বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

নিষিদ্ধ পলিথিনে বাজার সয়লাব

ভারত থেকে আমদানি করা চালও প্লাস্টিকের বস্তায় সরকার আন্তরিক হলে পলিথিন বন্ধ করা সম্ভব : পবা পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনে ১৯৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ দশম

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

কাঁচাবাজার, মুদিদোকান, শপিং মল, চেইনশপ সর্বত্রই নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এ পণ্য নিয়ন্ত্রণে মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হলেও এর উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার এতটুকুও কমেনি। নির্ভরযোগ্য বিকল্পের অভাবে বাজার সয়লাব হয়ে আছে নিষিদ্ধ পলিথিনে। মাঝে হাতে ঝুলিয়ে ব্যবহার উপযোগী পলিথিন ব্যাগ বন্ধ ছিল। কিছুদিন যাবৎ সেই ব্যাগও বাজারে ফেরত এসেছে।
রাজধানীর খিলগাঁও রেলগেট, শান্তিনগর বাজার, ফকিরাপুল ও মালিবাগ রেলগেট বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাটজাত মোড়কের বদলে প্লাস্টিক বা পলিথিনের বস্তায় আটা, ময়দা, চিনি, ডাল, আদা, রসুন বাজারজাত করা হচ্ছে। এমনকি ভারত থেকে যে চাল আমদানি করা হয়েছে সেটাও পলিথিনের বস্তায়। তবে কিছু চালের দোকানে বেশিরভাগই পাটের বস্তা রয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, পলিথিনের কারণে পরিবেশের ক্ষতি হোক, তারা তা চান না। কিন্তু পলিথিনের মতো সহজলভ্য কোনো পণ্য বাজারে নেই। খিলগাঁও রেলগেট বাজারে কথা হয় ব্যাংক কর্মকর্তা সাইদুর রহমানের সঙ্গে। তার হাতে হাতওয়ালা পলিব্যাগে জবাই করা মুরগি। পলিথিনের দিকে তাকিয়ে ইশারা করতেই তিনি বললেন, দোকানদার দিলে কি করব। চারদিকেই তো পলিথিন আর পলিথিন। বন্ধ করার ব্যবস্থা তো দেখি না। এটা বন্ধ হওয়া দরকার কী না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঠেকাতে পলিথিনের ব্যবহার অবশ্যই বন্ধ করা উচিত এবং তা দ্রুত করা উচিত। এ জন্য সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান। সরকার আন্তরিকভাবে না চাইলে পলিথিন বন্ধ করা সম্ভব না বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। ফকিরাপুল বাজারের ফল বিক্রেতা মো. লোকমান বলেন, একশ’ কাগজের ঠোঙা দুই থেকে তিনশ’ টাকায় কিনতে হয়। অন্যদিকে এক কেজি পলিথিন কেনা যায় ১৫০ টাকায়। এতে দুই থেকে আড়াইশ’ পলিথিন হয়। পলিথিন কম দামে পাওয়া যায় বলে তারা ব্যবহার করেন।

বাংলাদেশে পলিথিন নিষিদ্ধ হয় ২০০২ সালে। পরিবেশবিদরা বলছেন, পলিথিন নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ। আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের ব্যর্থতার কারণেই পলিথিন থেকে মুক্তি মিলছে না। গত বছরের শুরুতে উচ্চ আদালত পলিথিন এবং একবার ব্যবহার উপযোগী প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বন্ধের ব্যবস্থা নিতে এক বছর সময় বেঁধে দেন। কিন্তু তাতেও বন্ধ হচ্ছে না পলিথিনের উৎপাদন ও বিপণন।

শুধু বাংলাদেশ নয়, পলিথিন নিয়ে চিন্তিত সারা বিশ্ব। প্রতিদিন লাখ লাখ টন পলিব্যাগ ব্যবহৃত হচ্ছে, বর্জ্য হিসেবে তা পরিবেশ দূষণ করছে। পলিথিন নিষিদ্ধের পর বিকল্প হিসেবে সে সময় কাগজের ঠোঙার ব্যবহার কিছুটা বেড়েছিল। কিন্তু পলিথিনের চাপে কাগজের ঠোঙাও খুব বেশি দিন টিকতে পারেনি। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশও ২০ বছর ধরে পলিথিন দূষণ নিয়ে চিন্তিত। ঢাকার জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হিসেবে পলিথিনকে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু এসব নিয়ে শুধু আলোচনাই সার।

সরকার বাজারে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার কমাতে বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তার পুরোবাস্তবায়ন হয়নি। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ধান, চাল, ভুট্টা, সার, চিনিসহ ১৯টি পণ্যের মোড়ক হিসেবে প্লাস্টিক বা পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। তখন কিছু অভিযানও চালানো হয়। কিন্তু জনবল ও তদারকির অভাবে অভিযানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়নি। ফলে সরকারের সে উদ্যোগের সুফল আর মেলেনি। এ ছাড়া রাজধানীর পুরান ঢাকার বিভিন্ন অলি-গলিতে পলিথিন উৎপাদনের যে সব কারখানা রয়েছে পরিবেশ অধিদফতর সেগুলোতে মাঝেমধ্যে অভিযান চালায়। তবে এসব অভিযান লোক দেখানো বলে মনে করেন পরিবেশবিদরা। পরিবেশ অধিদফতরের একশ্রেণির কর্মকর্তার সাথে যোগসাজসে অর্থাৎ অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে এসব পলিথিন কারখানা চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ইনকিলাবকে বলেন, পলিথিন নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। সারা দেশেই পলিথিন তৈরির কারখানার সংখ্যা বেড়েছে। সরকার যদি আন্তরিকভাবে পলিথিন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে এটা বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। এ ছাড়া সম্ভব নয়। অতীতে সরকার রাজধানী থেকে পরিবেশ দূষণকারী থ্রি-হুইলার বেবিট্যাক্সি সরিয়েছে। সরকার আন্তরিকভাবে চেয়েছে বলে সেটা করতে পরেেেছ। পলিথিন বন্ধেও সরকার যদি আন্তরিকভাবে চায়, তাহলে সেটা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশে প্রতিদিন কী পরিমাণে পলিথিন উৎপাদন ও ব্যবহার হয় এবং শেষে বর্জ্য হিসেবে নালা-নর্দমা, খালবিলে জমা হয়, এ নিয়ে সরকারি কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য বা হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্বের ১৯৩টি দেশের প্লাটফর্ম আর্থ ডে নেটওয়ার্কের এক গবেষণায় পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। প্রথমে আছে- চীন, ভারত ১২তম অবস্থানে, পাকিস্তান ১৫তম ও মিয়ানমার ১৭তম অবস্থানে আছে। ‘প্লাস্টিক পলিউশন প্রিমিয়ার অ্যান্ড অ্যাকশন টুলকিট’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৭ লাখ ৯০ হাজার টন পলিথিন বর্জ্য জমা হয়। ডেনমার্কের কোপেনহেগেনভিত্তিক সংস্থা ‘দ্য ওয়ার্ল্ড কাউন্টস’ বলছে, বিশ্বে প্রতিবছর ৫ লাখ কোটি পিস পলিথিন ব্যাগ ব্যবহৃত হয়। এর মাত্র ১ শতাংশ পুনর্ব্যবহারের জন্য প্রক্রিয়াজাত করা হয়; আর সমুদ্রে ফেলা হয় ১০ শতাংশ। এসব পলিব্যাগ একশ’ বছরেও পচে না, মাটির সঙ্গে মিশে না। ওই সংস্থার গতকাল সন্ধ্যার হিসাব বলছে, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে ৭৬ হাজার ৪৭৩ কোটি পিস পলিব্যাগ উৎপাদিত হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Tipu Chowdhury ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:০১ এএম says : 0
বিরক্ত কর নিউজ এটি, পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ তাহলে কম্পানি কেন নিষিদ্ধ নয়, পলিথিন ব্যাগ/কম্পানি নিষিদ্ধ বা বন্ধ না করে পলিথিন কম্পানি যদি বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলেতো আর নিষিদ্ধ ব্যাগ বাজার সয়লাব করবেনা,,, খুচরা বাজারে হানা দিতে প্রশাসন বা সরকার উৎসাহি, কম্পানিতে হানা দিতে উৎসাহিত নয় কারণটা কি??
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন