নজির হোসেন নজু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে : ‘মাঘের শীতে বাঘ কাঁদে’ আর এই মাঘের কনকনে শীত, হিমেল হাওয়া ও কুয়াশার কারণে শ্রমজীবী মানুষ মিল-চাতাল ও কারখানায় যেতে পারছে না। ফলে শ্রমিকদের উপস্থিতি আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এতে অধিকাংশ মিল-চাতাল বন্ধ হয়ে গেছে এবং কল-কারখানায় উৎপাদনেও মারাত্মক ভাটা পড়েছে। সেই সঙ্গে এর প্রভাব পড়েছে কৃষি ক্ষেত্রেও। হঠাৎ করে উপার্জনের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম সংকটে পড়েছেন দিন হাজিরার শ্রমিকরা। দিন এনে দিন খাওয়া এসব শ্রমিকের পরিবারে বিরাজ করছে দুর্বিষহ অবস্থা। উত্তরের ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র সৈয়দপুর। উপজেলা শহর ও বাইরে প্রায় দেড় শতাধিক মিল-চাতাল রয়েছে। শীতের প্রকোপের কারণে মিল ও চাতাল বন্ধ থাকার প্রভাব পড়েছে চাল সংগ্রহ কার্যক্রমেও। সৈয়দপুরে ৪২৭ মেট্রিক টনের বিপরীতে চাল সংগ্রহ হয়েছে সামান্য। বিভিন্ন চাল মিল ও চাতাল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাড় কাঁপানো শীতের কারণে তাদের এমন দশা হয়েছে। প্রায় এক মাস ধরে সূর্যের মুখ ঠিকমতো দেখা যায়নি। রোদ না থাকায় ধান শুকিয়ে চাল করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। তারপরও কেউ কেউ কোনোমতে চালিয়ে নিচ্ছেন কাজ। সৈয়দপুর উপজেলার হাসকিং মিলের মালিক রেজাউল ইসলাম রেজু জানান, ২০-২৫ দিন থেকে রোদের প্রখরতা ঠিকমতো পাওয়া যায়নি। ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতের কারণে চাতাল বন্ধ রয়েছে। তার মিল ও চাতালে ৩০ জন শ্রমিক কাজ করেন। কিন্তু ধান শুকানো বন্ধ থাকায় এখন বসে সময় কাটাচ্ছেন শ্রমিকরা। সৈয়দপুরের কামারপুকুর এলাকার চাতাল শ্রমিক হাজেরা, অলিমা ও রুপজান বিবি জানান, ১৫-২০ দিন থেকে ঠিকমতো কাজ হচ্ছে না চাতালে। হাজিরা পেতেন ১০০ টাকা করে। কিন্তু চাতাল বন্ধ থাকায় চরম অভাব-অনটনে দিন কাটছে তাদের। ধারদেনা আর দোকানে বাকি রেখে সংসার চালাতে হচ্ছে। সৈয়দপুরের বিসিক শিল্পনগরীসহ বিভিন্ন স্থানে পাঁচ শতাধিক কল-কারখানা থাকলেও সেখানেও শীতের দাপটে শ্রমিকের উপস্থিতি আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। এমনও দিন যাচ্ছে হেড মিস্ত্রি বা টেশনিশিয়ান না আসার কারণে মেশিনপত্র বন্ধ থাকছে। বিসিক শিল্পনগরীর মেজর আটা-ময়দা মিল ও সেমাই এবং বস্তা কারখানার মালিক আমিনুল ইসলাম জানান, শ্রমিকরা প্রচ- ঠা-ার কারণে কাজে আসতে পারছে না। এলেও খড়কুটো জ্বালিয়ে শরীর তাপিয়ে চলে যাচ্ছেন। ফলে উৎপাদনে মারাত্মক ভাটা পড়েছে বলে জানান তিনি। একই অবস্থা হয়েছে শহরের শতাধিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গার্মেন্ট কারখানাগুলোতেও। অপরদিকে শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে আলু ক্ষেতে পচনসহ নানা রোগ দেখা দিয়েছে। বোরোর বীজতলা কোনো কোনো স্থানে লাল হয়ে মারা যাচ্ছে। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে স্প্রে করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। প্রচ- ঠা-া ও হিমেল হাওয়ার কারণে মিল-কলকারখানায় শ্রমিকদের উপস্থিতি কমেছে। ফলে উৎপাদনেও এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে বলে জানান সৈয়দপুর বণিক সমিতির সভাপতি ইদ্রিস আলী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন