শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

বিদ্যালয় ভবনে হাঁটু পানি সড়কের ওপর পাঠদান

প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, সাতক্ষীরা থেকে

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার রাঢ়ীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান চলছে পানিবন্দি ক্লাস রুমে ও রাস্তার দু’ধারে বসে। পাঠদানের সময় গরমের ভেতর রোদে বসে আবার কখনো হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টিতে ভিজে থাকেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। লক্ষ্য একটাই আগামী ৩ মাস পরেই বার্ষিক পরীক্ষা। প্রতিবছর এহেন উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকবৃন্দসহ অভিভাবকবৃন্দ। সরেজমিন জানা যায়, বিদ্যালয়ে যেতে কোমলমতি শিশুরা অনেক সময় কাদা পানিতে পা পিছলে পড়ে বইখাতা, জামাকাপড় নষ্ট করে ফেলে। টিউবওয়েল ও লেট্রিন তলিয়ে যাওয়ায় সুপেয় পানি এবং সৌচাগারের প্রয়োজন মেটানো দায় হয়ে পড়েছে। গতবছর একই চিত্র ধারণ করেছিল এখানে। তখন একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার আর্থিক ও সার্বিক সহযোগিতায় বিকল্প পন্থায় অন্যের জমিতে ছাউনি দিয়ে কোনো রকমে বছর পার করা হয়। আরো দেখা যায়, রাঢ়ীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি একেবারে কপোতাক্ষের তীর ঘেঁষেই নির্মিত। বিদ্যালয়টিতে দু’টি বিল্ডিং থাকলেও তা পরিকল্পনা ছাড়াই নির্মাণ হয়েছে। ফলে বিদ্যালয়টি পানির ভেতর অবস্থান করছে। যা বছরের ৬টি মাস জলাবদ্ধ পানিতে নিমজ্জিত থাকে। শ্রেণীকক্ষে ২-৩ ফুট পানি জমে থাকায় শিক্ষকরা বেঞ্চের উপর বেঞ্চ দিয়ে উঁচু মাচা করে পাঠদান দিলেও বর্তমানে সেটিও অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় রেখে রাস্তার দু’ধারে বসে পাঠদান করানো হচ্ছে। ওই বিদ্যালয়ের খুলনা বিভাগীয় শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকা শিখা রাণী চৌধুরী জানান, প্রতিবছর আমরা হাঁটু পরিমাণ কাদা পেরিয়ে বছরের ৬-৭টি মাস জলের ভেতর ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস নিয়ে থাকি। বিদ্যালয়ে মোট ৩৫০ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে। প্রতিবছর তাদের পরীক্ষার ফলাফল অনেক ভালো। এতো কষ্টের পরে সমাপনী পরীক্ষায় শতভাগ পাসসহ জিপিএ-৫ পাওয়ায় সকল দুঃখ-কষ্ট নিবারণ হয়ে যায়। একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইফতেখার আলম সাংবাদিকদের জানান, গত বছরও মাইকেল মধুসূদন সড়কের রাস্তার দু’ধারে ক্লাস নিলে সকল প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া ফলাও করে আমাদের বিদ্যালয়টি দেখালেও অদ্যবধি কোনো সুফল আমরা পায়নি। বিদ্যালয়টির পরিচালনা পরিষদের সহ-সভাপতি নূর আলী গাজী হতাশা প্রকাশ করে বলেন, কতো কষ্টে আমাদের শিক্ষকরা পানির ভেতর থেকে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন, তা স্ব-চক্ষে না দেখলে বোঝার উপায় নেই। তিনি বলেন, এই জলাবদ্ধতার হাত থেকে রেহাই দিতে সকলের সহযোগিতা একান্ত দরকার। তালা উপজেলার কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ গোলাম মোস্তফা বলেন, বিদ্যালয়টির জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে পরিত্রাণ পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যদি এখানে একটি সাইক্লোন সেন্টার স্থাপন করা যায়, তবে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘব করা সম্ভব হতো। তালা উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার রাজমনি জানান, রাঢ়ীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. ফরিদ হোসেন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন