শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

গুঁড়া চিংড়ির কেজি ৯০০ টাকা!

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে | প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০২ এএম

বাজারে গুড়া চিংড়ি এখন সবচেয়ে দামি মাছে পরিণত হয়েছে। বকের আধার হিসেবে পরিচিত এক কেজি গুড়া চিংড়ি এখন বিক্রি হচ্ছে ৬শ’ থেকে ৯শ’ টাকা কেজি দরে। গুড়া কুচা চিংড়ি এক কেজির দাম ৬০০ টাকা। গুড়া সাদা ডোগা চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে নয় শ’ টাকা। গুড়া তিলা চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি দরে। রুই কাতল মাছ কেনা যায় আড়াইশ’ টাকা কেজি, আইড় মাছ পাওয়া যায় ৪০০ টাকা কেজি, বোয়াল মাছ পাওয়া যায় ৫০০ টাকা কেজি, শিং, মাগুর, কৈ মাছ পাওয়া যায় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে। কিন্তু গুড়া চিংড়ি কিনতে লাগে প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা। অথচ দুই দশক পূর্বেও এসব গুড়া চিংড়ির কোন বাজার মূল্য ছিল না। কেউ গুড়া চিংড়ি বাজারে নিয়ে এলে ১০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি করতে পারত না। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে উঁচু তলার মানুষদেরও কেউ গুড়া চিংড়ি খুব একটা খেত না। দেশের খানা-খন্দর, ডোবা-নালা, খাল-বিল, পুকুর, নদ-নদী সর্বত্রই গুড়া চিংড়ির প্রাচুর্য ছিল। পুকুরে গোসল করতে গেলে গুড়া চিংড়ি মানুষের শরীরে কাটা ফুটিয়ে দিত। ছোট-ছোট ছেলেমেয়েরা গামছা দিয়ে গুড়া চিংড়ি ধরে খেলা করতো। গ্রামের মানুষ মাঝে মাঝে গুঁড়া চিংড়ি দিয়ে ভর্তা বানিয়ে খেত।
গ্রামের মৎস্য শিকারীরা জানিয়েছে গুড়া চিংড়ি বকেরাও খেতে চাইত না। বকেরা জলার ধারে বসে পুটি মাছ কে ঠোকর দিলে ঠোটের ভেতর ঢুকে যেত গুড়া চিংড়ি। বকেরা গুড়া চিংড়ি ঠোটের ভেতর থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে পুটি মাছ গিলে খেত। গ্রামের মানুষ বড়শি দিয়ে বড় মাছ ধরার জন্য চিংড়ি মাছ ব্যবহার করত। তারা জেতা চিংড়ি বড়শিতে গেথে শোল, গজার, আইড়, বোয়াল ইত্যাদি মাছ ধরতো। শীতের শেষে খানাখন্দরে জমে থাকা গুড়া চিংড়ি থেকে ধরে শুকিয়ে শুঁটকি বানিয়ে রাখতো। গ্রামের গরিব মানুষেরা একটু বড় আকারের গুঁড়া চিংড়ি দিয়ে লাউ রান্না করে খেত।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে হিসেব মতে দেশে ৫৬ প্রজাতির চিংড়ি মাছ চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে লোনা পানিতে পাওয়া গেছে ৩৭ প্রজাতি অর্ধ লোনাপানিতে পাওয়া গেছে ১২ এবং স্বাদু পানিতে পাওয়া গেছে এসব প্রজাতির চিংড়ি। স্বাদুপানির ৭ প্রজাতির মধ্যে গলদা চিংড়ির সবচেয়ে বড়। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী একটি গলদা চিংড়ি সর্বোচ্চ ৬ কেজি ওজন পর্যন্ত হতে পারে। ৫০, ৬০ ও ৮০ গ্রাম ওজনের আরো দুই-তিন প্রজাতি চিংড়ি আছে। যেগুলো মেঘনা, শীতলক্ষ্যা ও আড়িয়ালখাঁ প্রভৃতি নদ-নদী ছাড়া কোথাও পাওয়া যায়না। বাকি সব গুড়া চিংড়ি। এসব গুড়া চিংড়ি দেশের ছোট-বড় সকল ধরনের জলাশয়েই পাওয়া যায়। এসব গুঁড়া চিংড়ি ছিল ফেলনা। গ্রামের অভাবী মানুষেরা মাছের অভাব হলে এসব গুড়া চিংড়ি খেত। শীতের শেষে ধানি জমিতে গুড়া চিংড়ি মরে শুকিয়ে থাকতো।
অথচ এখন ধনী গরীব সবার কাছে এসব গুড়া চিংড়ির কদর সবচেয়ে বেশি। ধনীরা কিনে নেয় ১ কেজি ২ কেজি করে। আর গরিবরা কিনে নেয় ৩০/৫০ টাকা ভাগা করে। ৫০/১০০ গ্রাম ওজনের ভাগা দিয়ে ৫০/ ৮০ টাকা বিক্রি করে জেলেরা। এখন সকলেই গুড়া চিংড়ি খায় বলে দাম বেড়েছে কয়েক শত গুণ। যে গুড়া চিংড়ি বিক্রি হতো ১০/২০ টাকা কেজি দরে, সেই চিংড়ি এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৯০০ শত টাকা কেজি দরে। গুড়া চিংড়ির দাম বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আগে দেশের ডোবা-নালা, খানা-খন্দর, বিল-ঝিল ও বাড়ির পাশের পুকুরে প্রচুর পরিমাণে গুঁড়া চিংড়ি পাওয়া যেত। এখন দেশের পুকুরগুলো সব ভরাট করে ফেলা হয়েছে। নদী থেকে বালু উত্তোলন করে দেশের ডোবা নালা খানাখন্দর বিল ঝিল সব ভরাট করা হয়েছে। দেশের নিচু জমিতে যেখানে বারো মাস মাছ থাকতো সেসব নিচু জমি এখন ডেভেলপার কোম্পানির হাতে চলে যাওয়ায় সেগুলো এখন ইট-পাথরের নিচে ঢাকা পরে গেছে। যার ফলে নদী ছাড়া আর কোথাও এখন চিংড়ি পাওয়া যায় না। সঙ্গত কারণেই চাহিদার তুলনায় গুড়া চিংড়ির প্রাচুর্য কমে যাওয়ায় দাম বেড়ে গেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন