান এলাকা সমূহের তেলের চাহিদা পুরণ করতে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। এতে প্রায় প্রতিদিন ৩ লাখ টাকা অতিরিক্ত লেনদেন হচ্ছে এলাকায় সৃষ্ট তেল বাজারে। শুধু তাই নয়, এভাবে চলতে থাকলে ডিলারদের হাতে থাকা দীর্ঘদিনের খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতা হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে। ফলে চিলমারীর তেল ব্যবসায়ীরা খুচরা বিক্রেতাদের নিকট পড়ে থাকা বাকি অর্থ উত্তোলন করতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ছেন। অপরদিকে ডিপো দুটি বন্ধ থাকায় প্রতিদিন খেটে খাওয়া প্রায় ৩শ’ শ্রমিক কাজ না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে আসছে।
চিলমারী ভাসমান তেল ডিপো দুটিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা তেল বাজার জোড়গাছ বাজারে সরেজমিন গিয়ে কথা হয় খুচরা তেল ব্যবসায়ী নুর-ই-আলম বাদল, রাশেদুল ইসলাম, মমিনুল, ধীরেন্দ্র নাথসহ অনেকের সাথে। তারা বলেন, মেঘনা ও যমুনা তেল ডিপো থেকে তেল নিতে অতিরিক্ত খরচ না থাকায় আমরা প্রতি লিটার তেল ৬৫ টাকায় বিক্রি করেছিলাম। বর্তমানে দূর থেকে তেল আনতে পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় বেশি দামে তেল বিক্রি করছি। এসময় কথা হয় ক্রেতা আফসার আলী ও সুলতানের সাথে। তারা জানায়, ডিপোতে তেল না থাকায় প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় তেল কিনতে আমাদের অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে অনেক টাকা। খুচরা তেল বিক্রেতা মমিনুল ইসলাম বলেন, অজানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে ডিপো দু’টি তেল শূন্য থাকায় জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীল কৃষকরা প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। জ্বালানি তেল সঙ্কটের ফলে বাড়তি দামে তেল ক্রয় করায় এলাকার মৎসজীবীরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
তেল ব্যবসায়ী নজির অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী মাইদুল ইসলাম জানান, পার্বতীপুর ও বাঘাবাড়ি থেকে সড়কপথে তেল পরিবহন করলে লিটারপ্রতি প্রায় ২ টাকা বেশি খরচ হয় ফলে ক্রেতাদের অধিক মূলে তেল কিনতে হয়। তাই জনগণের সুবিধার্থে ডিপো দু’টিতে তেলের মুজদ বাড়িয়ে এ অঞ্চলে জালানী তেলের সঙ্কট নিরসন করা দরকার। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে যমুনা তেল ডিপোর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা না থাকায় ডিপোটি দীর্ঘ ১ বছর থেকে তেল শূন্য রয়েছে। ডিপোটিতে একজন দক্ষ ডিএস নিযুক্ত করে তেল সরবরাহের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানান তিনি।
চিলমারী জ্বালানী তেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মতিয়ার রহমান ফুলবাবু বলেন, যমুনা ডিপোটি ১ বছর ধরে ইনচার্জ শূন্য থাকায় ডিপোটিতে তেল আসছে না। এলাকার জ্বালানীর তেলের জন্য গুরুত্বপূর্ন এই ডিপো দু’টি কোম্পানির কাছে অবহেলিত হওয়ায় এখানকার কৃষকরা চরম সঙ্কটে রয়েছে। যমুনা ডিপোতে ডিএস নিয়োগসহ ডিপো দু’টিতে পর্যাপ্ত তেল সরবরাহের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ ব্যাপারে মেঘনা ওয়েল কোম্পানির ডিপো সুপার (অপারেশন) মো. আইয়ুব আলীর সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, তিনি উর্ধ্বতনদের সাথে যোগাযোগ করেছেন। নদীর নাব্যতার বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র ছাড়পত্র স্বাপেক্ষে তেল প্রেরণ করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন