শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

সুন্দরবনের লবণাক্ততা কমাতে গড়াই খনন

আসতে শুরু করেছে সফলতা

এস এম আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়া থেকে | প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

গড়াই নদীর উৎসমুখে পলিমাটি ও বালি জমার কারণে গড়াই নদী হারিয়ে ফেলেছিলো তার যৌবন। গড়াই নদীর পলি ও বালির জন্য নাব্যতা সঙ্কটে প্রতি বছরই ভরাট হয়ে যায় গড়াই নদী। এতে জীব বৈচিত্র্যসহ পরিবেশের ওপর বিরুপ প্রভাব পড়ে। লবণাক্ততাও বৃদ্ধি পায় সুন্দরবনসহ নদী এলাকায়। সুন্দরবনকে লবণাক্ততার হাত থেকে রক্ষার জন্য ২০২০-২১ ড্রেজিং লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০.৫০ কি.মি.। অপসারণ করা হচ্ছে ৯৮.০০ লাখ ঘন মিটার বালু।
কুষ্টিয়া ছাড়াও মাগুরা, রাজবাড়ী, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর, যশোর ও খুলনা হয়ে সুন্দরবনে গিয়ে পড়েছে নদীটি। সুন্দরবন ছাড়াও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে নোনা পানির আগ্রাসন রুখতে বড় ভূমিকা রাখে গড়াইয়ের মিঠা পানি। এর ফলে আবহাওয়া, পরিবেশ জীববৈচিত্র্যসহ অত্র অঞ্চলের প্রায় ৫ কোটি মানুষের জান-মালের নিরাপত্তার উন্নতি হবে।
জানা যায়, সুন্দরবনসহ জীববৈচিত্র রক্ষায় গড়াই খনন প্রকল্প হাতে নেন সরকার। প্রতি বছর বর্ষার পর উৎসমুখে প্রচুর পলি পড়ে পদ্মা থেকে গড়াই নদীতে পানি প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে অক্টোবর-নভেম্বর মাসের দিকে গড়াই নদী শুকিয়ে যায়। এছাড়া কয়েক বছর অপরিকল্পিত খননে নদী একেবারে সঙ্কুচিত হয়ে আসে। তাই পলি ও বালি অপসারণে প্রতি বছরই ড্রেজিং করছে। গত ২০১৯-২০ পর্যন্ত খনন করেছে ১৩.১০ কি :মি. এবং বালি অপসারণ করেছে ৭০.২৯ লাখ ঘনমিটার। ২০২০-২১ ড্রেজিং লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০.৫০ কি. মি.। অপসারণ করা হচ্ছে ৯৮.০০ লাখ ঘন মিটার বালু। ৭টি ড্রেজারের মাধ্যমে এ খনন কাজ চলছে। প্রকল্পটির ময়োদ ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত। প্রকল্পটির ব্যয় ধার্য করা হয় ৫৯১.৫৮ কোটি টাকা। পরে মূল্য বাড়িয়ে ৬২৯.৪৩ কোটি টাকা।
গড়াই নদীর উৎসমুখ কুষ্টিয়ার তালবাড়িয়া হতে ৩৫০ মিটার প্রস্থ হয়ে ক্রমান্বয়ে ১২০ মিটার চওড়া করে মোট ৫৩.৭৫ কিলোমিটার ড্রেজিং করা হবে। এর মধ্যে নিজসব ড্রেজার দ্বারা ৪৫.২৫ কিলোমিটার খনন কাজ সম্পন্ন হবে। এতে ৪২৩.৯৮ লাখ ঘনমিটার বালি ও পলি অপসারণ করা হয়। আউট সোর্সিং এর মাধ্যমে ৮.৫০ কিলোমিটার খনন কাজ সম্পন্ন হয়। এতে ২৪.৬০ লাখ ঘনমিটার বালি ও পলি অপসারণ করা হয়েছে।
লবনাক্ততা কমিয়ে পানির প্রবাহ বাড়াচ্ছে গড়াই নদী প্রকল্প। গড়াই নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে আওয়ামী সরকার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা হলো নদী শাসন করে জমি পুনরুদ্ধার করা। এখানে ড্রেজিং করে প্রায় ১৭ বর্গকিমি জমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। যাতে ফসল করতে পারি, ফ্ল্যাড প্লেইন রাখতে পারি, শিল্পকারখানাসহ বিনোদন কেন্দ্র করতে পারি।’
চলতি মাসে কুষ্টিয়া সদরের মহানগরটেকে চলমান ‘গড়াই নদী ড্রেজিং ও তীর সংরক্ষণ’ প্রকল্প পরিদর্শনকালে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি এসব কথা বলেন।
নদীকে আগের রুপে ফিরিয়ে আনতে ১৯৯৭ সালে সর্বপ্রথম তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গড়াই নদীর মুখে মাটি কেটে পরীক্ষামূলক নদী খননের কাজ উদ্বোধন করেছিলেন। কিছু দিনের মধ্যই বৃষ্টির পানিতে মাটি ও বালুতে নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় ওই কাজে আর কোনও সুফল পাওয়া যায়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ‘গড়াই নদীকে সচল রাখতে পরিকল্পিতভাবে ড্রেজিংয়ের সিদ্ধান্ত হয়। সেই অনুযায়ী গত বছরের ২৪ অক্টোবর উৎসমুখ তালবাড়িয়া থেকে শুরু হয় খননকাজ। পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব কবির আনোয়ার ও আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি ওই কাজের পরিদর্শন করে তারাও খনন কাজের সন্তোষ প্রকাশ করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ড্রেজার মো. তাজমীর হোসেন জানান, গত অক্টোবর মাস থেকে তারা তালবাড়িয়াসহ কয়েকটি পয়েন্ট থেকে খননকাজ শুরু করে। নদীকে পুরোপুরি সচল রাখার স্বার্থে এবার পরিকল্পিত খননের ওপর জোর দেয়া হয়। সেই অনুযায়ী অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গড়াই নদীর উৎসমুখ কুষ্টিয়ার তালবাড়িয়া হতে ৩৫০ মিটার প্রস্থ হয়ে ক্রমান্বয়ে ১২০ মিটার চওড়া করে মোট
৫৩.৭৫ কিলোমিটার ড্রেজিং করা পুরো কাজ শেষ হলে পানিপ্রবাহ আরও বাড়বে। লবণাক্ততাও আরো কমবে। পুরো খননকাজ শেষ হলে নদীর চিত্র অনেকটা বদলে যাবে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন