শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

মানবীয় মূল্যবোধ ও টেকসই উন্নয়নের প্রধান উদ্দেশ্য

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০৭ এএম

একটি মানব গোষ্টীর উন্নতি ঘটে চারটি বস্তুর সমন্বয়ে আর সেগুলো হলো, শিক্ষা কর্মদক্ষতা, দক্ষতা অনুযায়ী কর্ম সম্পাদন, কর্মক্ষমতা সৃষ্টি এবং ইতিবাচক কর্মস্পৃহা। উপরোক্ত বিষয়াবলী একটি মানুষের ভিতর তখনই বাস্তবায়ন হবে, যখন তার ভিতর শিক্ষা, নৈতিকতা, স্বাস্থ্য ও কর্মপ্রেরণার বিকাশ ঘটবে। এই চারটি বিষয়কে রক্ষা করার ব্যাপারে ইসলাম বিশেষভাবে জোর তাগিদ প্রদান করেছে।

পশ্চিমাদের দৃষ্টিতে টেকসই উন্নয়ন বলতে কেবল ভোগ ও মুনাফা অর্জনকেই বোঝায়। পাশ্চাত্য রেনেসাঁর পর ভোগবাদী ও মুনাফাকামী নীতি গ্রহণ করে এবং মানুষকে চরম ভোগবাদী হতে উৎসাহ দেয়া হয়।
এ বিষয়টি অর্থনৈতিক তাৎপরতায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। পাশ্চাত্যের উন্নয়ন সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গিতে মানুষের বৈষয়িক চাহিদাগুলো মেটানোর ক্ষেত্রে চরমপন্থা গৃহীত হওয়ায় ভোগবাদ লাগামহীন ভাবে বেড়েছে। এর ফলে অনেক কৃত্রিম বা অপ্রয়োজনীয় চাহিদা ও সৃষ্টি করা হয়েছে। আর এই চরমপন্থা বা বাড়াবাড়ি বিভিন্ন ধরনের আধ্যাত্মিক ও নৈতিক সংকট সৃষ্টি করেছে। পাশ্চাত্যের টেকসই উন্নয়ন মডেলে যান্ত্রিকতাবাদ বা মেশিনিজমের মোকাবেলায় মানুষের মর্যাদা ও ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। এটাই টেকসই উন্নয়ন সম্পর্কিত ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির সাথে পশ্চিমা উন্নয়ন মডেলের প্রধান বা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য। ইসলামে টেকসই উন্নয়নকে নৈতিকতার সাথে সমন্বিত করা হয়েছে। ফলে ইসলামী সমাজে অর্থনৈতিক তৎপরতাগুলো হয় লক্ষ্যপূর্ণ ও যৌক্তিক। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে এটা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, ধনসম্পদ বা ব্যবসা বাণিজ্য ও উৎপাদনের তৎপরতা যেন মানুষকে আল্লাহ সম্পর্কে উদাসীন না করে। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: এরা সেইসব লোক যারা ব্যবসা বাণিজ্য এবং ক্রয় বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ হতে এবং নামাজ কায়েম ও যাকাত দান হতে বিরত রাখতে পারে না। তারা ভয় করে সেই দিনকে যেদিন অনেক অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।
এ আয়াতে এমন লোকদের ব্যাপারে ইঙ্গি করা হয়েছে, যাদের বৈধ বা ইতবাচক অর্থনৈতিক তৎপরতা তাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিরত রাখে না। এটা স্পষ্ট যে, যারা মহান আল্লাহকে সব সময় স্মরণ রাখে তারা অর্থনৈতিক তৎপরতাসহ যে কোনো কাজেই জুলুম, প্রতারণা, এবং দূর্নীতি থেকে দূরে থাকে। এ ধরণের লোকদের জন্যে সব সময় সৌভাগ্য বা সুফল অপেক্ষা করে।
উপসংহার ঃ পরিবেশের কোন ভৌগলিক সীমারেখা নেই এবং কোনো দেশই বিচ্ছিন্নভাবে নিজ পরিবেশ ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটিয়ে এককভাবে নিজের ভবিষ্যৎ কে শঙ্কামুক্ত করতে পারে না। এজন্য টেকসই উন্নয়নের জন্য অভ্যন্তরীণ ও বহিবিশ্বের অংশীদারিত্বের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এ কারণে ইসলামের ন্যায় বিচার, নৈতিকতা, সাম্য, সৌন্দর্যবোধ, ভালোবাসা, দেশপ্রেম প্রভূতি মূল্যবোধ বাস্তবানের উপর জোর দিতে হবে। কেননা এই মূল্যবোধ হারিয়ে যাওয়ার কারণেই উন্ননের মানবিক অবয়ব আজ ধুরা মলিন হয়ে গেছে। পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য পূরণের মাধ্যমে দেশের মানব উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক সক্রিয়তা প্রয়োজন। এছাড়া প্রশাসনিক জবাবদিহিতা ও পরিকল্পনা কমিশণের সক্রিয় কার্যক্রমের মাধ্যমে সীমিত সম্পদের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত উন্নয়ন ঘটানো জরুরী। ইসলাম এ বিষয়ে অত্যন্ত চমৎকার দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছে। তাই বলা যায়, টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে ইসলামে দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়িত হলে জাতি পেতে পারে উন্নয়নের স্থায়ী সুফল ও সমৃদ্ধি।
লেখক ঃ মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান, পাঠানপাড়া (খান বাড়ি), কদমতলী, সদর, সিলেট-৩১১১।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন