রবিউল ইসলাম, কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা) থেকে
এনজিও’র ঋণে নিঃস্ব হয়ে মহাসংকটে দিনাতিপাত করছে কালিগঞ্জের শত শত পরিবার। ঋণের কিস্তি পরিশোধে অনেকে সহায়-সম্বল এমনকি ভিটা-বাড়ি পর্যন্ত বিক্রি করছে, আবার অনেকে বেড়াচ্ছে পালিয়ে। উপজেলাজুড়ে এ সংক্রমণ আরো তীব্রতর। কালিগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৮০ ভাগ মানুষই কোনো না কোনোভাবেই এনজিও ঋণে আক্রন্ত হয়ে পড়েছে। এলাকাটি চিংড়ি অধ্যুষিত হওয়ায় এখানকার মানুষ বেশিরভাগ মৎস্য চাষের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু সাদা সোনা চিংড়ি বিভিন্ন সময় আশীর্বাদস্বরূপ হলেও বায়ুবৈরীতার ফলে তা এখন অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে। বার বার মাছের ঘেরে লোকসান দিয়ে অনেকে জড়িয়ে পড়েছে এনজিও’র ঋণের জালে। চিংড়ি চাষের বিরূপ প্রভাবের শিকার প্রায় প্রতিটি পরিবার। যে কারণে তাদের জনজীবনে নেমে এসেছে নানাবিধ সংকট। বাধ্য হয়ে তাই জড়িয়ে পড়েছে ঋণের জালে। এদিকে ব্যাংক ঋণের জটিলতায় অত্র এলাকার একটি বড় অংশ ব্যাংক সুবিধা হতে বঞ্চিত রয়েছে। তাছাড়া মহাজনী সুদের হার চড়া হওয়ায় উপায়ন্তর না পেয়ে এক প্রকার বাধ্য হয়ে শরণাপন্ন হচ্ছে বিভিন্ন এনজিওগুলোর নিকট। স্বাবলম্বী হওয়ার আশায় গ্রামের সহজ-সরল মহিলারা তাই এনজিও’র ঋণ নিয়ে শোধ দিতে হিমশিম খাচ্ছে। অনেকে এক এনজিও’র ঋণ শোধ দিতে একাধিক এনজিও’র ঋণে জড়িয়ে পড়ছে। এনজিও’র ঋণের সুদের হার ব্যাংকের তুলনায় দ্বিগুণ হলেও প্রিমিয়াম হিসাবে ঋণগ্রস্ত বুঝতে পারে না আসল বিষয়। অভিযোগ রয়েছে, এনজিওগুলোর লিখিত নিয়মানুযায়ী উৎপাদন ও আয় থেকে কিস্তির টাকা আদায় করার কথা, কিন্তু ঋণ প্রদানের পরবর্তী সপ্তাহ থেকে শুরু হয় প্রিমিয়াম আদায়। অধিকাংশ ঋণ সাপ্তাহিক হারে ৫২ কিস্তিতে পরিশোধের কথা থাকলেও প্রতি প্রদেয় কিস্তি ও সুদ গুনতে হয় পুরো বছরের। এরপর ঋণ নিয়ে শোধ দিতে না পারলে দল বেঁধে বাড়িতে হানা দেয় সংশ্লিষ্ট এনজিও কর্মীরা। ভয়ভীতিসহ যে কোনো কৌশলে তারা তা আদায় করে ছাড়ে। যা পরিশোধে অনেক সময় হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল, স্বর্ণালংকার এমনকি জমিজমা বন্ধক ও গাছপালা বিক্রি করেও তা পরিশোধ দিতে হয়। সময় মতো ঋণের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে উপর্যুপরি লাঞ্ছিত হতে হয় তাদের হাতে। তাছাড়াও ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে অনেকে আত্মহত্যা শ্লীলতাহানিসহ গৃহবন্দির খবরও শোনা যায় বিভিন্ন সময়। এব্যাপারে বিভিন্ন এনজিও কর্মকর্তাদের সাথে কথা হলে তারা জানান, বিভিন্ন কথা বলে যে উদ্দেশ্য ঋণ গ্রহীতাকে ঋণ দেয়া হয় তারা সে খাতে টাকা ব্যয় করে না ব্যক্তিগত বিভিন্ন কাজে লাগানোয় সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাছাড়া অনেকে আছেন একাধিক এনজিও’র সাথে সম্পৃক্ত। কালিগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াহেদুজ্জামান ইনকিলাবকে জানান, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় সমিতি গঠন করে সঞ্চয় সংগ্রহ ও সহজশতের্ ঋণ বিতরণের মাধ্যমে সুদের জমজমাট ব্যবসা চালিয়ে নিরীহ দরিদ্র শ্রেণীর মানুষকে রীতিমতো সর্বস্বান্ত করছে। এসব এনজিও জনগণকে তাদের চাহিদা মোতাবেক ঋণ দিয়ে ৪৬/৫২ কিস্তিতে শতকরা ১৫ টাকা হারে সুদ আদায় করে আসছে যা এক বছরে চক্র বৃদ্ধি হারে ৪০ টাকারও বেশি গিয়ে পৌঁছায়। এমন অনেকেই স্বনামে-বেনামে বিভিন্ন এনজিওভিত্তিক প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান থেকে চড়া সুদে ঋণ দিয়ে বন্ধকি সুদে ব্যবসা জমজমাট করে তুলেছে। সম্প্রতি কালিগঞ্জ ও শ্যামনগর বিভিন্ন এলাকায় গ্রাম্য সহজ-সরল মহিলা-পুরুষদের কাছ থেকে সঞ্চয়ভিত্তিক সমিতির নামে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আদায় করে অনেকে ভারতে চলে গেছে। বর্তমানে তাদের দ্বারা প্রতারিতদের হায় হায় অবস্থা হয়েছে অনেকের। সবমিলিয়ে কালিগঞ্জে শত শত পরিবার এনজিও ঋণ পরিশোধে নিঃস্ব হয়ে মহাসংকটে দিনাতিপাত করছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন