লোকসানের বোঝা টানতে না পেরে বন্ধ হয়ে গেলো পঞ্চগড় জেলা একমাত্র ভারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান পঞ্চগড় চিনিকল। প্রতিষ্ঠার পর কয়েক বছর মুনাফা অর্জন করলেও গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, যান্ত্রিকত্রুটি, অব্যবস্থাপনা ও বিপুল পরিমাণ চিনি অবিক্রীত থাকাসহ নানা সমস্যার কারণে ভারী হচ্ছে লোকসানের খাতা।
বিপাকে রয়েছেন, চিনিকলটির সঙ্গে জড়িত ৭৪২ জন কর্মকর্তা ও শ্রমিক। যাদের কেউ স্থায়ী, আবার কেউ অস্থায়ী চুক্তিতেও কাজ করেন। লোকসান গুণছেন চাষিরাও।
কলটির অর্থ বিভাগ জানিয়েছে, গত ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ১৪৮ টাকা প্রতিকেজি চিনি উৎপাদন খরচের বিপরীতে চিনি বিক্রি হয় মাত্র ৬০ টাকায়। বর্তমানে কারখানাটিতে ২ হাজার ৪৩০ মেট্রিক টন চিনি গুদামে মজুত রয়েছে। যার মূল্য প্রায় ১৬ কোটি টাকা।
অফিস সূত্রে জানা গেছে, দেশে শিল্পের বিকাশ কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে পঞ্চগড় সদর উপজেলার ধাক্কামারা এলাকায় চিনিকলটির ১৯৬৫ সালে নির্মাণ কাজ শুরু করে, শেষ হয় ১৯৬৯ সালে। তারপর যাত্রা শুরু করে উৎপাদন প্রক্রিয়ার। যার উৎপাদন ক্ষমতা ১০ হাজার মেট্রিক টন। সর্বশেষ ২০০৫-০৬ অর্থবছরে মুনাফা হয় এ কল থেকে। এরপর থেকেই শুরু হয় লোকসান। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে মিলটিতে লোকসান হয় ৩৮ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। তারপর থেকে প্রতিবছরই বাড়ছে লোকসানের বোঝা ২০১৯-২০ অর্থ বছর পর্যন্ত লোকসান হয় ২২২ কোটি টাকা। চলতি মৌসুম তথা ২০২০-২১ অর্থ বছর শুরুর আগেই বন্ধ হয়ে যায় চিনিকলটি।
জানা যায়, চলতি মৌসুমের আখ এবার মাড়াই হবে ঠাকুরগাঁও চিনিকলে। ভোগান্তি বেড়েছে চাষিদেরও। নির্দিষ্ট সময়ে আখ সংগ্রহ না করায় কমেছে আখের ওজন, বেড়েছে লোকসানের বোঝাও। আখ চাষিরা জানান, চলতি মৌসুমে পঞ্চগড়ে আখের আবাদ হয়েছে ৪ হাজার একর জমিতে।
আখ চাষে লোকসান হওয়ায় এখন তারা অন্য আবাদে ঝুঁকছেন।
সদর উপজেলার আখচাষি মহিমউদ্দীন বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে আখ চাষে খরচ হয় ২৫ থেকে ২৮ হাজার টাকা। এবছর মূলধন ফিরে পেতেই কঠিন হবে। একই সুরে কথা বলেন, তিনমাইল এলাকার আখচাষি সফিকুল।
চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আনারুল হক বলেন, অধিক লোকসান ঠেকাতে বন্ধ হয়ে গেছে কলটি।
চিনিকলটিকে বহুমুখী না করলে এই সংকট কাটবে না। এ অবস্থায় থাকলে শ্রমিক-কর্মচারীরা বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করবে। তবে উর্ধতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোন শ্রমিক কর্মচারী ছাটাই করা হবে না, সবার সাথে সমন্বয় করা হবে। সেক্ষেত্রে সরকারের কাছে মিলটি রক্ষার জোর দাবি জানাচ্ছি।
চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চৌধুরী রুহুল আমিন কায়সার বলেন, ‘আখের স্বল্পতা, উৎপাদন খরচ ও পেস্কেল বেড়ে যাওয়াসহ বেশ কিছু সমস্যার কারণে মিলে লোকসান হচ্ছে, আমরা যে আখ পাই, তা দিয়ে মিলটিকে ১২ মাস চালু রাখা সম্ভব নয়। কলটিকে বহুমুখী না করলে এই সংকট কাটবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন