শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

হাজীগঞ্জের গ্রামাঞ্চলে চব্বিশ ঘণ্টায় চার ঘণ্টাও মিলছে না বিদ্যুৎ

প্রকাশের সময় : ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

‘আমাদের চাহিদা ৪৮ মেগাওয়াট পাচ্ছি ১৫ কিংবা ১৬ মেগাওয়াট’


কামরুজ্জামান টুটুল, হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর) থেকে

চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিদ্যুৎ বিতরণে গ্রাহক ভোগান্তি চরমে উঠেছে। জেলা কিংবা উপজেলা শহরগুলোতে বিতরণ ব্যবস্থা যাই হউক গ্রামাঞ্চলগুলোতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে বলে বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণসহ ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অপরদিকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি দাবি করছে চাহিদার চেয়ে অনেক কম বিদ্যুৎ পাওয়ার কারণে এই সমস্যা তৈরি হচ্ছে যা গত এক মাস ধরে চলে আসছে। নতুন করে শত শত লাইন দেয়ার পরে সম্প্রতি সময়ে বিদ্যুতের সীমাহীন লোডশেডিংয়ের কারণে গ্রাহকরা সরকারকে দুষশে। আবার অনেকে বলছেন, বিদ্যুৎ বিভাগে সরকারের মনিটরিং করার জন্য লোক লাগানো দরকার। কারণ তাদের কারণে জনগণ সরকারের উপর দোষ চাপাচ্ছে। চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১-এর আওতাধীন এলাকাসমূহে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহকদের কপাল থেকে লোডশেডিং শব্দটি এ যাবৎকাল পর্যন্ত রয়ে গেছে। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রামের গ্রাহকরা সর্বোচ্চ ৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছে। যে কারণে লোডশেডিংয়ের মাত্রা এতোটাই ছাড়িয়ে গেছে যে গ্রাহকরা বিদ্যুৎতের লোকজনের সাথে সাথে সরকারকে দোষারোপ কিংবা গালাগালি করতে দ্বিধা করছে না। আবার বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট সকল কাজে কিংবা ব্যবসায় সম্প্রতি সময়ে একেবারে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিশেষ করে সাধারণ গ্রাহকরা বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের উপর এতোটাই ত্যক্ত-বিরক্ত যে কোন সময় সড়ক অবরোধ কিংবা বিক্ষোভ সমাবেশ করার পরিকল্পনার কথা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কুমারডুগী ফিডারের ৬নং ফিডার এলাকা ঘুরে লোডশেডিংয়ের বাস্তবতা শোনা যায় গ্রাহকদের মুখে। বিভিন্নজন ক্ষোভ প্রকাশ করে ইনকিলাবকে বলেন, সকাল-দুপুর-বিকেল-সন্ধ্যা-রাতে লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে মেনে নেয়া যায় কিন্তু গভীর রাতে, ভোর রাতে, ফজর নামাজের পরে বা খুব সকালে লোডশেডিং আসে কোথা থেকে। এ সময় পাশ থেকে কয়েক যুবক এগিয়ে এসে বলেন, আমাদের বিদ্যুৎ অফিসে ভূত রয়েছে আর বিদ্যুতের লোকজনের উপর ভূতের আসর রয়েছে যার কারণে তারা বসে বসে লাইন নিয়ে শয়তানি করে যাচ্ছে। হাজীগঞ্জের রামপুর বাজারের বেশ কয়েকজন জানান, দিনে কিংবা সন্ধ্যায় সারা দেশে একযোগে অফিস-আদালত/ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান খোলা থাকে বাতি জ্বলে, ফ্যান চলে, এসি চলে বুঝলাম লোডশেডিং হয় কিন্তু গভীর রাত কিংবা ভোর বেলা বা সকালে তো ফ্যান ছাড়া অন্য কিছু চলে না তখন তো লোডশেডিং হওয়ার কথা নয়। আসলে বিদ্যুতের লোকজন আমাদের গ্রাহক মানুষ মনে করে না। রামপুর বাজারের ওয়ালটন এক্সক্লুসিভ শোরুমের মালিক আমিন ভূঁইয়া বলেন, সারা দিনে ঘণ্টা তিনের বিদ্যুৎ পাই। একটি ফ্রিজ বিক্রি করলে তা চেকআপের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য। অবিরাম লোডশেডিংয়ের বিষয়ে আমরা ব্যবসায়ীগণ আমাদের সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম, জেলা প্রাশসকসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দেবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। উপজেলার রাজারগাঁও বাজারের পোদ্দার বস্ত্রালয়ের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী দিলীপ পোদ্দার বলেন, দিনে রাতে মিলিয়ে বড়জোর ৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাই। আসছে ঈদ মার্কেটে এই রকম লোডশেডিং হলে ব্যবসা লাটে উঠবে। হাজীগঞ্জের বাকিলা ইউনিয়নের শ্রীপুর ল্যাবরেটরীজের সত্ত্বাধিকারী হেকিম অহিদুজ্জামান পাটোয়ারী বলেন, প্রচ- এই গরমে ফ্যানের নিচে বসে যে একটু ব্যবসা করবো সেই ভাগ্য পল্লী বিদ্যুতের কারণে সম্ভব হচ্ছে। ৫নং সদর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বাউড়া এলাকার আমিন হোসেনের ছেলে কলেজ ছাত্র আরমান কাউসার বলেন, পড়ালেখা বন্ধ হবার পথে। সারা রাতে সম্ভবত ২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। বাকিলা বাজারের জয় ফার্মেসির সত্ত্বাধিকারী অমল ধর বলেন, দিনে রাতে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাই। এ কারণে যেমনি ক্ষতি ব্যবসা-বাণিজ্যে তেমনি ক্ষতি হচ্ছে বাড়িতে। বাড়িতে বিদ্যুৎ থাকলেও বিদ্যুতের স্বল্প সরবাহের কারণে বাথরুমে গোসল করা বন্ধ হয়ে গেছে। হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার ১নং ওয়ার্ডের বলাখাল কাজী বাড়ির অবসরপ্রাপ্ত রেল কর্মকর্তা শামছল আলম বলেন, দিনে রাতে বড় জোর ৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাই। বলাখার জে এন উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজের কম্পিউটার ট্রেইনার মোঃ ইব্রাহিম বলেন, গত ১৫ দিন ধরে ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর ক্লাসে নিয়ে লোডশেডিংয়ের কারণে শিক্ষার্থীদের কিছু শিখানো যাচ্ছে না। হাজীগঞ্জের কালোচোঁ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মানিক হোসেন প্রধানিয়া বিদ্যুতের বিষয়ে ইনকিলাবকে বলেন, দিনে অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের এলাকায় সর্বোচ্চ ৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে। একই সুরে কথা বললেন, কলোচোঁ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের গোলাম মোস্তফা স্বপন। তিনি আরো বলেন, মনে হয় দিনে ২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি সমস্য হচ্ছে বিদ্যুতের যাওয়া আসার খেলা। একবার নিলে ফের দেবার সময় কয়েক মিনিটের মধ্যে ৩/৪ বার যাওয়া আসা করে। সীমাহীন লোডশেডিংয়ের বিষয়ে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সদর দপ্তর ১-এর জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মোঃ ইউসূফের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি তার মুঠোফোনটি রিসিভ করেননি। এর পরেই মুঠোফোনে কথা হয় এজিএম (অপারেশন এবং মেন্টেনেইনস) মোঃ আবু হানিফের সাথে, তিনি বলেন, আসলে আমরা চাহিদার অর্ধেক পরিমাণ বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। আমাদের চাহিদা রয়েছে ৪৮ মেগাওয়াট পাচ্ছি ১৫ কিংবা ১৬ মেগাওয়াট। আরেক প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, গত একমাস ধরে আমাদের এই পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবারহ দেয়া হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Engineer Harun Or Rashid ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১:৪২ পিএম says : 0
Amar sosur bari te last week e giye atota voganti te poresi ta vashay prokash korar moto na.current to jay e na sudhu majhe majhe ashe....eta kmn kotha???????atota birokto ami r konodin o hoini......reporter to vlo e bolesen 4 ghonta....2 ghonta properly thake kina setai sondeho..
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন