মোস্তফা শফিক, কয়রা (খুলনা) থেকে
কয়রা উপজেলা পরিষদের ১৮টি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে কর্মকর্তা না থাকায় অতিরিক্ত দায়িত্ব এমনকি অফিস সহকারী দিয়ে চলছে কার্যক্রম। একাধিকবার মাসিক মিটিং-এর মাধ্যমে জেলা প্রশাসককে অবহিত করলেও দেখার কেউ নেই। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, খুলনা জেলার সর্ব দক্ষিণে কয়রা উপজেলা পরিষদ বহাল থাকলেও উপজেলা পরিষদ ছাড়া প্রশাসনিক দায়িত্বে নিয়োজিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অধীনে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, প্রকল্প কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকৌশলী ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ছাড়া বাকি ১৮টি দপ্তরের কর্মকর্তা না থাকায় ঝিমিয়ে চলছে দপ্তরগুলো। আরো জানা গেছে, প্রায় ১ যুগ হলো উপজেলা মহিলা দপ্তরটি চলছে অফিস সহকারী দিয়ে। মহিলা দপ্তরের বিরুদ্ধে প্রমাণিত একাধিক অভিযোগ থাকলেও আমলে নিচ্ছে না জেলা অধিদপ্তর। এছাড়া এই উপজেলায় নেই কোনো প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী কর্মকর্তা, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা ছাড়াও শূন্যের কোটায় আরো রয়েছে উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা, উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার পাশপাশি জনগুরুত্বপূর্ণ পদ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের আমাদী পাউবোর সেকশন কর্মকর্তাসহ উপজেলা সামাজিক বন কর্মকর্তা না থাকায় ধীরে ধীরে চলছে কয়রা উপজেলা পরিষদ প্রশাসনের দপ্তরগুলো। আরো জানা গেছে, কর্মকর্তা শূন্য দপ্তরগুলোতে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন অনেকে তাও আবার (ডেপুটেশনে)। এছাড়া একাধিক দপ্তরে অফিস সহকারীরা কর্মকর্তা পরিচয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। যেমন, মহিলা দপ্তর। বিষয়টি নিয়ে কথা হয় কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাও. আ.খ.ম. তমিজ উদ্দীনের সাথে। তিনি বলেন, শূন্য দপ্তরগুলো পূরণের জন্য একাধিকবার জেলা প্রশাসনকে জানানো হলেও তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। এব্যাপারে খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. শেখ মো. নুরুল হকের সাথে মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়রাতে কেউ আসতে চায় না এছাড়া কর্মকর্তারও যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তিনি আরো বলেন, আইলা কবলিত কয়রাতে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলো শূন্য থাকায় ব্যাপক অসুবিধা হওয়ার সত্যতা স্বীকার করে দুঃখের সাথে জানান, আমি সরকারি এমপি হয়ে কী করে মহান সংসদে এ প্রস্তাব উঠাব। এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বদিউজ্জামানের মুখোমুখি হলে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) কৃষি অফিসার, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, উপজেলা প্রকৌশলী ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ছাড়া অন্য কোনো দপ্তরে কর্মকর্তা না থাকায় সেইসব দপ্তরের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ শুনতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি প্রতিটি মাসিক মিটিংয়ের কপি জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রেরণ করছি। তারপরও কোনো পদক্ষেপ দেখছি না বলে মন্তব্য করেন। উল্লেখ্য, আইলা কবলিত কয়রাতে এ মুহূর্তে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশন কর্মকর্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ পদটিতে দক্ষ ব্যক্তি না থাকায় অদক্ষ অযোগ্য এক ব্যক্তিকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিলেও কাগজ-কলমে সীমাবদ্ধ রয়েছে। তাছাড়া সুন্দরবন অঞ্চলে মৎস্য আহরণসহ চিংড়ি ঘের বেষ্টিত এবং উৎপাদনের স্থান হলেও মৎস্য দপ্তরটি প্রায় ১ যুগ চলছে অতিরিক্ত দায়িত্বে। কর্মকর্তা ছাড়াই এ দপ্তরটি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এছাড়া কোটি কোটি টাকার হিসাব-নিকাশ সংরক্ষণের দায়িত্বে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার পদটি রয়েছে ডেপুটেশনে। বিশেষ করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী দপ্তর একটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের চাহিদা মেটাতে কর্মকর্তা খুবই জরুরি। উপজেলা সুজনের সভাপতি বলেন, ১৮টি দপ্তরের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাগণ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে ঐ দপ্তরে থাকা যোগ্য ব্যক্তির উপর দায়িত্ব দিয়ে কয়রাবাসীকে সেবা করার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন