শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ

মুসলমানদের প্রথম কেবলা মসজিদে আকসার ডাক

কে. এস. সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৫ এএম

মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া ইসরাইলের আগ্রাসী তৎপরতা অব্যাহত আছে। এই সঙ্গে মুসলমানদের প্রথম কেবলা বায়তুল মোকাদ্দাসে মসজিদে আকসার পবিত্রতা বিনষ্ট ও তার অবমাননা করার ধারাও বহাল আছে। অবৈধভাবে বসতি স্থাপনকারী ইসরাইলি ইহুদিরা এবার মসজিদে আকসায় তান্ডব চালাতে শুরু করেছে। ইসরাইলি সরকারের ইঙ্গিতে এরূপ অশুভ কর্মকান্ড ঘটানোর দুঃসাহস এটাই প্রথম বার নয়, এর আগেও বহুবার মসজিদে আকসার মর্যাদাহানিকর নানা কর্মকান্ডের কথা বিশ্ববাসীর অজানা নয়। জেরুজালেমে ইসরাইলের অবৈধভাবে নতুন নতুন ইহুদি বসতি স্থাপন বাধাহীনভাবে চলতে থাকার এ ন্যাক্কার পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। কেননা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সকল প্রস্তাব-সিদ্ধান্ত অহরহ উপেক্ষা করে তার আগ্রাসী সম্প্রসারণনীতি বাস্তবায়িত করে চললেও তাকে বাধা দেয়ার কেউ নেই।

সকলে যেন ভুলে গেছে, ১৯৬৯ সালেল ২১ আগস্ট তারিখে যখন ইসরাইল মসজিদে আকসায় অগ্নি সংযোগ করেছিল, তখন সমগ্র মসুলিম বিশ্ব এ ঘৃণ্য অপরাধের বিরুদ্ধে বিক্ষব্ধ ও উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল এবং এ ঘটনার মাত্র এক মাসের মধ্যে মরক্কোর তৎকালীন বাদশাহ হাসানের আহব্বানে রাজধানী রাবাতে মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানগণ সমবেত হয়ে ওআইসি (ইসলামী সম্মেলন সংস্থা) কায়েম করেছিলেন, এখন কোথায় সে সংস্থা?

মুসলিম উম্মাহ অত্যন্ত বেদনা, ক্ষোভ ও নিন্দার সাথে এই দুসংবাদ শ্রবণ করেছে যে, আল আকসা মসজিদে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীরা তান্ডব চালিয়েছে। ১৯৬৯ সালে ইসরাইল কর্তৃক মসজিদে আকসায় অগ্নিসংযোগ হতে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের তান্ডব পর্যন্ত অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে গেছে। এ দুটি ঘটনার মাঝখানেও ইসরাইল মসজিদে আকসার অবমাননার বহু ঘটনার জন্ম দিয়েছে। এসব ঘটনার ফলাও প্রচার তো দূরের কথা, বলতে গেলে নীরবে যেন ঐ সব ঘটনা বিস্মৃতির অন্তরালে চলে গেছে। ফলে আল-আকসায় ইসরাইলিদের তান্ডব প্রমাণ করে যে, ওরা অদূর ভবিষ্যতে মুসলমানদের এ প্রথম কেবলাকে ভারতের বাবরি মসজিদের ন্যায় নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়।

প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ২০০৩ সাল থেকেই ইসরাইল কর্তৃপক্ষ বসতি স্থাপনকারীদের আল-আকসা মসজিদে প্রবেশের অনুমতি দিয়ে আসছে। ফিলিস্তিনি ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের আপত্তি ও সতর্কতা সত্ত্বেও ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা মসজিদে প্রবশে করে উস্কানি মূলক আচরণ করে আসছে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে তাদের সম্পর্কে আরোও বলা হয়েছে যে, ‘টেম্প মাউন্ট’ হিসেবে ইহুদিদের কাছে পরিচিত এই স্থানটি তাদের কাছে পবিত্র স্থান। ইহুদিদের দাবি প্রাচীন দুইটি ইহুদি মন্দির এর নিচে অবস্থান করছে। ১৯৬৭ সালে ছয় দিনের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর ইসরাইলি বাহিনী মসজিদুল আকসাসহ পুরো জেরুজালেম শহর দখল করে নেয়। তখন থেকেই মসজিদটি ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অধিকৃত এলাকাগুলোতে ইসরাইল ইহুদি বসতি স্থাপন করে তাদের জনসংখ্যা, জনবসতি ক্রমাগত বৃদ্ধি করে চলেছে এবং তাদেরকে লেলিয়ে দেয়া হচ্ছে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন এবং তাদের পৈত্রিক ভূমি হতে উচ্ছেদ করার জন্য। এ সবই হচ্ছে ইসরাইলি বাহিনীর ছত্রচ্ছায়ায়।

দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা.) এর খেলাফত আমলে জেরুজালেমে মুসলিম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধ পর্যন্ত জেরুজালেম সম্পূর্ণ মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সুতরাং ইহুদিদের প্রাচীন শহরের দাবি অসার, তবে তারা মুসলিম শাসনের সুফল ভোগ করেছে সর্বদা। তাদের মনগড়া দাবিকে ভারতে বাবরি মসজিদ ধ্বংসকারী উগ্র হিন্দুদের দাবির সাথে তুলনা করা যায়। রাম মন্দিরের দাবি করে তারা বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে। মনে হয়, ইহুদি বসতি স্থাপন উগ্রবাদী ইহুদিরা মসজিদে আকসা ধ্বংস করে রাম মন্দিরপন্থিদের ন্যায় সেখানে ইহুদি মন্দির স্থাপনের পাঁয়তারা করছে। বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী ইহুদিদের জেরুজালেমে এনে তাদের বসতি স্থাপন করানোর এ রহস্য অনুধাবন করা কঠিন নয়। পবিত্র মক্কা-মদীনার প্রতিও তাদের কুদৃষ্টি রয়েছে, সে কথাও কারো অজানা নয়।

ইসরাইলের কূট কৌশল মুসলমানদের সাথে প্রতারণার শামিল, ইসলামের ইতিহাসে তার বহু জ¦লন্ত প্রমাণ রয়েছে। ইহুদি স্বার্থ রক্ষায় ইসরাইল চানৈক্যনীতিকেও হার মানায়। জাতিসংঘের সাথে যুক্ত থেকে ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ অধিকারকে জলাঞ্জলি দিয়ে তার আগ্রাসী নীতিকে বাস্তবায়িত করে চলেছে। মুসলমানদের চির দুশমন ইহুদিদের এ রাষ্ট্র ১৯৪৮ সালের ১৫ মে রাতের অন্ধকারে অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠিত তহয়। রাষ্ট্রকে বহুকাল কোন মুসলিম রাষ্ট্র কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেয়নি। আফ্রিকার দেশ মিসরের পাদঙ্ক অনুসরণ করে ইদানিংকালে মধ্যপ্রাচ্যের যে সব আরব দেশ ইসরাইলকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিয়েছে বলে জানা যায়, তাদের কোন এলাকা ইসরাইলি অধিকারে থাকলে তা পূণরুদ্ধারে ইসরাইলের সাথে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষীণ যৌক্তিকতা থাকতে পারে। যেমন- মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট আনোওয়ার সাদাত গোপনে ‘তেল আবিব’ সফর করে ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে চরমভাবে নিন্দিত ও সমালোচিত হয়েছিলেন। এমনকি আরবলীগ তাকে এক ঘরে করেছিল। তথাপি তিনি ’৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরাইল অধিকৃত গুরুত্বপূর্ণ মিসরীয় এলাকাগুলো ইসরাইলের কাছ থেকে ফেরত পেতে সক্ষম হয়েছিলেন। সাম্প্রতিক কালে যে সব আরব দেশ ইসরাইলকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দানের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছে বলে প্রকাশ, তাদেরও কোন ভূখন্ড যদি ইসরাইলি অধিকারে থেকে থাকে তা পুনরুদ্ধার করার জন্য, ইসরাইলকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিয়ে থাকে, সেটা হবে মিসরের ন্যায় কৌশলগত স্বীকৃতি। কিন্তু ইসরাইলের ফাঁদে পড়ে কোন মুসলিম আরব রাষ্ট্র ইসরাইলকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দান করলে তা আত্মঘাতি হবে বলে অনেকে মনে করেন। কেননা এতে ইসরাইল তার আগ্রাসী তৎপরতা বাড়াতে অধিক উৎসাহিত হবে, যা ফিলিস্তিনিদের প্রতি অবিচারের শামিল বলে গণ্য হবে।

২০০৩ সাল থেকে এ যাবত ইসরাইল তার আগ্রাসী তৎপরতার মাধ্যমে মসজিদে আকসার ন্যায় মুসলমানদের এ পবিত্রতম স্থানে কতবার হামলা চালিয়েছে এবং এর মর্যাদা কীভাবে ক্ষুণ্ণ করে চলেছে তা এক বড় প্রশ্ন। এ ব্যাপারে আরব বিশ্বের মুসলমানদেরকে সদা সর্বদা সজাগ-সতর্ক থাকতে হবে। শত্রু কবলিত মুসলমানদের প্রথম কেবলা বায়ুতুল মোকাদ্দাস-মসজিদে আকসা ডাক দিচ্ছে তাকে রক্ষা করতে, মুক্ত করতে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন