কলাপাড়া (পটুয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতা
হাজারো প্রতিকূলতা, কোন বাঁধাই রুখতে পারেনি পিতৃহীন হতদরিদ্র অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী মো. খাইরুল ইসলাম সোহাগকে। সে এবছর পটুয়াখলীর কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটা খানাবাদ কলেজ থেকে বাণিজ্য শাখায় এইচ এস সি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ইচ্ছা আর মানসিক শক্তি নিয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করে নানী রেনু বেগম তার নাতীকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার স্বপ্নে এখন বিভোর। কিন্তু পরীক্ষায় ভাল ফলাফল অর্জন করার পর তার উচ্চশিক্ষা গ্রহণে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। জন্মের পর থেকে বাবার বুকের ভালোবাসার উষ্ণতা সে পায়নি কখনও। মায়ের কোমল পরশ ও ভালবাসার স্বাদ পেতে না পেতেই মা রিনা বেগম দ্বিতীয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। নতুন স্বামীর সংসারে দু’বছরের শিশু সন্তান সোহাগের জায়গা হলো না। বাধ্য হয়ে দরিদ্র নানী রেনু বেগম নাতী সোহাগকে আশ্রয় দিলেন নিজের ¯েœহ-ছায়ায়। জানা গেছে, নানীর সামান্য আয়ে উপজেলার আমজেদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০৮ সালে প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুল বৃত্তি পায়। এর পর মহিপুর কো-অপ্ট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ অর্জন করে। এ বছর এইচ এস সি পরীক্ষায় কুয়াকাটা খানাবাদ কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পায় ওই মেধাবী শিক্ষার্থী। নাতীর এইচ এস সি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পাওয়ার খবর শুনে নানী রেনু বেগম আনন্দে কেঁদে ফেলেন। মেধাবী শিক্ষার্থী সোহাগ বললো, কষ্ট নিয়েই আমার জন্ম। নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে আমি বড় হয়েছি। মা-বাবার আদর পাইনি। নানীর অক্লান্ত পরিশ্রমেই এ ভাল ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। সোহাগ আরো বলেন, নানীর স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে তার মুখে হাসি ফোটাতে চাই। এছাড়া আমার ভাল ফলাফলের জন্য শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তার ইচ্ছা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে চাটার্ড একাউন্টেড হতে চায় বলে সে জানান। কুয়াকাটা খানাবাদ কলেজের সহযোগী অধ্যাপক খান এ রাজ্জাক বলেন, সোহাগ অসাধারণ মেধার পরিচয় দিয়েছে। প্রত্যেক পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়েছে। আমরা ওর লেখাপড়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা দিয়েছি। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। তবে আশঙ্কাও রয়েছে। ওর লেখাপড়া চালিয়ে নিতে টাকার দরকার। সমাজের উচ্চবিত্ত মানুষের কাছে অনুরোধ তারা যেন সোহাগের জন্য এগিয়ে আসেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন