কুড়িগ্রামের চিলমারীতে জেঁকে বসেছে শীত। তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। তাপমাত্রা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিরশির ঠান্ডা বাতাস যোগ হওয়ায় তীব্র হয়ে উঠেছে শীত। হাসপাতালে বেড়ে যাচ্ছে ঠান্ডাজনিত রোগী। সবচেয়ে বেশি কষ্টে রয়েছে শিশু, বয়স্ক লোকের পাশাপাশি নিরীহ গবাদি পশু। তাছাড়া উপজেলার চরাঞ্চলে শীতের তীব্রতায় নাজেহাল জনজীবন। খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ সপ্তাহ জুড়ে দিনের চলমান ঠান্ডায় স্বাভাবিক কাজের গতি হারিয়ে ফেলেছেন। চলমান তীব্র শীতের কারণে উপজেলার হাটবাজারে লোকজনের উপস্থিতি অনেকটা কমেছে। বিশেষ জরুরি কাজ ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে আসছেন না। যারা ঘরের বাইরে বেড়িয়েছেন প্রত্যেকেই মোটা কাপড় অথবা চাদর মুড়ি দিয়ে বেড়িয়েছেন। শিশু ও বয়স্কদের বাইরে খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। অনেকেই শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন আগুন জ্বালিয়ে। ঘণ কুয়াশার কারণে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। অসহায় গরীবদের অনেকের প্রয়োজন অনুযায়ী গরম কাপড় না থাকায় নিদারুন কষ্টে দিন পার করছেন।
এদিকে ঠান্ডায় মাঠের কৃষক, রিকশা চালকসহ খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ তাদের নিজ নিজ পেশায় কাজ করতে পারছেন না। কথা হয় মন্ডলপাড়ার রিকশা চালক সাদেক মন্ডলের সাথে, তিনি নিয়মিত উপজেলার বিভিন্ন অলি-গলিতে সকাল থেকে দুপুর আবার বিকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত রিকশা চালান।
সরেজমিনে দেখা যায়, কলেজ মোড়ে রিকশার হুড তুলে চাদর গায়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছেন। তিনি জানালেন ঠান্ডা বাতাসে হাত-পা বরফ হয়ে গেছে, রিকশায় প্যাডেল মারতে পারছি না। বেশি আয় করতে পারছিনা। ছোট কুষ্টারী এলাকার ষাট উর্ধো বয়সী দিনমুজুর মোহাম্মদ আলী জানান, খুব ঠান্ডার কারণে ধান রোপনসহ মাঠের কোন কাজ করতে পারছি না। সংসার চালানো কঠিন হয়ে পরেছে। শরিফেরহাট এলাকার কৃষক আমিনুল ইসলাম বীর বলেন, তীব্র ঠান্ডার কারণে বোরো ধান রোপনের কামলা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অধিক মূল্যে রোপনের কাজ করা লাগছে।
উপজেলার চরাঞ্চলগুলোতে বাতাস বেশি লাগায় শীতের তীব্রতা বেশি এমনটি বললেন নৌকা চালক আলম মিয়া। তিনি আরও বলেন, ঘণ কুয়াশার কারণে দিনের বেলায়ও নৌকা চালাতে পারিনা। কিছু দেখা যায় না । মানুষের হাট-বাজার করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছে ঠান্ডা জনিত বিভিন্ন রোগে।
উপজেলা সদর হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে শীত জনিত নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে এর মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যাই বেশি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ঠান্ডা জনিত কারণে রোগির সংখ্যা বেড়ে গেছে, বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক লোকেরা বেশি চিকিৎসার জন্য আসছেন। শ্বর্দি, কাশি, জ্বর, নিউমনিয়া রোগির সংখ্যা বেশি। তীব্র ঠান্ডার কারণে অনেকেই বিপদে পরেছেন গবাদি পশু-পাখি নিয়ে। ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছে অনেক গবাদি পশু।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, ঠান্ডার কারণে গবাদি পশুর সমস্যা নিয়ে অফিসে আসছেন, এর মধ্যে শ্বর্দি, জ্বর, খুড়ারোগে আক্রান্ত প্রাণির সংখ্যাই বেশি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন