বিদেশি ফুল জারবেরা, বিদেশি ফুল হলেও এখন দেশের মাটিতেই চাষ হচ্ছে এই ফুল। জারবেরা চাষ লাভজনক হওয়াতে অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে এই চাষ। সেইদিক থেকে পিছিয়ে নেই ফুলনগরী খ্যাত ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা। সেই এলাকার ৯ বন্ধু শাহাদৎ, মহিদুল, শামিম, হাফিজ, মিটুল, আজিম, মোক্তার, জামাল, শামিমুর মিলে গড়ে তুলেছেন বিশাল এক জারবেরা ফুল বাগান। সকলেই তারা কৃষক পরিবারের সন্তান। পরস্পরের প্রতি আস্থা আর বিশ্বাস এতোটাই মজবুত যে, গত প্রায় ১০ বছর ধরে এলাকার কৃষকদের উৎপাদিত ফুল কিনে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় জেলায় নিয়ে ব্যবসা চালিয়েছেন। এখন সকলেই হয়েছেন আর্থিকভাবে স্বচ্ছল। পরে তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেরাই চাষ করেছেন বিদেশি জাতের ব্যয় বহুল জারবেরা ফুল।
সরেজমিনে বালিয়াডাঙ্গা বাজার সংলগ্ন গোপিনাথপুর গ্রামের মাঠে গেলে দূর থেকে নজরে আসে ৯ বন্ধুর ঐক্যের জারবেরার সেট। ক্ষেতে পৌছে দেখা যায় লাল, সাদা, হলুদ ও গোলাপিসহ ৮টি বাহারি রঙের ফুল ধরে আছে। এই ফুলের কোন গন্ধ নেই কিন্তু দেখতে অপরুপ লাগছে। প্রতিটি গাছে রয়েছে একাধিক ফুল। কোনটি ফুটন্ত. কোনটি অর্ধ ফুটন্ত আবার কোনটি সবেমাত্র কড়ি। যা বিশেষ নজদারিতে রেখে পরিচর্যা সানানো হচ্ছে ফেব্রæয়ারি ঘিরে। কেননা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ বিভিন্ন দিবস পালন হবে এ মাসেই। এ সময় ফুলের কাটতি হবে বিরাট। তাই বাজার ধরতে ব্যস্ততার সীমা নেই তাদের।
বন্ধু হাফিজুর রহমান জানান, দেশের ফুলের চাহিদা মেটাতে যশোরের গদখালীর পরেই ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের ত্রিলোচনপুর অবস্থান। বিভিন্ন দেশি বিদেশি জাতের ফুল এলাকা থেকে কিনে আমরা ৯ বন্ধু একসাথে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে বিক্রি করতাম। যা লাভ হতো সকলেই সমান ভাগ করে নিতাম। কারও টাকা কম বেশি হলেও হাসি মুখে মেনে নিয়েছি। আবার কারও সংসারে বিপদ আপদ আসলে রক্তের ভাইয়ের মতো এখনও পাশে থাকি। এমন ঐক্যের মধ্যদিয়েই নিজ এলাকার বেলেডাঙ্গা-গোপিনাথপুর মাঠে দেড় বিঘা জমি দেড় লাখ টাকা দিয়ে ইজারা নিয়ে ব্যয় বহুল জারবেরার চাষ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার এসোসিয়েশনের সভাপতি যশোরের আব্দুর রহিম জানান, জারবেরা বিদেশি জাতের ফুল। এ ফুলের চাষ করতে অভিজ্ঞতাও একটি পুজি। জারবেরার ফুল একবার ক্ষেতে রোপন করলে কমপক্ষে ৩ বছর ক্ষেত থেকে ফুল পাওয়া যায়। ফুলের স্টিক ক্ষেত থেকে তোলার পর কমপক্ষে ১২ থেকে ১৫ দিন সতেজ রাখা যায়। একবার ফুল ধরা শুরু হলে সারা বছর ফুল পাওয়া যায়। গাছের কান্ড থেকে নতুন ডালপালা হয়ে নতুন কড়ি হয়। একটি গাছ তার জীবনচক্রে বছরে কমপক্ষে ৫৫ থেকে ৬০টি ফুল দেয়। দাম একেবারে কমে গেলেও প্রতিটি ফুল কমপক্ষে ৭ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হয়। আর দাম বেশি হলে তো কথায় নেই।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অফিসার হুমায়ন আহম্মেদের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান, বালিয়াডাঙ্গা বাজারের নিকটবর্তী একটি মাঠে ৯ বন্ধু মিলে ভারতীয় জাতের জারবেরার চাষ করেছেন। কয়েকদিন তিনি ক্ষেতও পরিদর্শন করেছেন। ক্ষেতে দাঁড়ালে নানান রঙের ফুল দেখলে মন ভরে যাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে ৯ বন্ধুই লাভবান হবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন