শিশু দিবাযত্ম কেন্দ্রগুলো যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য নতুন একটি আইন করতে যাচ্ছে সরকার। এই আইন পাস হলে দিবাযত্ম কেন্দ্র স্থাপন করতে হলে সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন ও সনদ নিতে হবে। কোনো অব্যবস্থাপনা হলে বা শিশু হারিয়ে গেলে সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদান্ডের পাশাপাশি পাঁচ লাখ পর্যন্ত জরিমানার বিধান রেখে শিশু দিবাযত্ম কেন্দ্র আইন, ২০২১ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
এছাড়া সামরিক শাসনামলে জারি করা অধ্যাদেশগুলো আগামী জুন মাসের মধ্যে আইনে পরিণত করার নির্দেশনা এবং মহাবিপন্ন শকুন রক্ষায় ব্যথানাশক ভেটেরিনারি কিটোপ্রোফেন জাতীয় ওষুধের উৎপাদন বন্ধের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ আইনের অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, শিশু দিবাযত্ম কেন্দ্র আইন গত আড়াই বছর ধরে ঘোরাঘুরি করছিল, গত তিন-চার মাসে একটু কেয়ার নিয়ে এটা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ আইন প্রবর্তন হলে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিজ ব্যবস্থাপনায় নির্ধারিত শ্রেণির কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনার পাশাপাশি আইনের অধীন নিবন্ধন সনদ নিয়ে শিশু দিবাযত্ম কেন্দ্র পরিচালনা করতে পারবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান শিশু দিবাযত্ম কেন্দ্র খুলতে চাইলে কীভাবে তা করতে হবে খসড়ায় তা বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে। নির্ধারিত শিশু বা ক্ষেত্রমতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর প্রয়োজনীয় সেবা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, নিরাপত্তা, চিকিৎসা, বিনোদন, চিকিৎসা, শিক্ষা ও শিশুর জন্য অনুকূল পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতি তিন মাসে একবার করে শিশুদের অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে হবে। বাংলাদেশে বর্তমানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১১৯টি এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০টি শিশু দিবযত্ম কেন্দ্র রয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ আইন পাস হওয়ার পর অনুমোদন ছাড়া কেউ শিশু দিবাযত্ম কেন্দ্র পরিচালনা করতে পারবে না। অনুমোদন ছাড়া এসব পরিচালনা করলে অপরাধ হবে। শিশুর জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্ন, কর্তব্যে অবহেলা, শিশুর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করলে দন্ড দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে শক্ত মেসেজ সবাইকে দেয়া হয়েছে। যাতে কোনো রকমের কেয়ারলেস বা ইমোরাল বা আইনবহিভর্‚ত কোনো কাজ করা যাবে না। শিশু দিবাযত্ম কেন্দ্র থেকে কোনো শিশু হারিয়ে গেলে ১০ বছর কারাদন্ডের পাশাপাশি পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান থাকছে নতুন আইনে। যেসব শিশু দিবাযত্ম কেন্দ্র এখন পরিচালিত হচ্ছে, নতুন আইন পাস হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে সেগুলোকে নিবন্ধন নিতে হবে। তখন সবগুলো শিশু দিবাযত্ম কেন্দ্র মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে আসবে। তিনি বলেন, নতুন আইন পাস হওয়ার পর শিশু দিবাযত্ম কেন্দ্র পরিচালনার জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি নীতিমালা করবে, সেখানে সব বিষয়ে বিস্তারিতভাবে বলে দেয়া হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, একটা উল্লেখযোগ্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২০১৩ সালে রুলিং দেয়া হলো হাইকোর্ট থেকে যে, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট থেকে ’৭৮ সাল পর্যন্ত এবং ’৮২ থেকে ’৮৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে অর্ডিন্যান্সগুলো (অধ্যাদেশ) করা হয়েছিল সেগুলো বাছাই করে প্রয়োজনীয় আইন করতে হবে। আর যেগুলোর প্রয়োজন নেই সেগুলো ড্রপ করে দিতে হবে। এগুলোর কয়েকশ’ আইন হয়ে গেছে। এখন ৫৯টি আইন বাকি আছে। প্রত্যেক মন্ত্রণালয় অনুযায়ী লিস্ট করে দিয়ে দেয়া হয়েছে এবং কেবিনেট থেকে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে আগামী জুন মাসের মধ্যে অবশ্যই এগুলো আইনে পরিণত করবে। এজন্য কিছু নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অনেক নতুন সচিব আসছেন তারা হয়তো জানেন না। তাদের নিয়ে আমরা আগামী ২০ জানুয়ারি বসে গাইডলাইন দিয়ে দেবো। যাতে আগামী জুন মাসের মধ্যে এগুলো সংসদে পাঠানোর মাধ্যমে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়।
শকুন রক্ষায় উৎপাদন বন্ধ হচ্ছে কিটোপ্রোফেন
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। আমাদের দেশে খুবই ডেনজারাসলি শকুনের সংখ্যা কমে গেছে, খুবই বিপজ্জনক অবস্থায়। সত্তরের দিকে দেশে ৫০ হাজারের মতো শকুন ছিল, এখন তাদের (মন্ত্রণালয়) হিসাবে মাত্র ২৬০টি আছে। তাও ক্রিটিক্যালি অবস্থায় আছে। এটার অন্যতম কারণ হলো কিটোপ্রোফেন জাতীয় ব্যথানাশক ইউজ করার কারণে এ ওষুধটা শকুনের মধ্যে গেলে মারা যায়।
আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ফার্মাসিউটিক্যালস, ড্রাগ কোম্পানি ও এক্সপার্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। এ কিটোপ্রোফেন ওষুধ যদি বন্ধ না করা যায় তাহলে শকুন এদেশে বাঁচবে না। শকুন যদি না থাকে সেক্ষেত্রে পুরো দেশের মধ্যে যে পরিমাণ মৃত পশু-পাখি থাকে সেগুলোতো পরিবেশ নষ্ট করে রোগজীবাণু ছড়ায়। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অন্যতম একটা উপজীব্য হিসেবে শকুন কাজ করে। সেজন্য তারা বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা, সভা-সিম্পোজিয়াম করে সিদ্ধান্তে আসছে এটা বন্ধ করতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কিটোপ্রোফেন জাতীয় ব্যথানাশক ওষুধ বন্ধ করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ম্যালোক্সিক্যাম নামে একটা ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে। এটার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুব কম, এটা ব্যবহার করলে শকুন বা অন্য পাখির ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা হবে না, লাইফ রিস্ক হবে না, মন্ত্রিসভা এটাও অনুমোদন করেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন