গত ১লা ফেব্রুয়ারি মিয়ানমার সামরিক জান্তা কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশটির বেসামরিক নেত্রী অং সান সুচিকে আজ সোমবার প্রথমবারের মতো ভিডিও লিংকের মাধ্যমে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তাকে দেখে সুস্থ মনে হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
রবিবার দেশটির প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। স্টান গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করতে ব্যর্থ হয়ে একপর্যায়ে তাদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির প্রথম ক্যাথলিক কার্ডিনাল চার্লস মাউং বো টুইটারে লিখেছেন, মিয়ানমার যুদ্ধক্ষেত্রের মতো হয়ে গেছে।
১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই নিয়মিত বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। তবে গতকাল রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিক্ষোভকারীদের ওপর চূড়ান্ত রকমের সহিংস ভূমিকায় দেখা গেছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের। এদিন পুলিশের গুলিতে অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছে। অভ্যুত্থানের পর এটিই একদিনে সর্বোচ্চ প্রাণহানির ঘটনা।
এদিন বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর পুলিশ ও সেনাবাহিনী সরাসরি গুলি চালায়। রক্তাক্ত হয় মিয়ানমারের রাজপথ। এর নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরাঁসহ বিশ্বে শীর্ষ নেতারা। তারা এমন নৃশংসতাকে অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন। এরপর সোমবার সুচিকে আদালতে হাজির দেখানো হয়। তবে তাকে কোথায় রাখা হয়েছে সে বিষয়ে এখনও মুখ খোলেনি সামরিক জান্তা। তাদের দাবি নভেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে। তাদের এ দাবির প্রতি কোন প্রমাণ দিতে পারেনি। ওই নির্বাচনে সুচির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) ভূমিধস জয় পায়। তার দল পার্লামেন্টের শতকরা ৮৩ ভাগেরও বেশি আসনে বিজয়ী হয়। সেই নির্বাচনকে বানচাল করে দিয়ে এখন সেনারা নতুন নির্বাচন দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে কবে, কিভাবে সেই নির্বাচন হবে, সে বিষয়ে কোনোই সময়সীমা বা পরিকল্পনা ঘোষণা করেনি। কিন্তু জনতার দাবি নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ীদেরকেই ক্ষমতায় আসতে দিতে হবে।
এদিকে সুচিকে কোথায় রাখা হয়েছে সে বিষয়ে সামরিক জান্তা চুপ থাকলেও সোমবার রাজধানী ন্যাপিডতে স্থাপিত একটি আদালতে তাকে দেখানো হয় ভিডিও লিংকের মাধ্যমে। তার বিরুদ্ধে মূলত দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে। তা হলো, তিনি অবৈধ উপায়ে ওয়াকিটকি আমদানি করেছেন এবং মিয়ানমারের প্রাকৃতিক দুযোর্গ বিষয়ক আইন লঙ্ঘন করেছেন। এর সঙ্গে আজ আরো অভিযোগ যুক্ত হতে পারে। প্রাথমিকভাবে তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তাতে সর্বোচ্চ তিন বছরের জেল হতে পারে। নতুন যেসব অভিযোগ আনা হবে, তাতে কি শাস্তি থাকবে তা পরিষ্কার জানা যাচ্ছে না। শুনানি শেষে আগামী ১৫ই মার্চ পর্যন্ত আদালত মুলতবি ঘোষণা করা হয়। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন