পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক বিপর্যয়কে ব্যবহার করে ভয় দেখিয়ে বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা নিজেরাই শ্রীলঙ্কাকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিলাম। যে সাহায্য দিল, সেই নাকি ওর মতো হয়ে যাচ্ছে। এটা হয় নাকি?
রোববার (২৯ মে) বিএসইসির মাল্টিপারপাস হলরুমে বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটস (বিএএসএম) আয়োজিত ‘বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ’ শীর্ষক লেকচার সেশনে তিনি এ কথা বলেন। বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, অনেকে অর্থনীতি বুঝেও না বোঝার মতো কথা বলেন। তখনই বিষয়টি হয়ে যায় ক্ষতিকর। আমাদের ৫ বছর আগের তুলনায় রেমিট্যান্স এখন কত এবং প্রবৃদ্ধি কত?
করোনার সময়ও রেমিট্যান্স বেড়েছে। আরও মজার বিষয় হচ্ছে, গত ১০ মাসে ৮ লাখ শ্রমিক বিদেশ গেছে। যার সুবিধা আমরা এখনও পাইনি। সামনে তারাও রেমিট্যান্স পাঠাবে। এতে করে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে। তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কা ২ বিলিয়ন ডলারের সমস্যায় পড়েছে। আর আমরা মাসে শুধু একটা খাত থেকেই ২ বিলিয়ন ডলার পাই। কিন্তু একটি শ্রেণি কোনোটার সঙ্গে কোনোটার তুলনা করে ভয় দেখিয়ে দেশকে অস্থির করে তুলেছে। এটা আমার বোধগম্য না। বাংলাদেশকে নিয়ে আমাদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। শুধু স্বপ্ন দেখার অনেক কারণ আছে। রফতানি বৃদ্ধির কারণে স্বাভাবিকভাবেই আমদানি বেড়েছে বলে জানান বিএসইসি চেয়ারম্যান। বলেন, আমাদেরকে পণ্য রফতানির জন্য কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। যে কারণে আমদানিও বেড়েছে। অতএব এক্সপোর্ট বাড়লে ইমপোর্ট বাড়বেই। সেশনে লেকচার দেন পিকেএসএফের চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ, বিএএসএমের মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী এবং বিএসইসির কমিশনার শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ।
প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, যে অর্থনীতির দেশে (বাংলাদেশ) বছরে ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হয়, সেখানে কেন যে মানুষ ভয় পায়, তা আমি বুঝি না। আমরা রফতানির অর্থ বাদই দিলাম, বছরে ২২-২৪ বিলিয়ন ডলার তো পাই। এখান থেকে ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধে দিতে পারব না? তিনি বলেন, ধরলাম ৪-৫ বিলিয়ন ডলারই ঋণ পরিশোধে যাবে, তাতে কী আসবে যাবে আমাদের। বরং আমরা যদি হুন্ডি ব্যবসায়ীদের ধরে ফেলতে পারি, তাহলে ৫-১০ বিলিয়ন ডলার বেঁচে যাবে। কারণ এরাই আমদানি-রফতানির সময় ওভার ইনভয়েস-আন্ডার ইনভয়েস এলসি খুলে বিদেশে টাকা পাচার করে।
এদিকে ইউক্রেনে আক্রমণ করায় রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় সারা বিশ্ব ভুগছে, কিন্তু রাশিয়ার লাভ হচ্ছে বলে মনে করেন শিবলী-রুবাইয়াত। তিনি বলেন, এমন একটা দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো, সেই দেশের কোনো কষ্ট হচ্ছে না। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। গম, জব, ভুট্টাজাতীয় পণ্যের যারা অধিকাংশ রফতানিকারক, তাদের খাদ্যের ওপর যদি আপনি নিষেধাজ্ঞা দেন, তাহলে ওইসব দেশের কি অসুবিধা হবে? বরং ওরা আরও বেশি করে খাবে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সারা বিশ্বের সাপ্লাইচেইন নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এতে করে যেসব দেশে ওইসব পণ্যের সংকট, ওইসব দেশ ভোগান্তিতে পড়বে।
নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়া এবং রাশিয়ার রফতানি অব্যাহত থাকায় দেশটি আরও লাভবান হয়েছে বলেও মনে করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, যে দেশ বিশ্বের বৃহৎ গ্যাস ও তেল রফতানিকারক, তাদের ওপর যদি নিষেধাজ্ঞা দেন, তাহলে তাদের কী হবে? বরং ওরা এখন মাসে ২০ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত আয় করছে। যেহেতু বিশ্বে তেলের দাম বেড়ে গেছে। সে কারণে তারা যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছে। অতএব আপনি যখন কাউকে শাস্তি দিতে চাইবেন, সেটা যদি শাস্তিদায়ক না হয়ে আরামদায়ক হয় এবং বিশ্ববাসীর জন্য ক্ষতিকর হয়, তাহলে সেটা কী ধরনের নিষেধাজ্ঞা?
বিএসইসি কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ হচ্ছে এখন লেস দ্যান ২ মিলিয়ন ডলার, পাকিস্তানের হচ্ছে ১০ বিলিয়ন ডলার আর বাংলাদেশের হচ্ছে ৪২ বিলিয়ন ডলার। আমরা কীভাবে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রের সঙ্গে নিজেদের কল্পনা করি? এই মনমানসিকতাকেই আমাদের বেঁধে রাখতে হবে। যদি আমরা সেখান থেকে না বেরিয়ে আসি, আমাদের যোগ্যতার প্রতি যদি আমাদের আস্থা না থাকে, তাহলে আমাদের কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে। করোনা বা যুদ্ধসহ বিভিন্ন ক্ষতি থেকে দেশকে কিছুটা হলেও পুঁজিবাজার স্বস্তি দিতে পারে বলেও মন্তব্য করেন শেখ শামসুদ্দিন। বলেন, দেশের অর্থনীতিতে ক্যাপিটাল মার্কেট ভূমিকা রাখতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন