বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

ভাওয়াইয়া গানের প্রাণপুরুষ মহেশ চন্দ্র রায়ের ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

সৈয়দপুর (নীলফামারী) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০২১, ১০:৩২ এএম

ধীরে বোলাও গাড়ীরে গাড়িয়াল; কোন বিদেশি বাবরীয়ালা ; ফাক্কাউ করি জিউকোনা মোর ; যম শালা হইছে কানারে ; আগিনা সান্টোং মুই আগোলে দিগলে কিংবা তিস্তা নদীরে এই কিরে তোর খেলা এমনি হাজারো ভাওয়াইয়া গানের কিংবদন্তি রচয়িতা মহেশ চন্দ্র রায়ের ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ২৯ জানুয়ারি। তিনি ছিলেন একাধারে গীতিকার, সুরকার ও সংগীত শিল্পী। মুলতঃ এ দেশের লোকসঙ্গীতকে দেশ-বিদেশ তথা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে যে ক’জন জ্ঞানী-গুনী শিল্পী অবদান রেখে গেছেন তাদের মধ্যে মহেশ চন্দ্র রায় অন্যতম। লোকসঙ্গীতের বিভিন্ন ধারা যেমন- পল্লীগীতি, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালী ইত্যাদির ক্ষেত্রে মহেশ চন্দ্র রায় একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রথা প্রচলন করে গেছেন। সেই প্রচলিত প্রথার রেশ ধরেই এখনও লোকসঙ্গীতের গীত হয়।

ক্ষণজন্মা এই প্রাণপুরুষ ১৯১৯ সালের ১ ফেরুয়ারি নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুঠিমারী গ্রামে তফশিল শ্রেণীভূক্ত রাজবংশী ক্ষত্রিয় বংশে জন্মগ্রহণ করেন এবং তাঁর বাবা স্বর্গীয় বাবুরাম রায় ও মা স্বর্গীয়া বিমলা রানী রায়।

শিল্পী মহেশ চন্দ্র রায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত শেষে কিশোরগঞ্জ ইংরেজী স্কুলে ভর্তি হন এবং পাঠ সমাপনান্তে গ্রাম্য যাত্রা, সংকীর্তন প্রভূতি দলে যোগদান করেন। সেখানে অল্পদিনের মধ্যেই সুখ্যাতি অর্জন করেন। ঘটনাক্রমে দেখা হয় কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, অবতার ও ভারতবর্ষ পত্রিকার লেখক বাবু তারা প্রসন্ন মুখার্জী ও দৈনিক বসুমতির বিশিষ্ট লেখক বলাই দেব শর্মার সঙ্গে। পরবর্তীকালে তাঁদের নির্দেশেই তিনি উত্তর বাংলার প্রাচীন পুঁথি সংগ্রহ করতে শুরু করেন। এরপর জাতীয় গুরু রায় সাহেব পঞ্চানন বর্মনের অনুপ্রেরণায় উত্তর বাংলার আঞ্চলিক ভাষায় ভাওয়াইয়া, পল্ল¬ীগীতি, ভাটিয়ালী ও কবিতা লেখা শুরু করেন এবং স্বরচিত গানের সুর সংযোজন করেন। তাই তিনি একাধারে গীতিকার, সুরকার ও কন্ঠশিল্পী। শিল্পী জগতে তাঁর বিকল্প নেই।

লোকসঙ্গীতের এই নক্ষত্র ১৩৪৪ সালে নীলফামারী সদরের জয়চন্ডী পুটিমারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করার পর পার্শ্ববর্তী দীঘলডাঙ্গী গ্রামের জোতদার গগন চন্দ্র রায়ের একমাত্র কন্যা বীনাপানি রায়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শ্বশুরালয়েই থেকে যান। এরপর দারোয়ানী ঋণ সালিশী বোর্ডের সদস্য, সংগলশী জুট কমিটির চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন ফুড কমিটির সেক্রেটারী, রেলওয়ে হোমগার্ড ক্যাপ্টেন পরে পাকিস্তান আমলে ইউনিয়ন কাউন্সিলের সদস্য প্রভূতি পদে থেকে জনসেবায় আতœনিয়োগ করেন।

প্রয়াত এই শিল্পীর লেখা ও সুর করা গানগুলো গেয়েছেন অনেকেই। বিশেষ করে বাংলাদেশের ভাওয়াইয়া গানের প্রধান শিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসী, শরিফা রানী, নাদিরা বেগম, প্রয়াত হরলাল রায়, রথীন্দ্রনাথ রায়সহ আরো অনেকে। এছাড়া দীর্ঘ সংগীত জীবনে তাঁর সান্নিধ্যে এসেছেন তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী খয়রাত হোসেন, অধ্যাপক ইউসুফ আলী (প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী), এমাজ উদ্দিন আহমদ (সাবেক ভিসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), মশিউর রহমান যাদু মিয়া (প্রাক্তন সিনিয়র মন্ত্রী) কবি বন্দে আলী মিঞা, আসাদুজ্জামান নূর (সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী), বিশিষ্ট সাংবাদিক মরহুম কামাল লোহানীসহ অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তি।
তবে দেরীতে হলেও তাঁর সৃষ্টিসম্ভার ধরে রাখতে ১৯৯৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর নীলফামারী শিল্পকলা একাডেমী বের করে ‘ধীরে বোলাও গাড়ী’ (প্রথম খন্ড), ২০০৩ সালে জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমী থেকে ‘মহেশ চন্দ্র রায়ের গান’ এবং ২০১০ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী থেকে ‘ভাওয়াইয়া শিল্পী মহেশ চন্দ্র রায় জীবন ও গান’ প্রকাশিত হয়। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিষয়ে পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় শিল্পীর গান ও জীবনী।

আগামী দিনে তাঁর সৃষ্টিকর্ম রক্ষা ও গান চর্চার জন্য “মহেশ চন্দ্র রায় ভাওয়াইয়া একাডেমী” প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিলে উত্তরবঙ্গ তথা ভাওয়াইয়া প্রেমীদের স্বপ্ন সার্থক হবে। আর এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে জাতীয় প্রতিষ্ঠান শিল্পকলা একাডেমীকেই পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানান- এ অঞ্চলের আপাময় মানুষ।
উল্লেখ্য, প্রতিভাবান এই গীতিকার, সুরকার ও কন্ঠশিল্পী ১৯৯৩ সালের ২৯ জানুয়ারি ৭৪ বছর বয়সে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন