করোনাভাইরাসের এই মহামারীতে মানুষ আজ দিশেহারা। ভাইরাসের এই প্রকোপে মানুষের জীবণ আজ মেঘাচ্ছন্ন। চারদিকে মানুষের আত্ননাতে জীবণ যখন বিমর্ষ ঠিক তখনি এলো সৃষ্টিকর্তার পবিত্র নেয়ামত মাহে রমজান। সরকার এবং ডাক্তারের পরামর্শ হলো বাড়িতে থেকে পুষ্টিকর খাবার খেয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো এবং বাহিরে কম যাওয়া । রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং সুস্থভাবে রোজা পালনের পাশাপাশি খেতে হবে স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাবার । যা জোগাবে মনের ফুর্তি এবং শরীরের পুষ্টি। করোনার এই প্রকোপে মানুষ যখন জীবিকা নিয়ে উদ্বিগ্ন তখন দামী পুষ্টিকর খাওয়া সত্যিই এক দুঃসাধ্যের কাজ । সারাদিন রোজা রেখে একটু পুষ্টিকর খাওয়া খেতে কার না ইচ্ছা হয়। স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাবার তৈরিতে চাই পুষ্টিকর খাদ্য উপাদান। তাই করোনার এই মহামারিতে ইফতারের সময় এমন খাবার রাখাতে হবে,যা বানাতে অল্প উপকরন লাগবে এবং অধিক পুষ্টি পাওয়া যাবে। এমন পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে যেটা অনেক সস্তা, এবং যেই খাবার থেকে পাওয়া যাবে কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, প্রোটিন, ভিটামিন এবং আয়রন ।
একটা প্রবাদ আছে “হায়রে কপাল মন্দ চোখ থাকিতে অন্ধ” করোনার এই মহামারীতে আজ তা প্রমাণ হলো। আমরা এতটাই অন্ধ যে হাতের নাগালে কম দামে অধিক পুষ্টিসম্পন্ন ডিমের গুনাগুন টাই বুঝি না। আমরা এতটাই অবুঝ যে, সস্তা পুষ্টিসম্পন্ন এই খাবারটি না খেয়ে খাচ্ছি বেশি দামের রঙ্গিন খাবার। যা ভবিষ্যৎ’ প্রজন্মের জন্য রচিত হতে পারে এক ভয়ানক অধ্যায়। অনেকে আবার মনের অজান্তে সস্তা দামের পুষ্টিকর খাবারটিকে ভুলে যেতে বসেছে । তাই সবার সচেতনতার লক্ষ্যে আজ তুলে ধরে হলো ডিমের পুষ্টিগুণ গুলো । যা সহজে সবাইকে ডিম খাওয়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে সাহায্য করবে । সারাদিন রোজা রেখে শরীরকে চাঙ্গা রাখতে হলে ইফতারের মধ্যে ডিমের মেন্যুর কোন বিকল্প নেই । অথচ ডিমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অনেকের পরিস্কার ধারণা নেই। ডিমে আছে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন , অ্যামিনো এসিড, আয়রন, ভিটামিন এ-ডি- ই-বি ১২, কলিন, লুটেইন, যিয়ায্যানথিন, কোলেস্টেরল এবং আরো কিছু উপাদান। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে ডিমের প্রোটিন অত্যন্ত উচ্চ মানের।
১। প্রতিদিন পরিশ্রম করার পর আমাদের শারীরিক এনার্জি প্রয়োজন হয় । ডিমে থাকা ভিটামিন-বি , আমাদের খাওয়া খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে ।
২. আমাদের দৃষ্টি শক্তি উন্নতি করতে ডিমে থাকা ভিটামিন-এ এর গুরুত্ব অপরিসীম । যাহা রাতকানা রোগের ঝুঁকি কমায়।
৩. ডিমে থাকা ভিটামিন-ই আমাদের শরীরে থাকা ক্ষতিকর জীবানু গুলোকে ধ্বংস করে দেয় এবং শরীরে নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে যাহা ক্যান্সার এর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে ।
৪। কোলেস্টেরল নিয়ে আমরা সব সময় চিন্তায় মগ্ন থাকি। আমাদের সকলের মনে একটা ভুল ধারণা বাসা বেধেছে যে কোলেস্টেরল শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আমেরিকা হার্ট সংস্থা তথ্য মতে প্রতিদিন একজন মানুষের ৩০০ মি.গ্রাম কোলেস্টেরল প্রয়োজন। যাহা একটি ডিমে ১৮৬ মি.গ্রাম কোলেস্টেরল রয়েছে। ডিমে থাকা ওমেগা-৩ শরীরে থাকা কোলেস্টেরলের মাএা কমিয়ে তা নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে।
৫. ডিমে প্রায় ৩০০-৩৫০ গ্রাম কোলাইন থাকে যা লিভার , যকৃত ভালো রাখতে সাহায্য করে।
৬. ডিম ক্যালসিয়ামের সবচাইতে ভালে উৎস। আজকাল পেশীর ব্যাথা ও দাঁতের ক্ষয় সব বয়সের লোকের মধ্যে দেখা যায় । ডিমে উপস্থিত সালফার নখকে সুন্দর ও মজবুত করতে সাহায্য করে। দাঁত ও হাড়ের গঠন মজবুত করতে ডিমে থাকা ফসফরাস এর ভূমিকা অপরিসীম।
৭. ডিমের প্রোটিন অত্যন্ত উচ্চ মানের। ডিমে আছে অ্যামিনো এসিড যা শরীরে অধিক পুষ্টি জোগায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই একে সুপার ফুড বলে।
ডিমকে পরিপূরক খাদ্য হিসেবে নয়, মূল খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহর প্রদত্ত যতগুলো খাবার দেখি তার মধ্যে ডিম হলো সবচেয়ে বেশি পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর। তাই সব সময় মন প্রফুল্ল ও সতেজ এবং শরীরকে চাঙ্গা রাখতে হলে সব বয়সের মানুষের জন্য ডিম হলো অপরিহার্য।
যেখানে ১ টি সিগারেটের দাম ১০-১২ টাকা সেখানে একটি ডিমের দাম মাত্র ৬-৭ টাকা । এরচেয়ে কম দামে অধিক পুষ্টি সম্পন্ন খাদ্য পৃথিবীর কোথাও আছে বলে সন্দিহান। তাই ডিমের তুলনা শুধু ডিমই । তাই ইফতারীর সময় ডিমের একটা মেন্যু থাকাটাই স্বাভাবিক। ডিম দিয়ে তৈরি করতে পারি এগ সালাদ স্যান্ডউইচ , পটেটো এগ সালাদ, এগ চপ, ডিম পরোটা ,ডিম বার্গার, এগ রোল, ডিম কেক ইত্যাদি। সহজ মেন্যু হিসেবে সকলের জীবনে “ডিম আজ জাতীয় খাদ্যই বটে”।
লেখকঃ ব্যবস্থাপক, ঢাকা ব্রিডার্স এন্ড হ্যাচারী লিমিটেড।
সাবেক শিক্ষার্থী পশুপালন অনুষদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন