শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

অভয়নগরে হাজারো মানুষ আশ্রয় নিয়েছে সড়কে

ঘরের মধ্যে থৈ থৈ করছে পানি

প্রকাশের সময় : ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নজরুল ইসলাম মল্লিক, অভয়নগর (যশোর) থেকে

আর মাত্র ক’দিন বাদেই ঈদুল আযহা এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা। ঈদ ও দুর্গাপূজাকে ঘিরে ভবদহ অধ্যুষিত যশোরের অভয়নগর-মনিরামপুর ও কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মানুষ সম্প্রীতির মেলবন্ধন তৈরি করে। কিন্তু এবার আর তাদের মাঝে উৎসবের আমেজ নেই। অভিশপ্ত ভবদহের পানিবন্দি হয়ে লাখ লাখ মানুষ এবার বঞ্চিত হতে চলেছে ঈদুল আজহা ও দুর্গাপূজার উৎসব থেকে। চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। পানিতে মিশে গেছে ঈদ ও পূজার আনন্দ। পানিতে নিমজ্জিত বাড়িঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মন্দির। ঘরের মধ্যে এখনও থৈ থৈ করছে পানি। টানা বর্ষণে অভয়নগরের সুন্দলী, পায়রা, প্রেমবাগ ও চলিশিয়া ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ গরু ছাগল, হাস, মুরগি নিয়ে উচু স্থানে এসে আশ্রয় নিয়েছে। পশু আর মানুষ এক সাথে বসবাস করছে। এছাড়া প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় সেগুলির শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তাছাড়া মনিরামপুর ও কেশবপুর এবং ডুমুরিয়া উপজেলার লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, আশ্রয় কেন্দ্রে এবং উঁচু রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে। দীর্ঘদিন যাবৎ মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। ভবদহের পানিবন্দি এলাকা পরিদর্শন করে হরি নদী ও ট্যাকা নদীর পলি অপসারণের সিদ্ধান্ত নেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও যশোরের জেলা প্রশাসক। সে মোতাবেক পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে আলোচনার মাধ্যমে পানি সম্পদ মন্ত্রীর দারস্থ হন তারা। একপর্যায়ে যশোর জেলা প্রশাসক ড. মো. হুমায়ুন কবিরের উদ্যোগে ও যশোর-৫ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্যের সহযোগিতা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আপদকালীন জলাবদ্ধতা নিরসনের ব্যবস্থা নেয়া হয়। এর অংশ হিসেবে ভবদহ স্লুইচ গেট সংলগ্ন নদীতে পলি অপসারণ কাজের জন্য নামানো হয় উভচর মেশিন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক মেশিনটি নামনোর পর থেকে ত্রুটি বিচ্যুতি লেগেই আছে। প্রতিদিনই প্রায়ই কোনো কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিচ্ছে মেশিনটিতে। ফলে একবার যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে ৪/৫ ঘণ্টার অধিক সময় বন্ধ থাকছে মেশিন। এমনকি গত বুধবার দুপুর থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ত্রুটির কারণে বন্ধ ছিল পলি অপসারণের কাজ। যদিও সংশ্লিষ্টরাসহ স্থানীয় জাতীয় সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য এ প্রতিবেদককে জানিয়েছিলেন নিরবচ্ছিন্নভাবে পলি অপসারণের কাজ করলেও পলি অপসারণ করতে এক থেকে দেড়মাস সময় লেগে যেতে পারে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ একটি মাত্র মেশিন দিয়ে যেভাবে ধীর গতিতে কাজ চলছে তাতে আগামী ২ মাসের মধ্যে পলি অপসারণ কাজ শেষ হবে বলে শংকায় রয়েছেন তারা। এছাড়াও এ পলি অপসারণের পর এ অঞ্চলের মানুষ সম্পূর্ণরূপে পানিবন্দির হাত থেকে মুক্তি পাবে কিনা তা নিয়েও রয়েছে শংকা। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য আরও বেশি মেশিন নামানোর দাবি জানিয়েছেন পানিবন্দি অঞ্চলের মানুষ। এদিকে পবিত্র ঈদুল আজহা ও দুর্গাপূজার আগে ভবদহের পানি সরানোর দাবিতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। পানিবন্দি মানুষের দাবি একটাই, ঈদ ও পূজার আগে পানি সরাতে হবে। এ জন্য আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরসারি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন