রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

মহাসড়কে কাঁচা বাজার

শ্রীপুরে চরম দুর্ভোগে যাত্রীরা

এম এ মতিন, শ্রীপুর (গাজীপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

গাজীপুরের শ্রীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চার লেনের দুই পাশে ঝুঁকিপূর্ণ বাজারের কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষসহ যাত্রীদের। উপজেলার এমসি বাজার, নয়নপুর ও জৈনা এলাকায় মহাসড়কের দুই পাশের লেন কাঁচা বাজারের দখলেই থাকে। এসব স্থানে প্রতিদিন বাজার বসায় অরক্ষিত মহাসড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে।
জানা যায়, ২০১৬ সালে জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হয়। কিন্তু চার লেনের সুফল কেড়ে নিচ্ছে মহাসড়কে নানা ধরনের অব্যবস্থাপনা। মহাসড়কের নির্দিষ্ট স্থান পর্যন্ত স্থায়ী-অস্থায়ী স্থাপনা বা বাজার বসা সম্পূর্ণ অবৈধ থাকলেও সড়ক ঘেঁষে ও জনপথ বিভাগের জায়গায় দীঘদিন ধরে ইজারা দিয়ে বাজার বসাচ্ছেন স্থানীয় প্রশাসন। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত লেন দখল করে বাজার বসানোর ফলে মহাসড়ক প্রতিনিয়ত অনিরাপদ হয়ে উঠছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুরের পর থেকেই জৈনা বাজারের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে বাজার বসে। সেখানে মাছ, তরকারি ও নিত্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল নিয়ে বসেন দোকানদাররা। বাজার বসার পর সড়কে যান চলাচলের জন্য জায়গা থাকে খুবই কম। এসব স্থানে এসে যানবাহনগুলোকে চলতে হয় অতিরিক্ত সতর্কতা মেনে। ফলে মহাসড়কের মতো ব্যস্ত রাস্তায় এ স্থানগুলোতে এসে যানজট পোহাতে হয় দূরপাল্লার গাড়িগুলোকে। এছাড়াও কাঁচা বাজারের ক্রেতা ও বিক্রেতা দুই পক্ষই থাকেন সড়ক দুর্ঘটনার চরম ঝুঁকিতে। একটু অসাবধানতায় মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে এ সকল স্থানে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনার ঘটনাও ঘটেছে।
এসব বাজারের ইজারাদারদের ভাষ্য, বাজার বৈধ না অবৈধ এটা তাদের জানা নেই। তারা স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে এসব বাজারের অনুমতি পেয়েছেন। সংকীর্ণ জায়গায় বিপুল টাকা রাজস্ব দিয়ে তারা বাজার পরিচালনা করেন। বিকেল হলে বাজারের জায়গার অভাবেই মূলত সড়কের ওপর বাজার চলে আসে। এছাড়াও সড়কের ওপর বাজার থাকায় মাঝে মধ্যে পুলিশের হয়রানির শিকার হতে হয়।
মাওনা হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ আর এম আল মামুন জানান, মহাসড়কের নিরাপত্তার স্বার্থে সেখান থেকে বাজার সরিয়ে দিতে প্রতি সপ্তাহেই তাদেরকে সতর্ক করার পাশাপাশি অভিযান পরিচালনা করছি। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত আছে।
গাজীপুর সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুদ্দিন ইনকিলাবকে জানান, এসব স্থানে বাজার বসানোর অনুমতি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিধি অনুযায়ী মহাসড়কের পাশে ১০ মিটার জায়গা সম্পূর্ণ খালি রাখার বিধান রয়েছে। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা সংবলিত ফলক মহাসড়ক জুড়েই স্থাপন করেছি। অথচ সেখানে প্রতিদিন বাজার বসে। শুনেছি উপজেলা প্রশাসন থেকে বাজারগুলো ইজারা নিয়ে বসানো হয়। এসব স্থানে জেলা প্রশাসনের কোন জায়গা থাকলে থাকতেও পারে। কিন্তু বাজারটি অধিকাংশই সড়ক ও জনপদের জায়গায় চলে আসছে। এসব বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়েও অনেকবার কথা বলেছি। এবার আমরা একটি তালিকা তৈরি করে উচ্ছেদের পরিকল্পনা করেছি।
এমসি বাজার অংশের ইজারাদার শফিক মোড়ল বলেন, প্রায় অর্ধ কোটি টাকা দিয়ে এ বাজার ইজারা নেয়া হয়েছে। এর সাথে উপরি হিসেবে গুনতে হয়েছে আরও কয়েক লাখ। প্রশাসন যেভাবে ইজারা দেয় আমরাও নিতে বাধ্য। জৈনাবাজার অংশের ইজারাদার সাহাব উদ্দিন বলেন, সব মিলিয়ে প্রায় ৭০ লাখ টাকায় বাজার ইজারা নিয়ে করোনায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত। এখানে বাজারের জন্য নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। প্রশাসন আমাদেরকে যেখানে ইজারা দেয় আমরা সেখানেই বসতে রাজি আছি।
দীর্ঘদিন ধরে মহাসড়কের উপর এমসি বাজার, নয়নপুর বাজার ও জৈনা বাজার ইজারা দিয়ে আসছেন শ্রীপুর উপজেলা প্রশাসন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমা মোস্তারীর দাবি, অতীতের ধারাবাহিকতায় বাজারগুলো ইজারা দেয়া হচ্ছে। তবে সড়কের পাশে বাজারের বিষয়টি নিয়ে ও সম্ভাব্য উপায় বের করতে আলোচনা চলছে।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস.এম তরিকুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কের উপর বাজার বসানো বা ইজারা দেয়া প্রশাসনের কোনো এখতিয়ার নেই। খোঁজ নিয়ে এসকল অরক্ষিত বাজারগুলোর তালিকা করে উচ্ছেদ করতে অতি শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন