উখিয়ার বালুখালীতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) সন্ধ্যা পর্যন্ত ১১ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ১৫৫ জন আহত হয়েছেন বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ১০ হাজারের মতো ঘর।
প্রাথমিক হিসেব মতে এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৪৫ হাজার পরিবারে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দেড়শ’ শিশুসহ অন্তত ৪০০ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের সময় হারিয়ে যাওয়া শিশুদের সন্ধানে বালুখালী শিবিরে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের পক্ষ থেকে একটি বুথ বসানো হয়েছে। এ বুথের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মোঃ সোহেল রানা বলেন, তারা গতকাল মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত দেড়শ শিশু নিখোঁজ থাকার খবর সংশ্লিষ্ট পরিবারের পক্ষ থেকে পেয়েছেন।
এরমধ্যে তিন শিশুকে খুঁজে বের করে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তিনি বলেন, মূলত তারা ১০ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের সন্ধানে কাজ করছেন। এতে তদের শতাধিক কর্মী এই কাজ করে যাচ্ছেন।
এ ঘটনায় ৪০০ জনের মতো নিখোঁজ রয়েছেন উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সমন্বয়কারী ইন্টার সার্ভিস কো-অর্ডিনেশন গ্রুপের (আইএসসিজি) যোগাযোগ ও গণসংযোগ কর্মকর্তা সাইয়েদ মো. তাফহীম বলেন, গতকাল পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডে ১১ জনের প্রাণহানির খবর প্রাথমিকভাবে পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় সাড়ে পাঁচশ’ মানুষ আহত হয়েছেন। প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিবারের ৪৫ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। পাশাপাশি হাসপাতাল, বিতরণ কেন্দ্র, শিখন কেন্দ্র, মহিলাবান্ধব পরিষেবাসহ প্রয়োজনীয় সুবিধাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উখিয়ার বালুখালী ৯ নম্বর ক্যাম্পের এফ-১ ব্লকের ১৩৬ ঘরে ৭৭৯ জন মানুষের বসতি জানিয়ে সোমবার বিকালে রোহিঙ্গা নেতা সুলতান আহমদ বলেন, ‘বাংলাদেশে আশ্রিত হওয়ার পর থেকে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি। এখন পর্যন্ত তার ব্লকের ৪০ জন শিশু নিখোঁজ রয়েছে।
উদ্ধার হওয়া মৃতদেহগুলো দাফন করা হয়েছে। উখিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গাজী সালাহ উদ্দিন বলেন, আগুনের পেছনে কারও কোনও ষড়যন্ত্র ছিল কিনা, সেটিও মাথায় রেখে গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সন্দেহজনক ৮ জনকে ধরে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে তাদের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত তেমন কোনও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়নি।
ঘটনার পর গতকাল দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা মন্ত্রনালয়ের সচিব মোঃ মোহসীন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) শাহ্ রেজওয়ান হায়াতের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনসহ একটি দল অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া বালুখালীর চারটি ক্যাম্প ঘুরে দেখেন। এর আগে সকালে শরণার্থী শিবিরে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্রে করে যাতে দুষ্কৃতকারীরা কোনও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার সুযোগ না পায়, সেজন্য শিবির পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি এম আনোয়ার হোসেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন