গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) উপজেলা সংবাদদাতা
পদ্মা নদীর রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় গত ২৮ আগস্ট তীব্র ¯্রােতের ঘূর্ণিপাকে পড়ে ডুবে যাওয়া ট্রলারসহ ১৪টি গরু চার দিনেও উদ্ধার হয়নি। উত্তাল পদ্মা-যমুনায় ট্রলার চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকলেও এ এলাকায় অন্তত ২ শতাধিক ট্রলার বহাল তবিয়তে প্রচ- ঝুঁকি নিয়ে কোরবানীর পশু, যাত্রী ও মালামাল পারাপার করছে। কিন্তু টনক নড়ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২৮ আগস্ট সকাল সাড়ে ৭টার দিকে দৌলতদিয়া ক্যানেল ঘাট এলাকা থেকে স্থানীয় ট্রলার মালিক জহির মন্ডলের ২২টি গরু বোঝাই একটি ট্রলার ৪নং ফেরিঘাট এলাকায় তীব্র ¯্রােত ও ঘূর্ণনের মধ্যে পড়ে ট্রলারটি ডুবে যায়। গরুগুলোর সাথে থাকা চার ব্যক্তি ও ৮টি গরু প্রাণে রক্ষা পেলেও বাকি ১৪টি গরু নিয়ে ট্রলারটি নদীর তীব্র ¯্রােতে বিশাল পদ্মায় হারিয়ে যায়। ৪ দিন পেরিয়ে গেলেও ডুবে যাওয়া ট্রলারটিসহ গরুগুলোর কোন হদিস মেলেনি। এ প্রসঙ্গে গরুর মালিক ফরিদপুর নগরকান্দার আ. সালাম জানান, কোরবানীর ঈদ উপলক্ষে কুষ্টিয়ার বানিয়াপাড়া হাট থেকে তিনি সাড়ে ১৬ লক্ষ টাকা দিয়ে ২২টি গরু ক্রয় করেছিলেন। ঢাকার গাবতলী হাটে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রাতেই ট্রাক যোগে দৌলতদিয়া ঘাটে আসেন। কিন্তু ঘাটে তীব্র যানজট থাকায় আরিচা ঘাটে উদ্দেশ্যে গরুগুলো ট্রলারে তুলেছিলেন। এদিকে গত মঙ্গল ও বুধবার দুইদিন সরেজমিন দৌলতদিয়া ঘাট ঘুরে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ক্যানেল ঘাট এলাকা হতে শত শত গরু ট্রলারে বোঝাই করে মানিকগঞ্জের আরিচা, ঝিটকাসহ বিভিন্ন ঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে। প্রতিটি ট্রলারে ২০-২৫টি গরুর সাথে অন্তত ৮-১০ জন করে মানুষ যাচ্ছেন। এ ছাড়া লঞ্চঘাটের পাশ থেকে পাটুরিয়া ঘাটের উদ্দেশ্যে যাত্রী বোঝাই করে ছেড়ে যাচ্ছে কয়েকটি ট্রলার। ফেরিঘাট এলাকায় বালু ব্যবসায়ীদের বালু পরিবহনের জন্য কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী ও পাবনা অঞ্চল থেকে আসা-যাওয়া করছে বেশ কয়েকটি ট্রলার। দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট সকলকে ম্যানেজ করে ট্রলার মালিকরা এভাবে ঝুঁকি নিয়ে তাদের ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। ঈদুল ফিতরের আগে-পরে শুধু যাত্রী পরিবহন করলেও আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে ট্রলার মালিকরা বেশি আয়ের উদ্দেশ্যে বেপরোয়াভাবে অতিরিক্ত পশু বোঝাই করে উত্তাল পদ্মা-যমুনা পাড়ি দিতে শুরু করেছে। দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মহসীন মিয়ার কাছে দেশের ব্যস্ততম দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট এলাকায় এভাবে ট্রলার চলাচলের বৈধতার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিআইডব্লিউটিএ’র অনুমোদন নিয়ে ট্রলারগুলো চলাচল করছে। এ প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটিএ’র আরিচা অঞ্চলের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর ফরিদুল ইসলাম জানান, বিআইডব্লিউটিএসহ তার জানা মতে কোন সংস্থা হতেই ট্রলারগুলোর কোন অনুমোদন নেই। উত্তাল পদ্মা-যমুনায় লঞ্চ ও ফেরির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে এ এলাকায় অবৈধ ভাবে বহু ট্রলার প্রচ- ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী, গবাদী পশুসহ পণ্যদ্রব্য পারাপার করছে। বন্ধের জন্য উভয় পাড়ের প্রশাসনকে বিভিন্ন সময় চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তারা অনুরোধ জানিয়েছেন। দু’একবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলেও যথারীতি ট্রলারগুলো চলাচল করছে। গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার পঙ্কজ ঘোষ জানান, নৌরুট এলাকায় ট্রলার চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এগুলো বন্ধের জন্য তারা মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করে থাকেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন