শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

হাইড্রোফনিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ

রাসায়নিক ছাড়াই ফসল উৎপাদনে সফল ছয় বন্ধু

রুবাইয়া সুলতানা বাণী, ঠাকুরগাঁও থেকে | প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৫ এএম

মাটিতেই সবজি চাষ হয়। আর এটিই বাস্তবতা। মাটিবিহীন সবজি চাষের কথা বললে বলা হবে স্বপ্ন কিংবা উদ্ভট তথ্য। ছয় বন্ধু মিলে প্রমাণ করেছেন স্বপ্ন, কল্পনা কিংবা উদ্ভট নয়, বাস্তবতা হচ্ছে মাটিবিহীন সবজি চাষ সম্ভব। আর এ কাজটি করেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের ভুল্লি থানার খলিশাকুড়ি এলাকার ছয় তরুণ।

ডিজিটাল পদ্ধতিতে আল আমিনসহ ছয় বন্ধু মিলে অক্লান্ত প্রচেষ্টায় সবজির পুষ্টিগুণ বজায় রাখার লক্ষ্যে মাটিবিহীন সবজি চাষে কাজ করছেন। একে বলা হয় হাইড্রোফনিক পদ্ধতি। ফ্লোরিডা হর্টিকালচার বিভাগের শিক্ষক থলি ব্যারীর পরামর্শে ছয় বন্ধু কাজ শুরু করেন। আল আমিনের তার বন্ধু নাহিদ হাসান, সাবা সাঈদ, হাসান, মাহমুদ ও বাপ্পীকে নিয়ে দুই বিঘা জমিতে ৭০ থেকে ৭২ লাখ টাকা খরচ করে হাইড্রোফনিক পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন শুরু করেন। ধান ছাড়াও পেয়ারা, সীম, বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, কাঁচামরিচ, লাউ, পান চাষ সফল হয়েছে।
হাইড্রোফনিক পদ্ধতিতে একটি টমেটো গাছ ৬ বছর পর্যন্ত বাঁচে এবং ফল দেয়। কিন্তু এটি সাধারণ মাটিতে সম্ভব নয়। এছাড়াও এর পুষ্টিগুণ সাধারণ টমেটোর চেয়ে অনেক বেশি। এক কেজি সাধারণ টমেটোর সমান হাইড্রোফনিক পদ্ধতির মাত্র তিনটি টমেটো।

মাটিবিহীন সবজি চাষের বিষয়ে কি করে আগ্রহী হলেন? এমন এক প্রশ্নের জবাব দিতে ইনকিলাবের মুখোমুখি হয়েছেন ছয় বন্ধুর মূল উদ্যোক্তা আল আমিন। তিনি বলেন, হুট করে এমন চিন্তা মাথায় আসেনি। অসুস্থ হয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরই চোখ খুলে যায়। আমাদের দেশ থেকে অনেকে চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন দেশের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। তেমনি তিনিও গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পর ভারতের এক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসক জানালেন অসুস্থতার জন্য দায়ী সবজি। যেসব সবজি খেয়েছি তাতেই লুকিয়ে ছিল অসুস্থ হওয়ার বীজ। সবজিতে ছিল না কোনো পুষ্টিগুণ। আর রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে ফলানো সবজি দিনের পর দিন খাওয়ার ফলে শরীরে অসুখ বাসা বেঁধেছে। চিকিৎসকের কথা শুনেই আল আমিন দেশে ফেরার আগেই সিদ্ধান্ত নেন পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সবজি উৎপাদন করবেন।

ডিজিটাল পদ্ধতিতে অল্প শ্রমিক দিয়ে বেশি সবজি চাষ করা যায়। সাধারণত জমিতে যে পানি ব্যবহার করা হয় তা হাইড্রোফনিক পদ্ধতির জন্য উযুক্ত নয়। পানি শোধন করার পর ব্যবহার করা হয়। প্রতি লিটার পানি শোধনে খরচ হয় ৪৪ টাকা এবং তা সবজিতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি যোগায়। দুই বিঘা জমিতে ব্যবহার করতে হয় শোধন করা সাত হাজার লিটার পানি। এর খরচ তিন লাখ আট হাজার টাকা।

উদ্যোক্তা আল আমিন জানান, তারা ছয় বন্ধু মিলে লেটুস পাতা লাগিয়েছেন। একটি ২০ ফিট লম্বা ও ৬ ফিট প্রস্থের স্ট্যান্ডে ৪০০টি গাছ লাগানো হয়েছে। এতে খরচ হয় ৩৮০ থেকে ৩৯০ টাকা। আর প্রতি কেজি লেটুস পাতা বিক্রি করেন ৬২০ টাকা করে। স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণ করে নিয়মিত রাজধানীতে চায়নিজ রেঁস্তোরা, পিৎজা হাট ও কেএফসিতে সরবরাহ করেন। এই লেটুস পাতার স্বাদ আরো অনেক বেশি।
কোন গাছে ফলন কেমন হবে সে তথ্য বলে দিবে মেশিন। কিংবা কেন কম ফলন হয়েছে সে খবরও ওই মেশিনই জানিয়ে দেবে। ঠাকুরগাঁওয়ের হাজীপাড়ার জনি নামে একজন জানান, হাইড্রোফনিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত সবজি খেয়েছেন। বাজারে যে সবজি বিক্রি হয় তার চেয়ে অনেক বেশি সুস্বাদু।
ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি অফিসের দুই কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন ও ইমরুল কায়েস ইনকিলাবকে বলেন, হাইড্রোফনিক পদ্ধতি হচ্ছে অনেক ব্যয়বহুল। এই পদ্ধতির চাষ সাধারণ মানুষের ধরা ছোয়ার বাইরে। তারপরও স্বল্প জমিতে অধিক ফসলের একটি অভিনব পদ্ধতি হলো হাইড্রোফনিক। ঠাকুরগাঁওয়ের আল আমিনের নেতৃত্বে ছয় বন্ধুরা কৃষিতে আধুনিককায়নে যে কাজ করছে যা সত্যিই গর্বের।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন