বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

একই ঘরে মানুষ-গরুর বসবাস

কুড়িগ্রামে চরম দরিদ্রতা

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে | প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

চরম দরিদ্রতার কষাঘাতে পরে বাধ্য হয়ে গবাদি পশু নিয়ে একই ঘরে বসবাস করছেন আশি ঊর্ধ্ব এক বিধবা। সন্তানের কাজ জুটলে মুখে খাবার ওঠে, না হলে অনাহারে-অর্ধাহারে কাটে দিন। অভাবের তাড়নায় অন্য ছেলেরা আলাদা করে দিয়েছেন বৃদ্ধা মাকে।
কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলা চাকিরপশার ইউনিয়নের মালিরপাড় গ্রামের বাসিন্দা বিধবা শান্তি রাণী। স্বামী সুধীর চন্দ্র সরকার অসুস্থতাজনিত কারণে প্রায় ৩০ বছর আগে মারা যান। নিজের থাকার ঘরের একদিকে বিছানা অন্যদিকে খড় বিছানো গরুর থাকার জায়গা। এভাবেই শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা পার করছেন তিনি। ছেলে ৩ জন আর মেয়ে ৪ জন। ছোট ছেলে বাদে সবারই বিয়ে হয়ে গেছে। জমিজমা বলতে বাড়ি ভিটে ৩ শতক। অর্ধেক অংশে বড় ছেলে প্রবিত্র চন্দ্র সরকার তার পরিবার নিয়ে আর বাকি অংশে থাকেন শান্তি রাণী। শান্তি রাণীর ঘরের সাথে স্তÍূপ করা অন্য ঘরে থাকেন ছোট ছেলে অমৃত চন্দ্র সরকার। বয়স থাকতে শান্তি রাণী মানুষের বাসায় কিংবা কৃষি কাজ করলেও এখন বয়সের ভারে ন্যুজ¦ হয়ে পড়ায় খাটতে পারেন না। তাই সন্তান কিংবা প্রতিবেশিদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। চলাফেরা করতে পারলেও পরিশ্রম করতে পারেন না। মানুষের কাছ থেকে একটি গরু আদী (গরুর বিনিময়ে গরু পাওয়ার শর্তে) নিয়ে সেই গরু লালন পালন করেন। সেই আদীকৃত গরু থেকেই তিনি একটি গরু পেয়েছেন। জরাজীর্ণ ঘরে জায়গা সংকুলান না থাকার কারণে গরুর গোয়াল তৈরি করতে পারেননি। ফলে বাধ্য হয়ে নিজ ঘরেই গরুসহ দিন পার করছেন শান্তি রাণী। কাঠমিস্ত্রি ছেলের ভাগ্যে কাজ জুটলে মা-ছেলের দু’জনের পেটে ভাত পড়ে নতুবা অনাহারে-অর্ধাহারে দিন অতিবাহিত করতে হয়। দিন এনে দিন খাওয়া প্রতিবেশিরাও তাদের সামর্থ্যরে মধ্যে সহযোগিতা করলেও সবসময় সেটাও সম্ভব হয়ে ওঠে না।
কান্না জড়িত কন্ঠে শান্তি রাণী বলেন, এই মতন করি গরু নিয়াই থাকি। খাওয়া দাওয়া এই মতন। ছেলে দিনমজুরি খাটে দিন যায় আনে খাই না আনলে না খাই। থাকি ওই মতনে। কাইও (কেউ) যদি একমুট দেয় তাইলে খাই আর না দিলে অমনে (না খেয়ে) থাকি। একটা গরু আদি নিছনু সেটা থাকি বাছুর হইছে। গাই কোনা ঘোরত দিছং। আর বাছুরটাকে এমন করি বড় করবাইছি (পালন করছেন)। বেটিগুলার বিয়ে দেবার সময় সম্পদ সব শেষ হইছে। আর বাকি দুই বেটা বিয়া করি বউ ছোয়া নিয়া জুদা (আলাদা) খায়। এলা হামরা মা-ছোট বেটা মিলে খায়া না খায়া দিন কাটাই। সরকারি ভাতা বলতে দু’বছর আগে শুধু বয়স্ক কার্ড পেয়েছেন। এছাড়া আর কোন সরকারি সহযোগিতা পান না বলে জানান তিনি।
শান্তি রাণীর বড় ছেলে প্রবিত্র চন্দ্র সরকার জানান, কাঠমিস্ত্রির কাজ করেই চলে। নিজের পরিবার নিয়ে চলা দায়। তাই এমনিতেই মায়ের খোঁজ রাখলেও ভরণ-পোষণ নিতে না পেরে ছোট ভাইয়ের সঙ্গে মা কে আলাদা করে দিয়েছেন।
প্রতিবেশি স্বপ্না রাণী বলেন, প্রায় বিশ বছর ধরে এমন মানবেতর জীবন-যাপন করছেন বিধাব শান্তি রাণী। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তেমনটি খোঁজ খবর রাখে না। তা দিয়েই মা-কাঠমিস্ত্রি ছেলে কষ্টে দিন পার করছে। ভাঙা চুড়া ঘর থাকলেও নেই কোন স্যানিটেশন ব্যবস্থা। খোলা জায়গা বা প্রতিবেশিদের বাড়িতে গিয়ে সাড়েন প্রাকৃতিক কাজ।
প্রতিবেশি গিতা রাণী বলেন, বৃষ্টি আসলে শান্তি রাণীর কষ্ট আরো দ্বিগুণ হয়ে যায়। বাইরে রান্না চুলা ভিজে যায়। রান্না করতে পারে না। বেশির ভাগই সময় না খেয়ে দিন পার করেন ছেলে-মা। বছর খানেক আগে আঙ্গিনায় পিছলে পড়ে শান্তি রাণীর হাত ভেঙে যায়। টাকা অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেনি। গ্রাম্য চিকিৎসা খড়ি দিয়ে ভাঙা জায়গা বেঁধে রাখেন। বিছানাতেই প্রসাব পায়খানা করেছিল। ছোট ছেলেটি সেগুলো ধোঁয়া পাকলা করেছিল। এই মায়ের জন্য ছোট ছেলে অমৃত চন্দ্র সরকার বিয়ে করেনি।
প্রতিবেশি কমল চন্দ্র বলেন, দরিদ্র শ্রেণির মানুষের সুখ-সুবিধার জন্য সরকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা পরও বঞ্চিত হচ্ছে হতদরিদ্র পরিবারগুলোর একটি বিশেষ অংশ। তাদের দেখার যেন কেউ নেই। সরকারিভাবে শান্তি রাণীর একটি থাকার ঘর দিলে বৃদ্ধা শান্তি রাণীর শেষ কালেও একটু শান্তি নিয়ে মরতে পারতো।
রাজারহাট চাকিরপশার ইউপি ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার সন্তোষ চন্দ্র মোহন্ত শান্তি রাণীর দুর্বস্থার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, সরকারি বিধি মোতাবেক একই পরিবারকে অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেবার নিয়ম নেই। এরপরও বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে কথা বলে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
তানিয়া ২৪ জানুয়ারি, ২০২১, ২:৫৯ এএম says : 0
খুবই হৃদয়বিদারক ঘটনা
Total Reply(0)
Rafiqul Islam ২৪ জানুয়ারি, ২০২১, ৭:৪৯ এএম says : 0
একটি ঘর দেওয়া হোক
Total Reply(0)
তরুন সাকা চৌধুরী ২৪ জানুয়ারি, ২০২১, ৯:১৫ এএম says : 0
দেশজুড়ে যে এত ঘর দেয়া হলো সেগুলো তাহলে কারা পেল।
Total Reply(0)
মেহেদী ২৪ জানুয়ারি, ২০২১, ৯:১৬ এএম says : 0
আহ-- কি কষ্টে আছে!!! এই মহিলার ভাগ্যে সরকারি ঘর জুটলো না।
Total Reply(0)
কামাল রাহী ২৪ জানুয়ারি, ২০২১, ৯:১৬ এএম says : 0
সরকারিভাবে বৃদ্ধাকে জরুরি একটি ঘর দেয়া হোক।
Total Reply(0)
Md. Shahjalal ২৪ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০৭ পিএম says : 0
আল্লাহতাআলা সবারই ভালোকরুন আমিন। স্হানীয় জনগনের উচিৎ তাদের সাহায্য করা। সরকার যদি এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয় তাহলে ভালো হয়।
Total Reply(0)
Md. Shahjalal ২৪ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০৭ পিএম says : 0
আল্লাহতাআলা সবারই ভালোকরুন আমিন। স্হানীয় জনগনের উচিৎ তাদের সাহায্য করা। সরকার যদি এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয় তাহলে ভালো হয়।
Total Reply(0)
Fakhril ২৪ জানুয়ারি, ২০২১, ৮:২৯ পিএম says : 0
Local govt.help her family both shelter& food
Total Reply(0)
Rayhat Khan ৩১ জানুয়ারি, ২০২১, ২:৫৩ এএম says : 0
May Allah bless her Ameen
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন