আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে অবণ্টিত লভ্যাংশের হিসাব স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে স্থানান্তর না করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে অবণ্টিত লভ্যাংশের হিসাব দিতে না পারলে, ফান্ড কোথায় রয়েছে বলতে না পারলে এবং স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে তা স্থানান্তর না করলে, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবণ্টিত লভ্যাংশের পরিমাণের থেকেও কয়েকগুণ বেশি জরিমানা আদায় করা হবে।
গতকাল মঙ্গলবার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী উদযাপন ও শেয়ারহোল্ডারদের দাবি মিমাংসা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ)। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএসইসির কমিশনার প্রফেসর ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ ও বিএপিএলসির সাবেক সভাপতি আজম জে চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও সিএমএসএফের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক শ্যামল দত্ত ও প্রতিষ্ঠানের সিইও মনোয়ার হোসেন।
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) আসার পর থেকে জমা হওয়া অবণ্টিত লভ্যাংশ কোথায় রাখা হয়েছে বা কোথায় ব্যবহার করা হয়েছে, নাকি কেউ নিয়ে গেছে, তা খুজে বের করা হবে। এই অর্থ খুঁজে বের করতে আন্তর্জাতিক মানের নিরীক্ষক দিয়ে নিরীক্ষা করা হবে। এর মাধ্যমে ওই টাকা কোথায় গেছে, তা খুজে বের করবো। যে টাকা নিজের না, তা আপনারা (কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট) নিলেন কেনো? অন্যের টাকা নিয়ে নিজের বিল্ডিং-বাড়ি বানানোর অধিকার কেউ দেয়নি।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বিনিয়োগকারীদের দাবি মেটানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিনিয়োগকারীরা হয়তো অনেক বছর জানতেন না তাদের পাওনা টাকার বিষয়ে। আজকে পাওয়ার মাধ্যমে তাদের মধ্যে শেয়ারবাজার নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব আসবে। এই বাজারে বিনিয়োগ করলে যে রিটার্ন পাওয়া যায়, তা আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে বাহিরে ম্যাসেজ চলে যাবে। এছাড়াও তাদের পাওনা আদায় করে দেওয়ার জন্য যে রেগুলেটর আছে, সেটা তাদের মধ্যে আস্থার তৈরি করবে।
তিনি বলেন, কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগকারীদের হাজার হাজার কোটি টাকার লভ্যাংশ জমে থাকার বিষয়টি যখন আমরা তুলে নিয়ে আসলাম, তখন কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ওই লভ্যাংশের পাওনাদার বিনিয়োগকারীদের খুঁজে পাচ্ছে। ঠিক আছে পাক। আমাদের উদ্যোগের ফলে যদি বিনিয়োগকারীরা তাদের পাওনা ফেরত পায়, সেটাও ভালো। তবে এখনও কিছু কোম্পানি থেকে অবণ্টিত লভ্যাংশের হিসাব নেই বলে কমিশনে চিঠি পাঠিয়েছে। ৩১ মার্চের পরে কমিশন কঠোর হবে। এখনও জরিমানা করা শুরু করিনি, তবে শিগগিরই কমিশন পদক্ষেপ নেবে। আমরা অনেক সময় দিয়েছে এবং অপেক্ষা করেছি। চলতি মাসের পরে আর সময় দেওয়া হবে না।
গত সপ্তাহে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রবণতার কারণ হিসেবে শিবলী রুবাইয়াত বলেন, যুদ্ধ বা যেকোন কারণ হোক, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এমন পরিস্থিতি হয়েছে। তবে আমরা স্ট্র্যাটেজিক ও ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে সেই সংকট কাটিয়ে উঠেছি। এক্ষেত্রে স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রেখেছে। আমরা যে উদ্দেশ্যে এই ফান্ড গঠন করেছিলাম, সেটা সত্যিই কাজে লেগেছে।
বিনিয়োগকারীদের পাশে সরকার থেকে শুরু করে সবাই আছে বলে জানান বিএসইসির চেয়ারম্যান। শেয়ারবাজার থেকে এক্সিট পলিসি সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রায় ২০টি কোম্পানি এখন শেয়ারবাজার থেকে বেরিয়ে যেতে চায়। ওইসব কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের অর্থ বুঝিয়ে দেবে। কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিনিয়োগকারীদের অর্থ ২০-৩০ বছর ধরে আটকে আছে। তবে বর্তমানে বের হয়ে যাওয়া ও বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। এটি সহজ করার জন্য সিএমএসএফকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। এখান থেকে বিনিয়োগকারীরা তাদের অর্থ ফেরত পাবে। এভাবে শেয়ারবাজার থেকে বেরিয়ে যেতে চাওয়া কোম্পানিগুলোর ফান্ড সিএমএসএফে নিয়ে আসার চিন্তাভাবনা করছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন