মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দক্ষতার অভাবে তেলের সুযোগ নিতে পারেনি বাংলাদেশ

ইআরএফ ডায়ালগে বিএসইসি চেয়ারম্যান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০২১, ৬:৪৪ পিএম | আপডেট : ৮:০৭ পিএম, ১৩ মার্চ, ২০২১

# পুঁজিবাজারে বড় পরিবর্তন আসবে

# মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বড় বিদেশি বিনিয়োগ আসবে

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, করোনার শুরুর দিকে বিশ্ববাজারে তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। সে সময় বাংলাদেশ তেল কিনে রাখলে বড় ধরনের মুনাফা করতে পারত। কম দামে তেল কেনার শক্তি ও সামর্থ্য দুটিই ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু দক্ষতার অভাবে বাংলাদেশ এই সুযোগ নিতে পারেনি। একই সঙ্গে করোনার শুরুর দিকে বিশ্ববাজারে পেট্রোলের দাম ৫ ডলারে নেমে এসেছিল। সে সময় ৫ ডলারে তেল কিনে রাখলে ৩০ ডলারে বিক্রি করা সম্ভব হতো। এই তেল কেনার শক্তি ও সামর্থ্য সবই ছিল আমাদের। কিন্তু দক্ষতার অভাবে এটা সম্ভব হয়নি। বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আগামী দুই বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে বড় পরিবর্তন আসবে। সেজন্য পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের পরিমাণ বাড়াতে হবে। যাতে করে দেশের শিল্পায়ন আরও বেশি বিকশিত হতে পারে। শিল্পায়নের জন্য আমাদের ব্যাংকের ওপর বেশি নির্ভর করে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

শনিবার (১৩ মার্চ) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম ‘ইআরএফ ডায়ালগ অন বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিএসইসি‘র চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইআরএফ মিলনায়তনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভী।

প্রফেসর ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, আমাদের বাজেটের আকার ৫ লাখ কোটি টাকা, আমাদের বাৎসরিক অর্থনীতির আকার সাড়ে ৩০০ বিলিয়ন ডলার। অথচ প্রতিবছর আমাদের মাত্র এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা আইপিও‘র মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়। এটা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। দেশের শিল্পায়ন হতে হলে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। সেজন্য আমাদের বন্ড মার্কেটের দিকে বেশি নজর দিতে হবে। আমাদের এখানে ৫-৬টা কোম্পানি আছে, যাদের বার্ষিক টার্নওভার ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এসব প্রতিষ্ঠান যাতে বন্ড ছেড়ে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে, সে জন্য আমরা বন্ডের ওপর জোর দিচ্ছি। সামনে বাংলাদেশকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে নিয়ে যেতে হলে বন্ডের বিকল্প নেই। পাশাপাশি ভালো ভালো কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে হবে। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) বিষয়ে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, আমরা দেখে, বুঝে আইপিও দেয়ার চেষ্টা করছি।

বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ভালো অর্থনীতি বলতে বোঝায় যেখানে অর্থনীতির সঠিক পারফর্ম করতে পারে, ক্যাপিটাল মার্কেট যেখানে সঠিক হতে পারে, যেখানে স্টক এক্সচেঞ্জে বন্ড ট্রেড করা যায়, কমোডিটি মার্কেট নিয়ে কাজ করা যায়, এসএমই মার্কেট নিয়ে কাজ করা যায়। সেই ইকোনমিকে আমরা হেলদি ইকোনোমি বা ম্যাচিওরড বলতে পারি। আমরা সত্যিকার অর্থে ওই অবস্থানে এখনো যেতে পারেনি, তবে আমরা ওই পথেই এগোচ্ছি। আমরা আশা করি আগামী দুই বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে অনেক বড় পরিবর্তন দেখতে পাবেন। তখনই আমরা ‘শ্যালো ক্যাপিটাল মার্কেট’ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো। পৃথিবীতে যত বড় বড় ফাইন্যান্সিয়াল হাব বা বাণিজ্যিক কেন্দ্র রয়েছে আমরা সেখানে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে আমরা দুবাইয়ে গিয়েছি। সেখান থেকে ভালো রেসপন্স পেয়েছি।

প্রফেসর ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, আমরা মিউচ্যুয়াল ফান্ড নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি এখানে বড় ধরনের বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। এই কোয়ার্টার এবং সামনের কোয়ার্টারে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো ভালো করছে। ফান্ডগুলো ডিভিডেন্ড দিতে শুরু করেছে। আমরা আশা করছি বিনিয়োগকারীরা ডিভিডেন্ড পেলে তাদের বিশ্বাস এবং আস্থা আসবে। এতে করে এই সেক্টর ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করছি। একই সঙ্গে সামনের দিনে সুকুকসহ অন্যান্য যেসব বন্ড বাজারে আসবে, সেখানে দেখবেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অনেক পার্টিসিপেশন থাকবে।

পুঁজিবাজার সম্পর্কে তিনি বলেন, কমিশনের দায়িত্ব নেয়ার পর আমি দেখলাম পুঁজিবাজারের যে চরিত্র, তার বেশকিছু এখানে অনুপস্থিত। ব্যাংক দীর্ঘ মেয়াদের অর্থায়ন করছে। অথচ দীর্ঘ মেয়াদের অর্থের যোগান দেয়ার কথা পুঁজিবাজারের। এখানে ব্যাংককে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ দিতে বললে ব্যাংকের প্রতি অন্যায় হবে। পুঁজিবাজার যাতে দীর্ঘমেয়াদী অর্থের উৎস হয়, সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। একই সঙ্গে যখন বিএসইসির দায়িত্ব নেই, তখন বাজার মূলধন ছিলো সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা। গত নয় মাসে তা অনেকটাই বেড়েছে। বর্তমানে তা বেড়ে ৫ লাখ কোটি টাকার আশেপাশে অবস্থান করছে। তবে প্রতিদিনই শেয়ার মার্কেটে বাড়বে কিংবা কমবে এটা হতে পারে না। বাজার ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে একটা ভালো অবস্থানে চলে যাবে বলে আমরা আশা করছি।

ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হচ্ছে না কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও তালিকা বর্হিভূত কোম্পানির করের ব্যবধান মাত্র সাড়ে সাত শতাংশ। এই ব্যবধান কমপক্ষে ১৫ শতাংশ হতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে আগামীতে এই দুই খাতে করের ব্যবধান ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাবনা দিয়েছে বিএসইসি। তা না হলে ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহী হবে না।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুঁজিবাজার এখন অনেক বেশি আধুনিকায়ন হয়েছে। ফলে এখন আর আগের মতো কারসাজির সুযোগ নেই। তাই ১৯৯৬ কিংবা ২০১০ সালের মতো বাজারে বড় পতন হবে বলে মনে করি না।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রফেসর ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে ব্যাংকের রিজার্ভ আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। তবে এই বিপুল পরিমাণ রিজার্ভ বাড়িয়ে লাভ নেই বরং রিজার্ভের টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। কারণ ছয় মাসের বেশি আমদানি ব্যয়ের অর্থ রিজার্ভে রাখা অর্থনীতির জন্য ভালো দিক না। তাই এই টাকা বিনিয়োগের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে বলেও জানান তিনি।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য লভ্যাংশের সীমা বেঁধে দেয়া সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, একেক ব্যাংকের অবস্থা একেক রকম। সুতরাং আমরা মনে করি ব্যাংকের লভ্যাংশের বিষয় বেঁধে দেয়া ঠিক হবে না। এখানে অনেক ব্যারিয়ার আছে। এটা নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করে ঠিক করবো। তবে এখানে শেয়ারহোল্ডার ও এজিএম’র একটা বড় ভূমিকা আছে, সেটাকে কোনোভাবেই উপেক্ষা করা উচিত হবে না। একই সঙ্গে প্রফেসর ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, প্রত্যেকটি রেগুলেটরের নিজস্ব কিছু দায়-দায়িত্ব আছে। সে দায়িত্ব অনুযায়ী তাদের কাজ করতে হয়। আমাদেরও কিছু দায়-দায়িত্ব আছে। যার মধ্য থেকে আমাদের কাজ করতে হয়। যেমন কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হবে, কিভাবে লভ্যাংশ দেবে, কিভাবে এজিএম করবে, এসব বিষয় দেখভাল করা আমাদের দায়িত্ব। সম্প্রতি আমরা খেয়াল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের সঙ্গে কন্সার্ন না করেই কিছু কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। এ বিষয়ে আমরা দেশের সর্বোচ্চ মহলের সঙ্গে কথা বলেছি। তার নির্দেশেই আমি গভর্নর-এর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। সে প্রেক্ষিতেই বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি হাইপ্রোফাইল টিম বিএসইসিতে আগামী ১৫ই মার্চ দেখা করতে আসবে। সেই বৈঠকে আমরা এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। যাতে আমরা ভবিষ্যতে এসব বিষয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারি সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। যাতে কোন রেগুলেটরি সিদ্ধান্ত কারো অসুবিধার কারণ না হয়ে দাঁড়ায় বলে উল্লেখ করেন প্রফেসর ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

জাঙ্ক কোম্পানি সংস্কার নিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ম্যানেজমেন্ট সমস্যা অথবা মালিকের অসৎ উদ্দেশ্যের কারণে কোম্পানি ধ্বংস হয়। এজন্য আমরা প্রথমে বোর্ড পুনর্গঠন করে কোম্পানি ঠিক করার উদ্যোগ নিচ্ছি। তাতে কাজ না হলে এক্সিটের (পুঁজিবাজার থেকে বের হয়ে যাওয়া) ব্যবস্থা আছে। এ ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ কোম্পানির যথেষ্ট সম্পদ আছে।

ইনসাইডার ট্রেডিং সম্পর্কে প্রফেসর ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, কেউ যদি ইনসাইডার ট্রেডিং করার চেষ্টা করছে সঙ্গে সঙ্গে সফটওয়্যারে ধরা পড়ে যাচ্ছে। তাদের ডেকে সর্তক করা হচ্ছে, অনেক সময় বিও একাউন্ট বন্ধ করা হচ্ছে, একই সঙ্গে জরিমানাও করছি। তবে এগুলো ভেতরে ভেতরে করছি। যাতে করে কোনোভাবেই প্যানিক সৃষ্টি না হয়। এটি একটি সংবেদনশীল মার্কেট। আমাদের জবাবদিহিতার কোনো ঘাটতি নেই। তবে আমরা আশা করবো কোনো কিছু আমদের সঙ্গে যাচাই-বাছাই না করে কোনো নিউজ না করার অনুরোধ করেন করেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন